ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়েই নুসরাত জাহান রাফি হত্যা হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র রুহুল কবির রিজভী। আজ রোববার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সকালে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মানববন্ধনে এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজকে কবিরহাটের একজন নির্যাতিত নারীর খবর শুনতে না শুনতেই ঘটে গেলো সূবর্ণচরে। কী পৈশাচিক? তারা কারা? তারা ক্ষমতাসীন দলের লোক। কবিরহাটে কারা? তারা ক্ষমতাসীন দলের লোক। তারপরে আসলো ফেনীতে নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসায় পড়েন। ওই শ্লীলনতাহানির সাথে জড়িত ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তিনি আবার ক্ষমতাসীন দলের সাথে সস্পর্কযুক্ত। ঘটনার পর তাকে (অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দ্দৌলা) গ্রেফতার করা হয়েছে। কত বড় তার সাহস? জেলখানা থেকে সে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের বলে দিলেন ওকে (নুসরাত জাহান রাফি) পুড়িয়ে মারতে হবে। দুই দিনের মাথায় নিম্পাপ ছাত্রীর গোটা শরীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে গেল। এই বাংলাদেশে আমরা বাস করি, এই বাংলাদেশের আমরা বেঁচে আছি- আমাদের সামনে আমাদের ছোট বোনরা, আমাদের সন্তানরা আজকে ক্ষমতাসীনদের তান্ডবের কাছে, বিভীষিকার কাছে, পৈশাচিকের কাছে তাদের দেহ ছাই হয়ে গেছে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়। পরে নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ ছবি হাতে মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা বিচার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে যা কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরা পর্যন্ত যায়।
সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি নুরজাহান ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সস্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের নেওয়াজ হালিমা আরলি, শাম্মী আখতার, ইয়াসমীন আরা হক, পেয়ারা মোস্তফা, আমেনা খাতুন, মমতাজ বেগম, শামসুন্নাহার বেগম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
রিজভী ক্ষোভ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, তারপরও আমরা উৎসব করবো, তারপরেও আমরা ইলিশ মাছ খাবো, তারপরও আমরা নতুন কাপড় মারবো? এটা আমরা করতে পারি না। শত শত নারী-শিশু নির্যাতিত আছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে। সরকার একটা গ্রেপ্তার দেখিয়ে আরেকজনকে রক্ষার চেষ্টা করছে। যারা রক্ষক প্রশাসন তারাও সরকারের কথা শুনে। আজকে এমন পরিস্থিতি করেছে যে, কারো কোনো বাঁচার কোনো উপায় নেই। সেই দিন প্রথমে ওই অধ্যক্ষ কর্তৃক যে অন্যায় করেছিলো পুলিশ যদি পদক্ষেপ নিতো তাহলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব নেতারা নুসরাতকে আগুনে পুড়ে ফেলতে পারত না।
নুসরাত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
স্থানীয় পুলিশের ভুমিকার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সেই সোনাগাজী থানা পুলিশের ওসিও আইনের পদক্ষেপ নিলেন না। বরং নুসরাতের সাথে মিস বিহেব করলেন। তার ভিডিও ছবি তুলে সেটি ভাইরাল করে দিলেন। এটি কি হতে পারে? এটা হতে পারে না। আমরা এমন একটি অবস্থায় বসবসা করছি যেখানে কারো নিরাপত্তা নেই। আজকে আপনার সন্তান স্কুলে যাবে সে ফিরে আসবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে না জীবন্ত আসবে তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। কেনো নেই? এই সরকারের কারনে। যে সরকার মধ্য রাতে নির্বাচন করে, যে সরকারের কথা নির্বাচন কমিশন চলে, যে সরকারের কথায় পুলিশ প্রশাসন চলে সেই সরকার আইনের সরকার নয়। তার প্রশাসনও আইনের প্রতিপালন করবে না।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদীর প্রতীক দেশনেত্রী আজ কারাগারে। আমাদের আশা ছিলো দেশনেত্রীকে নিয়ে পহেলা বৈশাখ করবো। আমরা পারিনি।দেশে শান্তি ফিরে আসবে, আমরা সেটা পারিনি। কী করে নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর আমরা উৎসব দেখতে পারি। সেই নির্যাতিত নারী চেহারা দেখে আমরা উৎসব করতে পারছি না। পহেলা বৈশাখের শ্বাশত উৎসব, এটা আমাদের ঐতিহ্য, এটা আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতিতে যে সহাবস্থান সেটা হরণ করেছেন শেখ হাসিনা। আমাদের উসবের প্রাঙ্গনে শান্তি নেই, আছে শুধু ভয় আর আতঙ্ক। এটা আর চলতে পারে না।