স্টাফ রিপোর্টার: আজ রোববার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। বাংলাদেশে এ রাতটি শবে বারাত নামে সমাধিক পরিচিত। রাতকে আরবীতে ‘লাইল’ এবং ফার্সিতে শব বলা হয়। শাবান মাস মূলত পবিত্র মাহে রমযানের প্রস্তুতির মাস। পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, যারা ১৪ শাবান রাতে ইবাদত করবে তাদের জন্য মুক্তি। আর যে ব্যক্তি পরদিন ১৫ শাবান রোজা রাখবে জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। প্রতিবারের মতো এবারও এ রাতটি ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হবে।
শবে বরাত ‘লাইলাতুল বরাত’ নামেও পরিচিত। আরবি শব্দ লাইলা অর্থ রাত। আবার ফার্সি শব্দ শব অর্থও রাত। আর বরাত অর্থ ভাগ্য। এজন্য এ রাতকে ভাগ্য রজনী বলা হয়। শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ রাতকে নাজাতের রাত হিসেবে অবহিত করা হয়। এ রাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এ রাতে অনেকেই নফল নামায, কোরআন তেলওয়াত, দোয়া করে থাকেন। এছাড়াও বাবা-মাসহ আত্মীয়দের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন অনেকেই।
হিজরি বছর হিসেবে ১৪ শাবান দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালন করা হয়। গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশে ১৪৪০ হিজরি সনের পবিত্র শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ৭ এপ্রিল রজব মাস ৩০ দিন পূর্ণ হয়। ৮ এপ্রিল থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হয়। সে হিসাব অনুযায়ী, ২১ এপ্রিল রাতে সারাদেশে পবিত্র লাইলাতুল বরাত উদযাপিত হবে। ৬ এপ্রিল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও মজলিসু রুইয়াতিল হিলাল নামের একটি সংগঠন দাবি তুলেছিল ৬ এপ্রিল বাংলাদেশে শাবান মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় দেশের প্রখ্যাত আলেমদের সমন্বয়ে সাব কমিটি করে। সেই সাব কমিটিও সিদ্ধান্ত দেয় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি নেই।
পবিত্র শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষা ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, রোববার মাগরিবের নামাজের পর থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাতব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম, জিকির, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত।
পবিত্র লাইলাতুল বারাত উপলক্ষে আজ রাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মসজিদ, মাদরাসা, খানকা ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আলোচনা, মিলাদ-মাহফিল ও নফল ইবাদতের আয়োজন করা হয়েছে। পবিত্র লাইলাতুল বরাতে বাড়ি বাড়ি হালুয়া-রুটি বিতরণ করেন। অনেকে এ কাজকে সওয়াবের কাজ হিসেবে মনে করে। কিন্তু পবিত্র কুরআন, হাদীসে হালুয়া-রুটি বিতরণ করা সম্পর্কে কোনো কথা উল্লেখ নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় আলেমগণ। পবিত্র লাইলাতুল বারাত উপলক্ষে টিভি চ্যানেলসমূহ ও বাংলাদেশ বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়া পত্র-পত্রিকাও বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে আজ জাতীয় সংবাদপত্রসমূহে ছুটি পালিত হবে।
পবিত্র লাইলাতুল বারাত উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য দোয়া করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তাছাড়া বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বাণী দিয়েছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ রাতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তাতে রয়েছে আলোচনা, জিকির, নফল নামায, ও বিশেষ মুনাজাত। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আতশবাজি-পটকা নিষিদ্ধ
পবিত্র শবে বরাত (আজ রোববার ২১ এপ্রিল) উপলক্ষে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষার্থে ও রাজধানীর শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পটকা এবং আতশবাজি নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল শনিবার ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, পবিত্র শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে; শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কাল সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ক্ষার জাতীয় বা বিস্ফোরকদ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। নগরবাসীকে এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।