সাখাওয়াত উল্যাহ
সকল প্রশংসা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার জন্য। তিনি আমাদেরকে সময়-সম্পদে কাজকর্ম করার অবকাশ দিয়েছেন। বিশেষ করে এই দুর্যোগে, ফেতনা, ফ্যাসাদের দুনিয়ায়। যেখানে মহৎ ও বৃহৎ প্রাণের মানুষ হ্রাস পাচ্ছে। সৎ ও সুউচ্চ গুণাবলি লোপ পাচ্ছে। মানুষ প্রবৃত্তি-পূজায় ডুবে আছে। ভালো-খারাপ জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছে। সত্য-মিথ্যা মিশে একাকার হয়ে আছে। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতিবর্ষে দুটি মর্যাদাবান মাস দ্বারা ধন্য করেছেন। রমজান মাসের পূর্বে (১) রজব ও (২) শাবান।
মুসলমানদের উচিত আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া জানানো এবং এই মহান অনুগ্রহের মাসদ্বয় থেকে পুণ্য কাজ দ্বারা কল্যাণ সঞ্চয় করা।
শাবান মাসের আগমন-যার বিষয়ে অত্যধিক গুরুত্ব¡ দিয়েছেন আমাদের পূর্বসূরি পুণ্যাত্মাগণ। তারা শাবানের ফজিলত বর্ণনা করেছেন এবং শাবানকে বিপুল সুযোগ ও বিশালমর্যাদাপূর্ণ মাস হিসেবে গণ্য করেছেন। তাই তারা শাবানে রমজানের প্রস্তুতি নিতে প্রয়াস পেতেন। শাবানের বেশিরভাগ সময় রমজানের মতো রোজা, কুরআন তেলাওয়াত, সদকা, দাওয়াত, তাবলিগ এবং ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধকরণে ব্যয় করতেন। আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে ইবাদত ও আনুগত্যে ডুবে থাকতেন। যাতে করে রমজান মোবারককে সাধুসম্ভাষণ করা যায়। এবং আল্লাহর আনুগত্যে ও দাসতে হৃদয়-মন প্রফুল্ল থাকে। হযরত নবী করিম (সা.) এ মাসের গুরুত্ব¡ বুঝিয়েছেন অত্যন্ত মর্যাদা-সমেত। হযরত উসামা বিন জায়েদ (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনাকে আমি অন্যান্য মাসে শাবানের মতো রোজা রাখতে দেখি নি। হযরত সা. বলেন, এটা এমন এক মাস, যা মানুষ অবহেলায় গুরুত্ব¡ অনুধাবন করে না। রমজান ও রজবের মাঝে যার অবস্থান, আল্লাহর কাছে যে মাসের পুণ্যকর্মের মর্যাদা অত্যন্তউঁচু । আমি পছন্দ করি, আমার কর্ম মহিয়ান করি শাবান মাসের রোজা দ্বারা। নাসায়ি শরিফ- ২৩৫৭]
পবিত্র শাবান মাস ও শাবানের বুকে ধারণকৃত বরকতময় রজনী শবেবরাতের ফজিলত ও গুরুত্বের কথা বিঘোষিত হয়েছে হাদিসে নববির অসংখ্য স্থানে। আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তো বলেই ফেলেছেন, শাবান আমার মাস আর রমজান আল্লাহর মাস। রাসুল (সা.) এ মাসে প্রায়ই রোজা রাখতেন। হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) সে যুগের মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে বলেন, তখন শাবান মাসের আগমন ঘটলে মুসলমানরা বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করত এবং বিত্তশালীরা তাদের মালামালের জাকাত-সাদকা বিতরণ করতে থাকত ফকির মিসকিনদের কাছে যাতে অভাবগ্রস্ত পরিবারগুলো একটু স্বস্তি ও শক্তি সঞ্চয় করে ভালোভাবে অতিবাহিত করতে পারে রমজানের রোজাগুলো। আজকে আমাদের সমাজে সে ঐতিহ্যমন্ডিত চিত্রটি বিরাজ করলে কত না সুন্দর হতো!
