ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: সাম্প্রতিক সময়ে জেলা জুড়ে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিলো ‘সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ইস্যু’। দুই প্রান্ত থেকে দুই পক্ষই করেছেন আকার ইঙ্গিতে বাগযুদ্ধ। তবে এবার সেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে ভাটা পড়েছে, গলেছে বরফ। এক টেবিলে খেতে বসেছেন আলোচিত এ দুইজন।
আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ২টায় জেলা পুলিশ সুপারের বাসভবনে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
এরপর তিনি কিছুক্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সাথে কুশল বিনিময় করেছেন। দুপুর সোয়া ২টার দিকে এক টেবিলে বসেই খাবার খান পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও সাংসদ শামীম ওসমান। এ সময় শামীম ওসমানের পাশেই উপস্থিত ছিলেন পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সকাল থেকেই পুলিশ সুপারের বাস ভবনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হচ্ছিলো। এছাড়া পান্তা ইলিশেরও আয়োজন ছিলো সেখানে। এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি জরুরী কর্মী সভায় সাংসদ শামীম ওসমানসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে ইঙ্গিত করে নানা বক্তব্য রেখেছিলেন। এর আগে পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদও ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘যত প্রভাবশালী হক, ছাড় দেয়া হবে না।’
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ্ নিজামের বিরুদ্ধে জিডি ও শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু জড়িয়ে নানা অভিযোগে উত্তপ্ত ছিলো নগরী। তবে বর্ষবরণের প্রথম দিনেই এ দৃশ্য নগরবাসীর মাঝে শান্তির বার্তা ছড়াচ্ছে। সকলের প্রত্যাশা সুন্দর ও শান্তিময় আগামীর।
আরো পড়ুন : এসপি হারুনের সাথে মন্ত্রীর ঝগড়া
নারায়ণগঞ্জ সংবাদাদাতা, ১০ মার্চ ২০১৯, ২০:২৭
নারায়ণগঞ্জের নৌপথে চাঁদাবাজি ঠেকাতে এক মন্ত্রীর সাথে ঝগড়া করতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, নৌপথে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা তোলা হচ্ছে। এক মন্ত্রী ফোন করে বলেছেন, তার লোকজন এখানে করে খায়। আমি পাল্টা প্রশ্ন করি কেন আপনার নাম ব্যবহার করে কেন এ চাঁদার টাকাটা তোলা হচ্ছে? আপনার লোকজনকে কি চাঁদাবাজি করে খেতে দেবো নাকি?
এতে আপনি আমার প্রতি মনক্ষুন্ন হলেও আমার কিছু হবে না। কাগজপত্র ব্যতিরেকে নৌপথে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার এসব চাঁদাবাজি হচ্ছিল। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বেড়েই চলছিলো। নৌপরিবহন মন্ত্রীর সাথেও এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। অবশেষে সেই চাঁদাবাজি বন্ধ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
গতকাল রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া।
পুলিশ সুপার বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে কেউ সংসদ নির্বাচন করে যাবেন সেটি ভুলে যান। এ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো প্রকার অরাজকতা, কারচুপি হতে দেয়া হবে না। জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এরজন্য আমাদের যা যা করণীয় আমরা তা করবো। নির্বাচনের সময় এমপি, মন্ত্রীদেও নিজ এলাকায় অবস্থান করবেননা সেটি তাদের জানিয়ে দেয়া হবে।
এসপি বলেন, এই জেলার বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক, চাঁদাবাজি। এছাড়া রাস্তাঘাট, যানজটসহ নানা ধরণের সমস্য তো রয়েছেই। অর্থাৎ সারা শরীরের কোথাও ওষুধ দেয়ার কোন জায়গা নেই। তাই এধরণের পরিস্থিতে আমাদের ধীরে ধীরে খুব সর্তকের সাথে কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাদক চোরাচালান করবে, চাঁদাবাজি করবে কিন্তু আমরা তাকে ধরতে পারবোনা। এমনটি আমরা হতে দিতে পারিনা। এমন অবস্থা থেকে দেখে আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছিনা। এক্ষেত্রে আমরা কোন দল দেখছিনা।
জেলার রূপগঞ্জ, ফতুল্লা বন্দরসহ প্রত্যেকটি উপজেলায় অনেক মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এরা অনেক বড় ভাইদের ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এসপি জানান, জেলায় গত তিনমাসে চার ওসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরে যেসব অসন্তোষ ছিলো সেটি এখন আর নেই বলে জানান এসপি।
তিনি বলেন, জেলায় এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জুয়া। বিভিন্ন জুয়ার আসর থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বিভিন্ন আবাসিক হোটেলগুলোতে অভিযান পরিচালা করা হচ্ছে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসিম উদ্দিন হায়দার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিররুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।