ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করাতে সম্মত নন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সব মামলায় জামিনে মুক্তির পরই তিনি উন্নত চিকিৎসা করাতে চান। খালেদা জিয়া বলেছেন, প্যারোলে মুক্তির আবেদন করবেন না। তাকে মুক্তি দিতে সরকার আন্তরিক হলে আদালতের মাধ্যমেই মুক্তি লাভ করবেন। এজন্য প্যারোলের দরকার হবে না। একই সঙ্গে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের শপথ নেয়ার বিষয়েও নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
রোববার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় খালেদা জিয়া নেতাদের কাছে তার এমন মতামত তুলে ধরেন। ১ এপ্রিল থেকে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকের ৬ তলায় ৬২১ নম্বর কক্ষে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে আসার পর নেতাদের সঙ্গে এটিই তার প্রথম সাক্ষাৎ। নেতারা বিকাল ৪টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা হাসপাতালে অবস্থান করেন।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি নেতারা তার স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসেন। তবে খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি নেতাদের বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে তার প্রত্যেকটিই মিথ্যা। আদালতে সুবিচার পেলে তিনি এতদিনে সব মামলা থেকে রেহাই পেতেন। সরকার সেটা করতে দিচ্ছে না। এখন তাকে প্যারোলে মুক্তির নামে আরেক দফা নির্যাতন করতে চাইছে। দলের নির্বাচিত এমপিরা জাতীয় সংসদে শপথ নেয়ার বিষয়ে তিনি সরাসরি কিছু না বললেও নেতাদের বলেন, এ সংসদে গিয়ে লাভটা কি হবে। সংসদের বাইরেও অনেক ভূমিকা পালন করা যায়। একজন নেতা বলেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে এখনও অনেক দৃঢ় রয়েছেন।
তিনি তার যে কোনো অবস্থার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন বলেও তাদের কাছে মনে হয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি বেশ অসুস্থ, এখনও খেতে পারছেন না। পা বেন্ড করতে পারেন না। তার বাম হাত সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। অর্থাৎ বাম হাতটা ঠিকমতো কাজ করছে না। এ অবস্থার মধ্যে তিনি আছেন। এক কথায় ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যথেষ্ট অসুস্থ।
আগের চেয়ে খুব বেশি ইমপ্রুভ করেছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি। বাংলা নববর্ষের দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে তার প্যারোল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্যারোলের আলোচনা নিয়ে গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন- প্রথম হচ্ছে, প্যারোল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। প্যারোল আমাদের দলের বিষয় নয়।
এটা খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিষয়। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করিনি। সোমবার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা শেষে সংসদে শপথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ বিষয়েও আলোচনা হয়নি। আমরা তো এ সংসদকেই নির্বাচিত বলছি না, আমরা ওই কথিত নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। এ সময় তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন বেগবান করতে আজ শপথ নিয়েছি। প্রতিটি আন্দোলনের বিভিন্ন ধাপ, ধরন ও কৌশল থাকে। আন্দোলন বলতে শুধু হরতাল ও অবরোধ যদি বোঝেন তাহলে আপনাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি না।
আমরা আন্দোলন বলতে বুঝি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সোচ্চার হতে হবে, জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য আমরা কাজ করছি এবং প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সূত্র জানায়, প্যারোলে ইতিবাচক সাড়া না দেয়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় চেয়ারপারসনের মুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মামলাগুলো জামিনযোগ্য। সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে সব মামলায় জামিন সম্ভব না হলে প্রয়োজনে তার গুলশান কার্যালয়কে সাবজেল ঘোষণা করে সেখানে থাকার পক্ষে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। গুলশানের বাসা থেকেই বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান তিনি। এদিকে প্যারোলের পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের শপথের ব্যাপারেও ইতিবাচক সাড়া দেননি খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৬ মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে দুটিতে। বাকি ৩৪ মামলার মধ্যে গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলাসহ ১৩টি মামলা বিচারাধীন। আর হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে ২১ মামলা। সর্বশেষ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে আটজনকে হত্যা মামলায় ৬ মার্চ খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। বর্তমানে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ তিনটি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বাকি আছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনে মুক্তি চাই। তবে তিনি এখন খুবই অসুস্থ। ওনার বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা সেই দাবিই জানাচ্ছি।