শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৯০ : গ্রেফতার ১৩

শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় ইস্টার সানডে চলার সময় কয়েক দফা বোমা হামলায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কারফিউ চলবে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই সিরিজ বোমা হামলায় ২৯০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে দেশটির প্রধান বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকা থেকে একটি হাতে বানানো বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিমানবাহিনী।

গতকাল রোববার রাতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে জানান, সম্ভাব্য একটি হামলার বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাছে সতর্কতামূলক তথ্য ছিল। তবে আগে থেকে সতর্ক বার্তা থাকার পরও, কারা এই হামলা চালিয়েছে, এখনো তা জানাতে পারেনি সরকার।

এ অবস্থায় গুজব বা মিথ্যা খবর ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সেবাগুলোয় অনেকে প্রবেশ করতে পারছেন না।

বাংলাদেশি আহত
শ্রীলঙ্কায় এদিকে ওই হামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ের পরিবারের দুইজন সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় হামলার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম একটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, বোমা হামলার ঘটনার পর থেকে এক শিশুসহ দুই বাংলাদেশির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে ব্রুনেই সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ের পরিবার শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, সেলিমের মেয়ে-জামাই ও নাতি সে সময় একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করছিলেন। সেখান একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে মেয়ে-জামাই আহত হন এবং (গতকাল) বিকেল পর্যন্ত নাতির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনা তাদের জন্য দেশবাসীর জন্য দোয়া চেয়েছেন। পরে আজ সকালে খবর আসে, নিখোঁজ সেই নাতি নিহত হয়েছে।

উল্লেখ্য, শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

যেভাবে হামলা হয়
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যখন ইস্টার সানডে পালন করছিল তখন এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রথম হামলা হয় স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টায়। তিনটি গির্জায় অন্তত ছয়টি বিস্ফোরণ হয়েছে। যে গির্জাগুলোতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেগুলো কোচ্চিকাডে, নেগম্বো ও বাট্টিকালোয়ায় অবস্থিত। এছাড়া রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিস্ফোরণ হয়েছে। কারা এই হামলা চালিয়েছে তা জানা যায়নি, তবে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের ধারণা, কোন কোন স্থানে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী অংশ নিয়েছিল। বিভিন্ন গির্জার আশেপাশে এখন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, এবং পুলিশের তদন্ত চলছে।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ভয়াবহ হামলা।

মূলত শ্রীলংকার ধর্মীয় স্থানগুলো পর্যটকদের বড় আকর্ষণের জায়গা। ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা গত কয়েকশ বছর ধরে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে।

কিন্তু দেশটিতে বহু বছর ধরে তুমুল গৃহযুদ্ধ চলেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিজ এবং সংখ্যালঘু তামিলদের মধ্যে এ যুদ্ধ চলেছে দেশটির উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলে।

উল্লেখ্য, শ্রীলংকার মোট আয়তন ৬৫৬০০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা দুই কোটি বিশ লাখ। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বৌদ্ধ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে হিন্দু জনগোষ্ঠি যারা মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। এছাড়া মুসলিম ১০ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ৭ শতাংশ।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।