সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, তারেক জিয়া ও জুবায়দার বিরুদ্ধে যে আদেশটি দেয়া হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ বে-আইনি।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদেরকে স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি বাংলাদেশের আদেশে লন্ডনের কোনো ব্যাংকে কারো অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে পারে না। এই ধরনের আদেশ দেয়ার ক্ষমতা আমাদের দেশের কোনো আদালতের নেই।’ তারেক রহমান ও জুবায়দার বিরুদ্ধে আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, যে আদেশটি দেওয়া হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ বে-আইনি। এই ধরনের আদেশ দেয়ার ক্ষমতা আমাদের দেশের কোনো আদালতের নাই।”
রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৃতীয় তলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাক্তার জোবাইদা রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ লন্ডনে আছেন। লন্ডন একটি আইনের শাসনের দেশ, সেখানে কারচুপির মাধ্যমে কোনো অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়া যায় না। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যেসব টাকা থাকে প্রতিটি টাকায় ইনকাম টেক্স পে করতে হয়। সে কারণে কোনো মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমো কোনো টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া সম্ভব না।”
তিনি বলেন, কাগজে দেখেছি আওয়ামী লীগ সব সময়ই রাজনৈতিক অঙ্গনে একটার পর একটা চমক সৃষ্টি করে। আমি মনে করি তারেক রহমান সাহেব লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে যে টাকার কথা বলা হয়েছে এটা একটা চমক সৃষ্টি….।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আরো বলেন, “আর আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এমন একটি দেশে আছি যেখানে আদালত অনেক ক্ষেত্রে নিজস্ব বিচার-বিবেচনা না করে সরকার পক্ষকে যা চায় সেই আদেশটি দিয়ে দেয়। একবারও চিন্তা করলেন না যে, লন্ডন বা যুক্তরাজ্য একটি ভীন্ন দেশ, এদেশের আদেশের উপর নির্ভর করে সে দেশের সরকার বা আদালত কিছু করবে না। তাই এ ধরনের একটা অযথা চমক সৃষ্টি করেছেন। সম্পূর্ণ মিথ্যা, তারেক রহমান সাহেবের মানি লন্ডারিংয়ের কোনো অর্থ যুক্তরাজ্য কেন পৃথিবীর কোথাও নেই ।”
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “আপনারা জানেন ওয়ার ইলাভেনের পরে এবং তার পরবর্তী সরকার পূঙ্খানুপুঙ্খরূপে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তন্নতন্ন করে দেখেছে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কোনো অর্থ সে দেশে আছে কিনা। তারা খোঁজ পায়নি। শেষ মুহূর্তে এসে যেহেতু বাজারে একটা গুঞ্জন চলছে যে, ডাক্তার জোবায়দা রহমান হয়ত বাংলাদেশে আসবেন, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন, এই গুঞ্জনকে জোবায়দা রহমানকে এখানে ইমপ্লিকেট করা হয়েছে।”
আপনি বলছেন বেআইনি আদেশ, এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনি পদক্ষেপ তো আমরা এখানে বসে নিতে পারব না। যাদের বিরুদ্ধে করেছে, যাদের কথা বলা হয়েছে লন্ডনে তারা কী করবেন সেটা তাদের উপর নির্ভর করে। আর এটাও আপনাদের কাছে স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি এই আদেশে লন্ডনের কোনো ব্যাংক কারো অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে পারে না।
তিনি বলেন, “আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলে দিয়েছেন, এটা উনি ওখানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে যাবেন, অ্যাটর্নি জেনারেল সেটা আদালতে উপস্থাপন করবেন। আমরা বারবার বলতে চাই তারেক রহমানকে নিয়ে আসতেছি, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নিয়ে আসতেছি- কোনোটাই যখন সফল হয় নাই এখন চমক সৃষ্টি করার জন্য তারেক রহমান সাহেব ও তার স্ত্রীকে জনসম্মূখে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা উক্তি করে চমক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, এর আগে আমরা দেখেছি, হংকংয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছিল বাংলাদেশের আদালত। এছাড়া খন্দকার মোশারফ হোসেনের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ আছে লন্ডনে, তার পরও কী বলবেন পারে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, “এখানে স্পেসিফিক মামলা হয়েছে। আদালত একটা আদেশ দিয়েছিল সে আদেশর পরিপ্রেক্ষিতে সেটি ফ্রিজ হয়েছিল। এখানে কোনো মামলা মোকদ্দমা নেই। তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা কোনো আদালতে নেই। আদালতে যদি কোনো মামলা পেন্ডিং না থাকে আদালতের এধরনের কোনো আদেশ দেয়ার এখতিয়ার নাই।” “তদুপরি মনে রাখতে হবে যে, বিদেশে কোনো আদালত বাংলাদেশর কোনো আদালতের আদেশের উপর নির্ভর করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পারে না, যে পর্যন্ত ওই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আবেদন না আসে।”
এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ব্রিটেনের একটি ব্যাংকের তিনটি হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশনের এ-সংক্রান্ত একটি পারমিশন মামলার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন।
ফ্রিজ করার আদেশ হওয়া তিনটি ব্যাংক হিসাবই ব্রিটেনের স্যান্টান্ডার ব্যাংক ইউকের। পারমিশন মামলার আবেদনে বলা হয়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং এবং অর্থপাচারপূর্বক বিদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধানকালে দুদক কর্তৃক তদন্ত টিম গঠন করা হয়।