শাবান মাস আল্লাহর রহমত ও রেজামন্দি হাসিলের এক সোনালি সুযোগ নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত। পাপি-তাপিসহ সব উম্মতে মুসলিমা এ মহিমান্বিত মাসের সদ্ব্যবহার করে নিজের ইহপরকালীন জীবনকে সৌভাগ্যমন্ডিত করে নিতে পারি। তবে এ ক্ষেত্রে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো খুলুসিয়াত ও সমর্পিত মন নিয়ে আল্লাহর রেজামন্দি তালাশ করা। দেহমন উজাড় করা, প্রেম ভালোবাসা নিয়ে প্রভুর ইবাদত-বন্দেগিতে ডুবে থাকা। এ সময় কুরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ, রোজা ও নফল নামাজ আদায় করা আর যথাসাধ্য দান-খয়রাত করা অত্যন্তপুণ্যের কাজ।
রাসুল (সা.) অসংখ্য হাদিসসমূহ থেকে আমরা শাবান মাসের করণীয় সম্পর্কে যা শিক্ষা পাই তা হচ্ছে:
১. শাবান মাসের তারিখসমূহের হিসাব রাখা, যাতে মাসের শেষদিকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার দরূণ চাঁদ দৃষ্টিগোচর না হলে কোন গোলযোগের মধ্য পড়তে না হয়।
২. রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক পরিমাণে ইবাদত বন্দেগির অভ্যাস গড়ে তোলা। তাছাড়া মন-মস্তিষ্ক ও আচরণ পরিশুদ্ধ করার জন্য সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন। তাহলে পূত:পবিত্র দেহ-মন নিয়ে রমজানুল মুবারকের করণীয়সমূহ পালন করা যাবে। ফলে পবিত্র মাসের বরকত, রহমত ও মাগফেরাত লাভের যোগ্যতা অর্জিত হবে।
৩. একই সাথে শারীরিক সুস্থতার প্রতি নজর দেওয়াও শাবানের অন্যতম কর্তব্য। কেননা, শরীর সুস্থ না থাকলে ইবাদত পালনে উদ্যম আসে না। যেহেতু দীর্ঘ একমাস কৃচ্ছসাধন করতে হবে, সেজন্য পূর্ব থেকে যাতে দুর্বলতায় পেয়ে না বসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৪. শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত অত্যন্তফজিলতের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু কয়েক শ্রেণির মানুষ এ রাতে আল্লাহর ক্ষমার আওতায় পড়বে না। যথা- মুশরিক, মদ্যপ, মাতাপিতার অবাধ্য, মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষী, চাঁদাবাজ প্রভৃতি। অতএব, এসব কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। তাহলেই শাবান মাসের করণীয় পালন করা হবে এবং শবে বরাতের কল্যাণ ও রহমত অর্জন করা যাবে।
মধ্য শাবানের পর রমজান মাসের আগমনের আর বেশি সময় থাকে না। মাত্র ১৪-১৫ দিন। শবেবরাতে আল্লাহ মহানের কাছে পবিত্র জীবন কামনার সাথে সাথে আসন্ন রমজানে সুস্থ দেহ মন ও সুন্দর পরিবেশের জন্য দোয়া করা দরকার। এ সময় ইবাদত ও তিলাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। চাকরি-বাকরিতে সততা, ব্যবসা-বাণিজ্যে হালাল পথ অনুসরণ করতে হবে। সহায়তা করতে হবে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার কাজে। মসজিদ-মক্তবগুলো আবাদ করতে হবে রোজাদার মুসল্লিদের সুবিধার্থে। তাহলেই কেবল পুণ্যময় মাসগুলোর (রজব, শাবান ও রমজানের) ক্রমাগমন আমাদের জীবনে সফলতা বয়ে আনবে।
কোন প্রকারের উৎসব, আতশবাজি কিংবা হৈ-হুল্লোড় করে অযথা সময় নষ্ট না করে এবং গুণাহের এই সব কাজ না করে আমাদের সকলের উচিৎ হলো এই রাতে দোয়া-দুরুদ আর নফল ইবাদত-বন্দেগি করে রাত পার করা এবং নফল রোযা রাখা, আত্মীয় বন্ধু এবং বিশেষ করে মা-বাবাকে খুশি করা, যাতে আল্লাহ পাক এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুশি করা। মনে রাখবেন সকল দোয়ার আগে-পিছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরুদ পড়ে দোয়া শুরু এবং শেষ করবেন, তাতে দোয়া সরাসরি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। আজকের রাতের সকল ফায়দা ও ফজিলত হাসিলের তাওফিক যেন আল্লাহ পাক আপনাকে আমাকে সকলকে দান করেন, আমিন। সংগ্রহে: সহ-সম্পাদক, দৈনিক পত্রদূত
Check Also
বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন
দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …