ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ জামায়াত ত্যাগীদের নিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক দল যাত্রা হচ্ছে। আজ রাজধানীর বিজয়নগরের হোটেল ৭১-এ এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’ নামে এই রাজনৈতিক উদ্যোগ আত্মপ্রকাশ করে। জামায়াতের বহিস্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু আনুষ্ঠানিকভাবে এই উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বিরবণ লিখিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি এর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনেরও সমালোচনা করেন মঞ্জু। বলেন, এই অবস্থায় নতুন গণশক্তি উত্থানের জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার- এই তিন মূলনীতিকে বিবেচনায় নিয়ে একটি জনঅধিকার ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে কল্যাণভিত্তিক রাজনীতিই এই উদ্যোগের প্রধান কারণ বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। মঞ্জু বলেন, এই তিনি নীতির প্রতি সমর্থন, বিশ।বাস ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে জণগন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো।
কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ জন্মের পর কখনোই এই প্রতিশ্যুতির পূর্ণবাস্তবায়ন ঘটেনি। আজ পর্যন্ত যারাই বাংলাদেশ শাসন করেছেন, তাদের প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধের এই মৌলিক প্রতিশ্যুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সাম্প্রতিক নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল মূলত ভোটের একটি মহড়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্পষ্ট করে দিয়েছে সরকার ও বিদ্যমান রাষ্ট্রের কাছে নাগরিক হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব এবং ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। বিরোধী জোটসমূহের পক্ষে মানুষের বিপুল সমর্থন দৃশ্যমান হলেও তারা যে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার সামর্থ্য রাখে না, সেটাও পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে
নতুন দলের সমন্বয়ক মঞ্জু বলেন, আমরা প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, কিন্তু আমরা কোনো ধর্মভিত্তিক দল গঠন করব না। আমরা যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছি তা হবে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য, উন্মুক্ত একটি প্লাটফর্ম।
সংবাদ সম্মেলনে ‘জন আকাঙ্খার বাংলাদেশ’ নামের এর রাজনৈতিক উদ্যোক্তরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খাকে ধারন করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৫ টি কমিটিও গঠন করেছেন। এগুলো হলো, রাজনৈতিক প্রস্তাবনার খসড়া প্রণয়ন কমিটি; জনসংযোগ ও অন্তর্ভুক্তি তত্ত্বাবধান কমিটি; গণমাধ্যম, সনামাজিক মাধ্যম ও তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক কমিটি; অর্থসংগ্রহ সংক্রান্ত প্রস্তাবণা এবং পরিকল্পনা কমিটি এবং সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তাবনা, কর্মকৌশল এবং পরিকল্পনা কমিটি। এসব কমিটি কাজ শুরু করেছে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে শিবিরের সাবেক এই সভাপতি বলেন, মুক্যিুদ্ধে আকাঙ্খাকে ধারন করে প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে জাতীয় জীবনের সব অর্জন ও ঐক্যের জায়গাগুলো সমন্বিত করে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, প্রচলিত কোনও রাজনৈতিক ধারা বা দলের অনুসারী কিংবা অনুরক্ত নয়, এটা সম্পূর্ণ স্বাধীন উদ্যোগের একটি স্বতন্ত্র ধারা। জামায়াতে ইসলামীসহ বিদ্যমান কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের সম্পক উল্লেখ করে বলেন, রাজনৈতিক দল হবে সত্যিকার অর্থে ইনক্লুসিভ ও একটি ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার নতুন রাজনৈতিক কার্যক্রম এটি।
তিনি বলেন, আমরা ‘জনআকাঙ্খার বাংলাদেশ’ স্লোগানে একটি মঞ্চের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছি। যা আমাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ। আমরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করব। আলোচনা, পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে আমরা সংগঠনের নাম, কাঠামো, কর্মপদ্ধতি ঠিক করব। আজ থেকে আমাদের কাজ শুরু হল।
এক প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন দল নিয়ে সক্রিয় হওয়ার আশা রয়েছে। তবে আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি আসব। এই রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের কোন সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, অনেকে এই উদ্যোগের সঙ্গে সরকারের যোগসাজস থাকার সন্দেহ করবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত আমাদের সঙ্গে সরকারের কোন সম্পর্ক নেই। কারও মদত বা উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে আমরা আসিনি। অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছিল আমাদের ওপর। সামনেও আসবে, তারপর আমরা এগিয়ে যাব।
গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল থেকে পদত্যাগকারী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা এই রাজনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি যুক্ত নয়। তবে আমরা দেশে-বিদেশে অনেকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি।
কোনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে না উল্লেখ করে মঞ্জু বলেন, আমাদের অনুপ্রেরণার উৎসস্থল ইসলামের উদার ঐতিহ্য ও সাম্যের দর্শন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের উল্লেখিত মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ আমাদের জাতীয় ঐক্যের পাঠাতন। স্বাধীনতার যুদ্ধে জামায়াত ইসলামীর ভূমিকার সমালোচনা করে দলটির সাবেক এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী একমাত্র বিরোধীতাকারী দল না হলেও পরবর্তী সময়ে তাদের দলীয় ভূমিকা নিয়েই বেশি প্রশ্ন ও বির্তক তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকার দায় স্বীকারের দাবিকে বরাবরই অগ্রাহ্য করেছে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনামলেও দু’বার গভীর সঙ্কটকালে জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছিল মুসলিম লীগ ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ। আর স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে হাল ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রায় চারযুগ পরে আজ আবার প্রিয় মাতৃভুমি তেমন আরেক বাক পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। একাত্তরে যে আকাঙ্খার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়েছিলো বাংলাদেশ, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়ার দায়িত্ববোধ করছি আমরা।
জামায়াতের ভেতর সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে নতুন এই রাজনৈতিক দল গঠন করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, অতীতে যেখানে ভুমিকা রাখতে চেয়েছিলাম সেখানে যখন নেই, সেই বিষয়ে কথা না বলি। আমরা নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি। অতীতের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্কে নেই। আমরা কোনও তত্ত্বের কথা বলবো না, অধিকারের কথা বলবো।
নির্দিষ্ট ১৯টি বিষয়ে একমত হয়ে তারা সবাই এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন জানিয়ে মঞ্জু বলেন, তারা নির্দিষ্ট আদর্শভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছেন না, জনগণের আকাঙ্খাভিত্তিক দল গঠন করবেন। এই রাজনৈতিক দল হবে ইতিবাচক বাংলাদেশ গড়ার নতুন কার্যক্রম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আইনজীবী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি এই উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হয়েছি। আপনারা অনেকেই আমাকে জামায়াতের সদস্য মনে করেন। কিন্তু আমি জামায়াতের আইনজীবী ছিলাম। জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। পেশাগত কারণে আমি জামায়াত নেতাদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলাম মাত্র।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, এডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জুবায়ের আহমেদ ভুইয়া, মাওলানা আবদুল কাদের, মাওলানা তাজুল ইসলাম, গোলাম ফারুক, গৌতম দাস, ড. কামাল উদ্দিন প্রমুখ। তবে মঞ্চে না থাকলেও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীতে বিভক্তির অভিযোগ এনে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় মঞ্জুুকে।