ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বছরের পর বছর বেকার থেকেও কোটি টাকা ব্যয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফের উপকূলীয় বাহারছড়া শামলাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন খোকন।
স্থানীয়দের কাছে এখন এটি বেশ আলোচনার বিষয়। বেকার হয়ে কীভাবে এতো টাকা খরচ করে বাড়ি নির্মাণ করতে পারেন এই যুবক সেই গুঞ্জনে ব্যস্ত এলাকাবাসী। বাড়ি বানিয়ে বিপদে পড়েছেন এই যুবলীগ নেতা। তার আয়ের উৎস খুঁজতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
আর কেঁচো খুড়তেই বেরিয়ে আসছে সাপ। প্রাথমিকভাবে টাকার উৎস সম্পর্কে রোমহর্ষক তথ্যও পেয়েছে গোয়েন্দারা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের দেয়া শামলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের তৈরি মাদক কারবারিদের তালিকায় যুবলীগ সম্পাদক খোকনের নাম রয়েছে।
তালিকায় ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী হিসাবে ৪ র্থ নম্বরেই রয়েছে এই যুবলীগ নেতার নাম। জানা গেছে, তালিকার শীর্ষে থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহ প্রকাশ হাবা চৌধুরী ২০১৮ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ ঘটনার পরই খোকন আত্মগোপনে চলে যান।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার এলাকায় ফিরে আসেন খোকন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তালিকার চার নম্বর ব্যক্তি হওয়ার পরেও রহস্যজনক কারণে খোকনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কর্তব্যরত ওসি। উল্টো ফিরে এসে খোকন নতুন উদ্যমে ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। পুরো ইউনিয়নে গড়ে তুলেছেন ইয়াবার সাম্রাজ্য।
এদিকে খোকন নিজেকে জমি ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছেন। তবে এলাকাবাসীর বক্তব্য, কোনো ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন খোকন। এসব ব্যবসার নাম বলে মূলত ইয়াবা ব্যবসা করেন তিনি।
মিয়ানমার থেকে শামলাপুর পুরানপাড়া ঘাটে ইয়াবার চালান আসে বলে তথ্য দিয়েছেন এলাকাবাসী। আর সেখান থেকেই খোকন ও তার সহযোগীরা ইয়াবার চালান নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করে দেন।
এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মৌলভী হাবিব উল্লাহ বলেন, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা একটি তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। তবে পরবর্তীতে আর কি হয়েছে আমি জানি না।
তবে নিজের বিরদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন আমজাদ হোসেন খোকন।
ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও পূর্বশত্রুতার বহিঃপ্রকাশ দাবি করে তিনি বলেন, আমি বেকার নই। হোটলে কক্স টু ডে কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠান সুইট ড্রিম কোম্পানিতে চাকরি করছি আমি। গত তিন বছর ধরে জমি কেনাবেচা, ফিশিং ট্রলার ব্যবসা রয়েছে আমার। এছাড়াও বাবার জমি বিক্রি করে ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি। এরপর দুবাই প্রবাসী ভাইদের পাঠানো টাকা ও কক্সবাজার শহরের হাজিপাড়ায় জমিটি বিক্রি করেছি। সেসব টাকা এক করে এই বাড়িটি নির্মাণ করছি।
এ বিষয়ে টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, পুরো টেকনাফের মাদক কারবারিদের নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ। অভিযুক্ত যতই প্রভাবশালী হোক কেউ ছাড় পাবে না, সেভাবেই নির্দেশ রয়েছে ওপর মহলের। পর্যায়ক্রমে সবাই ধরা পড়বে।