ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: নুসরাত জাহান রাফি হত্যার রেশ না কাটতেই এবার গাজীপুরে এক কলেজ ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়েছে। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বুধবার দুপুরে এক কলেজ ছাত্র তাকে খুন করে। এ ঘটনায় হত্যাকারীকে হাতেনাতে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।
নিহত কলেজ ছাত্রীর নাম শারমিন আক্তার লিজা (১৮)। তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি এলাকার ক্যামব্রীজ কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। নিহত শারমিন স্থানীয় আমবাগ ঈদগাহ মাঠ এলাকার মোঃ শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
এ ঘটনায় আটককৃত হত্যাকারীর নাম মোস্তাকিন রহমান রাজু (১৭)। সে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সদর থানাধীন সালনা এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। রাজু স্থানীয় কোনাবাড়ী লিংকন মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্র।
নিহত কলেজছাত্রী শারমিনের ভাই সাদিম আহমদ সুজন, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ী আমবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকার হাজী বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে রাজু স্থানীয় কোনাবাড়ী লিংকন মেমোরিয়াল কলেজে লেখাপড়া করে। কলেজে আসা যাওয়ার পথে সে বেশ কিছুদিন ধরে কলেজ ছাত্রী শারমিন আক্তার লিজাকে উত্যক্ত করে আসছিল।
একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী শারমিন আক্তার লিজা বুধবার দুপুরে বর্ষ উত্তীর্ণ পরীক্ষা শেষে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে কোনাবাড়ি কাঁচাবাজার এলাকায় পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা কোনাবাড়ি লিংকন কলেজের ছাত্র মোস্তাকিন রহমান রাজু ওই ছাত্রীর গতিরোধ করে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।
এ সময় লিজা প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে রাজু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং ছুরি দিয়ে লিজার বুক ও পেটে আঘাত করে। এ সময় লিজার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ছুরিসহ রাজুকে আটক করে গণধোলাই দেয়।
ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত লিজাকে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আটককৃত ঘাতককে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।
নিহতের ভাই সাদিম আহমদ সুজন আরো জানান, হত্যাকারী রাজু কলেজে আসা-যাওয়ার পথে লিজাকে উত্যক্ত করত এবং তাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিত। এ প্রস্তাবে লিজা রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্ন হুমকি দিত সে। সম্প্রতি হুমকির পর লিজা চার-পাঁচদিন ধরে কলেজে যাচ্ছিল না।
বিষয়টি মোস্তাকিনের মাকে মোবাইল ফোনে জানানোর পর দুইদিন আগে মোস্তাকিন ও তার মা বিষয়টি নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং লিজার মা-বাবার কাছে ক্ষমা চায়।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানার ওসি এমদাদ হোসেন জানান, নিহতের গলার নীচে বুকে চাকুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকুটিও উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যাকারী মোস্তাকিন রহমান রাজুকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে আসামী রাজুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
——————00000000———————-
স্ত্রীকে মেরে লাশ পুড়ানোর চেষ্টা স্বামীর
রাজধানীর দক্ষিণ মুগদায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আলামত লুকাতে লাশ পোড়ানোর অভিযোগে স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার সকালে দক্ষিণ মুগদার ব্যাংক কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে মুগদা থানার ওসি প্রণয় কুমার সাহা জানান।
নিহত ওই নারীর নাম হাসি বেগম (২৭)। তার স্বামী কমল হোসেনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করে সে। তারপর আলামত মুছে ফেলতে স্ত্রীর লাশ কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়।’
মুগদা এলাকায় একটি লেদ মেশিনের দোকান রয়েছে কমলের। হাসির সাথে তার বিয়ে হয় আট মাস আগে। তাদের দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে।
আগুনে হাসির শরীরের নিচের অংশ ও চুল পুড়ে গেছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কমল স্বীকার করেছে যে, হাসিকে হত্যার পর সে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এটা করেছে।’
ময়নাতদন্তের জন্য হাসির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
-০–
যৌতুকের জন্য কিশোরী নববধূকে গলাটিপে হত্যা
যে বয়সে তার স্কুলে লেখাপড়া করার কথা, সেই বয়সেই বিয়ে হয়েছিল তার। পারিবারিক দারিদ্র্যতার কারণে সেই বিয়েকে মেনে নিয়ে স্বামীর ঘরে গিয়েও সংসার করা হলো না তার। বিয়ের পর হাতের মেহেদী না মুছতেই যৌতুকলোভী মানুষরূপী পশুদের হাতে প্রাণ দিতে হলো তাকে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। নিহত নববধূর নাম সাথী আক্তার (১৪)।
এক লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে নববধূ সাথী আক্তারকে গলাটিপে হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন।এ ঘটনায় নিহত কিশোরী নববধূর বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ৬জনকে আসামী করে মঙ্গলবার রাতে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের ছয়বাড়িয়া গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী শারফুল ইসলামের (২৯) সাথে চরমছলন্দ জিরাতিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফের মেয়ে চরমছলন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সাথী আক্তারের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে হতদরিদ্র কৃষক আব্দুল লতিফ বিয়ের সময় বরপক্ষকে এক লাখ টাকা যৌতুক দেন।
কিন্তু বিয়ের পর দুই মাস যেতে না যেতেই স্বামী শারফুল ইসলাম ব্যবসার জন্য স্ত্রী সাথী আক্তারের কাছে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে গত কয়েক দিন যাবত স্বামী শারফুল, শাশুড়ি জোসনা বেগম, ননদ নাছিমা ও সাবিনা ইয়াসমিন নববধূ সাথী আক্তারের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।
এরপর গত রোববার পহেলা বৈশাখের রাতে যৌতুকের জন্য স্বামী শারফুল জোরপূর্বক স্ত্রী সাথী আক্তারের মুখে ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে সাথী আক্তার অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সাথী আক্তারকে পাঠিয়ে দেয়া হয় স্বামী শারফুলের বোন জামাই চরমছলন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দফতরী কবীর মিয়ার বাড়িতে। এ সময় সাথী আক্তারের সাথে স্বামী শারফুল ও তার বাড়ির লোকজনও চরমছলন্দ গ্রামে কবীর মিয়ার বাড়িতে চলে আসে।
নিহত কিশোরী নববধূর বাবা আব্দুল লতিফ অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেয়ের জামাতা শারফুল ও তার বোন জামাই কবীর মিয়া আমাকে জানান- সাথী আক্তার আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে আমি গিয়ে সাথীর লাশ কবীর মিয়ার ঘরের খাটেও ওপর পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় সাথীর গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন মিলে গলাটিপে হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে গফরগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ খান জানান, এ ঘটনায় নিহত সাথী আক্তারের অভিযুক্ত ননদ নাছিমা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।