ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৮ কোটি হতদরিদ্র মানুষকে গরিবের তালিকা থেকে বের করে আনা হবে। এ জন্য বিশ্বের ১৮৯টি দেশকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ।
এ আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের আট দিনব্যাপী বসন্তকালীন বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকে সম্প্রতি বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাবের আভাস দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
তবে এ ঝুঁকির মধ্যেও বাংলাদেশসহ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে। উল্লেখ্য, বর্তমান বিশ্বে ৭০ কোটি মানুষ দৈনিক ১৬১ টাকা আয় করে চরম দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাস করছে।
৮-১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে বাংলাদেশসহ ১৮৯টি দেশ অংশ নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদর দফতরে বৈঠকের সময় এর বাইরে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-বিরোধীরা। এ সময় সদর দফতরের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। দফতরের পাশের দুটি রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
শেষ দিনের বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এর প্রতি আমরা মনোযোগ দিয়েছি। বর্তমান বিশ্বে ৭০ কোটি মানুষ চরম দরিদ্রতার নিচে বাস করছে। তাদের আয় বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ অর্জন অপ্রতুল।
এ জন্য তাদের তুলে আনতে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া অর্থনীতিতে নারী ও যুবকদের পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করে আরও শক্তিশালী ও স্থিতিশীল বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক নিরলসভাবে কাজ করছে।
এ বৈঠকে দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও বিশ্ব অর্থনীতির মতো বিষয় গুরুত্ব পায়। বলা হয়, এ মুহূর্তে ৭০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। তাদের প্রত্যেকের গড় আয় প্রতিদিন ১৬১ টাকা (১ দশমিক ৯০ ডলার)। এ দারিদ্র্যের হার দুই দশকের (১৯৯০ ও ২০০০) চেয়ে বেশি। তবে এ দারিদ্র্যের সংখ্যা বেশি হচ্ছে সাব-সাহারা অঞ্চলে।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৮ কোটি দরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে আনতে একমত পোষণ করেন বিশ্ব অর্থনৈতিক নেতারা। এ কাজটি সুন্দরভাবে সফল করতে প্রতিটি দেশকে নিজস্ব কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (অ্যাকশন প্ল্যান) জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দার পূর্বাভাস বিরাজ করছে বলে বৈঠকে আভাস দেয়া হয়। পাশাপাশি এ মুহূর্তে বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়া এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা কমে যাওয়ার বিষয়কেও তুলে ধরা হয়।
এ জন্য চাকরির বাজার কমছে ও ঋণ দুর্বলতা অব্যাহত আছে। নানা সূচক পর্যালোচনা করে এগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেও মন্তব্য করা হয়। এ উদ্বেগগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাংক কাজ করছে বলে বৈঠক বলা হয়।
বৈঠকে বিশ্ব অর্থনীতির দিকগুলো তুলে ধরে বলা হয়- উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষ নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ২০১৮ অর্থবছরে শেষ কোয়ার্টারে প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক তিন শতাংশ কমেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশও বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। দেশে আধুনিকমানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যও সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বড় প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে অর্থায়ন করতে আহ্বান করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের আহ্বান ছিল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেকগুলো ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা চাওয়া হয়। বৈঠকে ব্যাংকিং খাত নিয়েও আলোচনা হয়েছে।