শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে সিরিজ হামলার পর দুপুরের দিকে নতুন করে আরেকটি হোটেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এটি সপ্তম বোমা হামলা। লঙ্কান পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এ বিস্ফোরণে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে আজ সকালে দেশটিতে তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত ২০৮ জন নিহত ও ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। আর সবশেষ বোমা হামলায় দুজনসহ এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০ জনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা বলেছেন, দক্ষিণ কলম্বোর দেহিওয়ালা এলাকার একটি হোটেলে নতুন বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। দেশটিতে এটি সপ্তম বিস্ফোরণের ঘটনা।
দেশটির পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডে উদ্যাপনের সময় তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, দুজন বাঙালি আন অ্যাকাউন্টেড। তাদের পরিবারের অন্যরা অ্যাকাউন্টেড। আমরা তাদের অবস্থা জানার চেষ্টা করছি। যত তাড়াতাড়ি ট্রেস করা যাবে, আমরা তাদের পরিবারকে জানাব।
ওই দুইজনের নাম পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করেননি প্রতিমন্ত্রী । তিনি বলেন, ওই দুইজনের খোঁজে কলম্বোর হোটেল ও হাসপাতালগুলোতে খোঁজ করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, চারজন বাংলাদেশির একটি দল কলম্বো গিয়েছিল টুরিস্ট হিসেবে। তাদের মধ্যে দুজন ঠিকঠাক থাকলেও একটি শিশুসহ দুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, বাংলাদেশিদের তথ্য পাওয়ার সুবিধার জন্য কলম্বোয় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোসাম্মত মাহমুদা বেগমকে ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাহমুদা বেগম বলেন, ঘটনার পর থেকে শ্রীলঙ্কায় অবস্থানরত সব বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
বাংলাদেশি কারও কোনো সহযোগিতা বা তথ্যের প্রয়োজন হলে +94712406313 নম্বরে ফোন করে মাহমুদার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার ব্রিফিংয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কায় এই হামলার ঘটনায় নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন। তারা শ্রীলঙ্কার মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা একটি দীর্ঘ সময় সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর শান্তি অর্জিত হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে আমরা শ্রীলঙ্কার পাশে আছি, থাকব। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না হয় সেজন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে এখন পর্যন্ত হামলার ঘটনায় কেউ দায় স্বীকার করেনি। হামলার শিকার তিন হোটেল এবং একটি গির্জা রাজধানীতে হলেও বাকিগুলো নিগমবো ও উত্তর কলম্বোয় অবস্থিত। এসময় হাজার হাজার লোক ইস্টারের প্রার্থনারত ছিলেন।
খবরে বলা হয়েছে, কলম্বোর কোচচিকাদো অঞ্চলের সেন্ট অ্যানথনি এবং রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে নিগমবোতে সেন্ট সেবাস্তিয়ান ও আড়াইশ কিলোমিটার দূরে আরেকটি গির্জায় হামলা হয়।
সূত্র জানায়, উদ্ধারকারীরা হতাহতদের নিরাপদ জায়গা সরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
নিগমবো অঞ্চলের কাতাওয়াপিতিয়ায় সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জার ভেতরে বিস্ফোরণে ধ্বংসের ছবি দেখা গেছে এটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এতে গির্জার ফ্লোরে রক্ত বয়ে যেতে দেখা গেছে। আক্রান্তদের সহায়তা সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে।
ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লেখা একটি পোস্টে লেখা রয়েছে, আমাদের গির্জায় একটি বোমা হামলা হয়েছে। যদি আপনাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ সেখানে থাকেন, দয়াকরে এগিয়ে আসুন এবং সাহায্য করুন।
হতাহতদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকরাও রয়েছেন বলে দেশটির স্থানীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রীলংকায় কেবল ছয় শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী।
এ হামলার ঘটনার পর শ্রীলংকার সরকার ইতিমধ্যে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। দেশটির অর্থনৈতিক সংস্কারবিষয়ক মন্ত্রী হার্শা ডি সিলভা বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
তিনি বলেন, আমি মানুষের মরদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। বিদেশি নাগরিকসহ বহু লোক এতে হতাহত হয়েছেন। দয়া করে সবাই ঘরের ভেতরে ও শান্ত থাকুন।
শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২০৭ জন নিহত হওয়েছে। রোববার দুপুর ৩টা পর্যন্ত আটটি বিস্ফোরণ ঘটেছে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো-সহ সংলগ্ন এলাকায়। রোববার সকালে রাজধানী কলম্বোর কয়েকটি তিনটি হোটেল ও তিনটি গির্জা ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। আহত হয়েছেন চার শ’রও বেশি। হামলার পর দেশজুড়ে ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করা হয়েছে।
কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। গির্জায় ইস্টারের প্রার্থনা চলাকালীন এই হামলা ঘটে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ৯ জন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন।
সকালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর আরও একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে দুপুরে। সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে জানা গেছে এমনটাই। কলম্বোর চিড়িয়াখানার কাছে সপ্তম বিস্ফোরণটি ঘটে। এর পরে ফের শ্রীলঙ্কার ওরুগোদাওত্তায় অষ্টম বিস্ফোরণের খবর আসে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুই ব্যক্তি। এটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ বলে মনে করছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ।
কলম্বো হামলায় সেনাবাহিনী তলব করেছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসন। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপালা সিরিসেনাও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দেশের মানুষের পাশে থাকার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে। একটি টুইট করে তিনি বলেন, এ জাতীয় হামলা একেবারেই কাপুরুষোচিত। দেশের প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে ও দৃঢ় মনের পরিচয় দিতে অনুরোধ জানান তিনি।
শ্রীলঙ্কা মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরই দেশ। দেশে খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী ক্যাথলিকদের সংখ্যা ছয় শতাংশ মাত্র। ইস্টারের প্রার্থনার কারণেই গির্জায় বেশ ভিড়ই ছিল, তাই এই নির্দিষ্ট সময়টাকেই হামলাকারীরা বেছে নিয়েছে বলে মত শ্রীলঙ্কা পুলিশের।