ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদককে দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ শনিবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের আদালতে ব্যবহার করে সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের নামে যুক্তরাজ্যের একটি ব্যাংকে থাকা তিনটি হিসাব জব্দের নির্দেশের আদেশ করিয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সরকারের নির্দেশে দুদকের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত একটি আদেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। মিথ্যা সাজানো মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে আটকে রাখা হয়েছে অন্যায়ভাবে। এখন বিএনপিকে চাপে ফেলতে এই সরকার দুদককে দিয়ে একটি কাল্পনিক ও মিথ্যা আবেদনের মাধ্যমে আদালতকে দিয়ে আদেশ করিয়েছে। এটি একটি আষাঢ়ে গল্প।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি যেভাবে সুসংগঠিত হচ্ছে, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সরকার ভীত হয়ে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাল্পনিক মিথ্যা অভিযোগ সামনে এনেছে। কারণ এখন সরকার যা বলে নিম্ন আদালত তাই করে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর যদি সরকারের নির্দেশ না মেনে কোনো বিচারক ন্যায় বিচার করেন তাহলে তাদেরকে দেশ ছাড়তে হয়, যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ বিচারক মোতাহার হোসেন ও প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
রিজভী বলেন, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই তারেক রহমানের কোনো অবৈধ অর্থ নেই। সেখানে তার যা অর্থ আছে তা ইনল্যান্ড রেভিন্যুতে ট্যাক্সপেইড অর্থ। সেদেশে আইনের শাসন রয়েছে, সুতরাং সেখানে আনডিসক্লোজড মানি ট্র্যানজেকশন হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও তাদের আন্দোলনের ফসল বারো বছর ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজে তারেক রহমানের অবৈধ সম্পদের কোনো সন্ধান পায়নি। অথচ ঢালাওভাবে তার বিরুদ্ধে কত যে মিথ্যা গল্প সাজিয়ে অপপ্রচার করেছে সেটির ইয়ত্তা নেই। এখন দুদককে দিয়ে আরেকটি কুৎসা রটনার নতুন অধ্যায় শুরু করলো।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের বিদ্যমান আইনে আইনসিদ্ধ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আদালতের হস্তক্ষেপের কোনো এখতিয়ার নেই। বাংলাদেশে যে অপরাজনীতি চলছে, এটা তারই প্রতিফলন। জিয়া পরিবারের প্রতি সরকারের প্রতিহিংসার প্রতিফলন এটি। সরকারের মদদে দুদক আদালতকে ব্যবহার করে যে আদেশ জারি করিয়েছে সেটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিনাশ ও তার স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার জন্য হেন কাজ নেই যা এই জনভিত্তিহীন করছে না। একদিকে তারা তাদের অনুগত কিছু পেইড মিডিয়া দিতে প্রতিদিন জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে হাইপার প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, অন্যদিকে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে জননেতা তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও কুৎসাই সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ ও তিক্ত বিরক্ত।
রিজভী বলেন, তারেক রহমান বারবার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ তারা গ্রহণ করেনি। এই অবৈধ সরকার ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ কিছু বানোয়াট মামলায় তারেক রহমানকে জড়িত দেখিয়েছে বিচার ও আইনের সকল নিয়ম কানুন লংঘন করে। এইসব মামলার এফআইআর বা চার্জশীটে তারেক রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
এমনকি একজন আসামীকে ৪০০ দিনের অধিক রিমান্ডে মারপিট ও অত্যাচার করে অচেতন অবস্থায় একটি জবানবন্দী জোগাড় করলেও পরে তিনি কোর্টে তা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু আদালত তা প্রত্যাহার না করে তারেক রহমানকে অভিযুক্ত দেখিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করেছে। এমনকি অন্য একজনের ফিনান্সিয়াল মামলায় তারেক রহমানকে জড়িত করতে চাইলে একটি আদালত তারেক রহমানকে নির্দোষ রায় দেয়।
তিনি বলেন, দেশে একটা প্রবাদ আছে এক কান কাটলে হাঁটে জঙ্গল দিয়ে, দুই কান কাটলে হাঁটে সবার সামনে দিয়ে। কারণ তখন তার লজ্জা সরম থাকে না। একাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ও বির্তর্কিত নির্বাচন। যে নির্বাচনে ভোটারদের দরকার পড়েনি। দরকার পড়েছে চতুস্পদী প্রাণীর।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন মিলে আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখে, ভোটের দিন ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজ দূরে রাখা হয়েছিল সাধারণ ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়ার জন্য। সে নির্বাচনের দৃশ্য দেশি ও আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় কিভাকে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে তা নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীনদের জানা থাকলেও এখন সেটি চেপে গিয়ে মুখস্থ মিথ্যা কথা বলছেন।
তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ তামাম গণতান্ত্রিক বিশ্বে সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সে মিডনাইট ভোটের নির্বাচনের প্রশংসা করা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়লে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগনকে কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি কেনো ? গত নির্বাচনে কেন বিএনপি’র লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে গায়েবী মামলা দেয়া হয়েছিল? কেনো ধানের শীষের প্রার্থীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল? আগের রাতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসন মিলে ব্যালটবাক্স ভর্তি করলো কেন? একতরফা উপজেলা নির্বাচনে এখন ভোটাররা ভোট দিতে যায় না কেনো? প্রধানমন্ত্রী এর জবাব জনগণকে দিবেন কি?