ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ গ্রামজুড়ে বেশিরভাগ বাড়ি টিনের। বিল্ডিং বলতে বড় জোড় দেয়াল তুলে তার ওপর টিনের চাল। সেটাও হাতে গোনা। তবে এসব টিনের ঘর আর সব কুড়েঘরকে ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল অট্টালিকা। তাও আবার দুটি!
নিম্নবিত্তদের সামনে এ অট্টালিকা রুপকথার সুরম্য প্রাসাদ বললে অত্যুক্তি হবে না। বগুরার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের সরকারপাড়া নামের একটি গ্রামের প্রবেশ পথেই শ্বেতপাথর তৈরি এ অট্টালিকা দুটি স্বাগত জানাবে আগন্তুকদের। সবার মনে নিশ্চিত প্রশ্ন জাগবে, এমন প্রত্যন্ত গ্রামে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো দেখতে এ শ্বেতপাথরের প্রাসাদ দুটি কার?
এ প্রশ্নের খোঁজে অবাক হওয়ার মতো যে তথ্য মিলেছে যে, বর্তমানে এই বাড়ি দুটির বাসিন্দা মাত্র একজন। তিনি সেখানে কেয়ারটেকার হিসাবে কর্মরত।
স্থানীয়দের এ বাড়ি দুটি নিয়ে কৌতুহলের সীমা নেই। তারা বলছেন, ১২ বছর ধরে এ বাড়ি দুটি নির্মাণ করা হয়েছে, এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বাড়ির মালিকের নাম সাখাওয়াত হোসেন টুটুল। তবে এতো টাকা খরচ করেও এ বাড়িতে বসবাসের ভাগ্য হয়নি তার।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান,সরকারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন টুটুল। টুটুল এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় কারাবাসে রয়েছেন বলেই জানে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা আরও জানায়, ২০০৬ সালে হঠাৎ করে সাখাওয়াত হোসেন টুটুল অনেক টাকার মালিক হয়ে যান। সেসময় তার পৈতৃক টিনের বাড়ির পাশে প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গা নিয়ে এই বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন। পাশাপাশি দুটি বিল্ডিং তৈরি করেন তিনি। বাড়ি নির্মাণ শেষে এর বাইরের দেয়াল ও সীমানা প্রাচীরে টাইলসের পরিবর্তে শ্বেতপাথর স্থাপন করেন। এর আগে শ্বেতপাথর শুধু সিনেমায় দেখেছেন বলে জানান গ্রামবাসীরা।
বাড়ির কারুকার্য তৈরিতে ও শ্বেতপাথর বসাতে বগুড়ার বাইরে থেকে শ্রমিক আনা হয়ে বলে জানান তারা। ১২ বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে ২০১৮ সালে বাড়ি নির্মাণের কাজ সর্ম্পূণ হয়।
বাড়িটির জানালা-দরজা তৈরিতে দামি কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব কাঠের প্রতিটিতে প্রাচীন নকশা খোদাই করা। শ্বেতপাথরগুলো বিদেশি । প্রতিটি ঘরেই এয়ার কন্ডিশনার লাগানো হয়েছে।
বড় বড় কক্ষে সন্নিবেশিত বাড়িটির ভেতরে ঢুকলে মনে হবে কোনো ফাইভ স্টার হোটেল বা তার চেয়েও বেশি।
পাশাপাশি দুটি শ্বেতপাথরের প্রাসদের একটি চারতলা, অন্যটি তিনতলা। দুই বাড়ির ছাদে রয়েছে চারটি করে গম্বুজ। রয়েছে আলাদা আকর্ষণীয় ডিজাইনের রান্না ঘর, দুটি পুকুর, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণিদের নিয়ে তৈরি করা একটি পার্ক। এছাড়াও বড় আকারের ফুলের বাগানটি বেশ আকর্ষণীয়।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান টুটুল কীভাবে এত সম্পত্তির মালিক হলেন তা নিয়ে এলাকায় রয়েছে নানা জল্পনা।
এ বিষয়ে দেউলী সরকারপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সাখাওয়াত হোসেন টুটুল ছেলেবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান। অনেকদিন তাকে দেখা যায়নি। পরে দেখা যায় তিনি এক অবাঙালি নারীকে বিয়ে করেছেন এবং এরপর থেকেই তিনি সম্পদশালী হয়ে ওঠেন।
জানা গেছে, ঢাকার ধানমন্ডিতে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, গাজীপুর টাটকা ফুড প্রডাক্ট ফ্যাক্টরি, গ্রামের বাড়িতে একটি ইটভাটা এবং একটি কোল্ডস্টোরেজ ছাড়াও শতাধিক বিঘা আবাদি জমি রয়েছে টুটুলের। এছাড়াও অনেক ব্যবসা রয়েছে তার।
টুটুলের এই বাড়িটি ঘিরে আশপাশের এলাকাসহ বগুড়ার মানুষেরা বেশ কৌতুহলী। কারণ এ বাড়িতে এখন আর সাধারণের প্রবেশ নিষেধ।
এ বিষয়ে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক জয়ন্ত কুমার জানান, অপরিচিত লোকজনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে।
তবুও দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন লোকজন বাড়িটি একনজর দেখতে আসেন বলে জানান তিনি। আর এসব পর্যটকের জন্য বাড়ির কাছেই হোটেলসহ বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে।
বাড়ির ভেতরের অংশ
বর্তমানের টুটুলের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করছেন তার বড় ভাই ফজলুল বারি।
টুটুল কেন এত টাকা খরচ করে এই বাড়ি নির্মাণ করেছেন সে বিষয়ে কিছু বলতে আগ্রহী না হলেও ফজলুল বারি জানান, এই বাড়ির কারণেই টুটুলকে জেলে যেতে হয়েছে।