ক্রাইমর্বাতা রির্পোট ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এক ব্যবসায়ীর দোকানে ইয়াবা রেখে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টার সময় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে হাতেনাতে ধরে পিটুনি দিয়েছে লোকজন। এ সময় উত্তেজিত জনতা প্রায় তিন ঘণ্টা ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধের মাধ্যমে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা পর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন।
গত রবিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ডে। পুলিশ সদস্যরা হলেন গৌরীপুর থানার এএসআই আব্দুল আউয়াল, রুহুল আমিন, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ও কনস্টেবল আল আমিন। গতকাল সোমবার তাঁদের পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে এক যুবককে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও মারধর করে তাঁর টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। ওই যুবকের বড় ভাই এ বিষয়ে মহনগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত রবিবার বিকেলের ওই ঘটনায় গতকাল সোমবার সকালে এ অভিযোগ করা হয়।
গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের বলুহা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে খোকন মিয়া রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ডে বর্ষা টেলিকম নামের একটি দোকানে মোবাইল যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ফ্লেক্সি লোডের ব্যবসা করেন। খোকন জানান, রবিবার রাত ১০টার দিকে সাদা পোশাকে পুলিশের পাঁচজনের একটি দল দোকানে প্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাতে থাকে। প্রথম দফায় কিছু না পেয়ে দ্বিতীয় দফায় আবার তল্লাশি চালানোর সময় এক পুলিশ চিৎকার দিয়ে উঠে জানায়, দোকানের বাইরে বৈদ্যুতিক তারের কয়েলের ভেতর ১০ পিস ইয়াবা বড়ি আছে। তখন তাঁকে আরেক পুলিশ চড়-থাপ্পড় ও কিলঘুষি এমনকি লাথি মেরে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি মাটিতে পড়ে যান। আশপাশের লোকজন এসে প্রতিবাদ জানালে তাদের হুমকি দিতে থাকেন ওই পুলিশ সদস্যরা। একপর্যায়ে বাসস্ট্যান্ডের শত শত লোক এসে পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করে মারধর শুরু করে।
এলাকাবাসী জানায়, ওই পরিস্থিতিতে পুলিশ খোকন মিয়াকে ছেড়ে দেয়। পাঁচ পুলিশ সদস্য দৌড়ে অটো টেম্পো মালিক সমিতির কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই তাঁদের আটকে রাখা হয়। পুলিশের হয়রানি ও মারধরে জ্ঞান হারানো খোকনকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন।
খবরটি পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোক জড়ো হয়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করে। রাত ৩টার দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে তদন্ত করে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিলে উত্তেজিত জনতা মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে ও পাঁচ পুলিশকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গেলে এলাকার লোকজন জানায়, গৌরীপুর থানার পুলিশের এএসআই আব্দুল আউয়াল, কামরুল, আনোয়ার ও রুহুল আমীন চিহ্নিত চাঁদাবাজ। তাঁরা সাধারণ লোকজনকে মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করেন। তাঁদের ভয়ে সন্ধ্যার পর বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ লোকজন একধরনের ভয়ভীতিতে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে অটোরিকশাচালক কাজল মিয়া, স্কুলছাত্র হিমেল, ইটভাটার শ্রমিক বাবুল মিয়া ও জুলহাস, ভাঙারি ব্যবসায়ী শহীদ মিয়া ও বিপুল টিভিতে আইপিএল ক্রিকেট খেলা দেখার সময় তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ আনা হয়, তারা ওই সময় খেলায় বাজি ধরছিল। পরে জনপ্রতি সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন এএসআই আউয়াল ও আনোয়ার।
আরো জানা গেছে, গত শীতে ওই এএসআই আব্দুল আউয়াল গৌরীপুর পৌর শহরের হরিজনপাড়ায় গিয়ে সাজন বাসফোড়, রামু বাসফোড় ও রাজু বাসফোড় নামে তিন যুবককে ধরে তাদের পকেটে গাঁজা রেখে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। লোকজন বাধা দিলে তাদের বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখালে উত্তেজিত জনতা তাঁকে আটকে রাখে। পরে থানা থেকে অন্য পুলিশ গিয়ে আউয়ালকে উদ্ধার করে।
এদিকে খোকনের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিরাপত্তার কারণে অসুস্থ অবস্থাতেই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গতকাল তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বুকে প্রচণ্ড ব্যথা ও জ্বর নিয়ে কাতরাচ্ছেন। ভয়ের মধ্যেও রয়েছেন। তিনি জানান, ছয় মাস আগেও এই এএসআই আব্দুল আউয়াল তাঁকে বন্ধুদের এক আড্ডা থেকে অযথা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তখন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি ছাড়া পান।
অভিযুক্ত আব্দুল আউয়াল, কামরুল ও আনোয়ার জানান, তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল খোকনের ঘরে ইয়াবা রয়েছে। সেই মোতাবেক তাঁরা সেখানে গিয়ে ১০ পিস ইয়াবাও পান। কিন্তু লোকজন তাঁদের ওপর মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা শুরু করে।
রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শিবুল মিয়া বলেন, ‘খোকন এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী লোতা। তিনি ওই পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করেন।’
ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) সাখের হোসেন সিদ্দিকী জানান, এরই মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্যকে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজশাহীতে এসআইয়ের বিরুদ্ধে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার এসআই শরিফুলের বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগটি করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর এলাকার চৌহদ্দিটলা গ্রামের আব্দুল হক ওরফে হাকিম। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ২৪ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাক হয় তার ছোট ভাই সালাহউদ্দিনের। ওই দিন তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৮ এপ্রিল সালাহউদ্দিন ছুটি নিয়ে নগরীর ডাবতলা এলাকায় আমার ভাড়া বাসায় আসে। বিকেলে সে তার ভাবির সঙ্গে রিকশায় ঘুরতে বের হয়। কিন্তু বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে যাওয়ামাত্র দু-তিনটি মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন রিকশার গতিরোধ করে। এরপর ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তারা সালাহউদ্দিনকে চড়-থাপ্পড় মেরে তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে বিকাশের মাধ্যমে আরো চার হাজার টাকা নেয়। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি উল্লেখ করেন, সালাহউদ্দিন ওই সময় একটি মোটরসাইকেলের নম্বর লিখে রাখে। পরে ওই নম্বরের সূত্র ধরে নগরীর রাজপাড়া থানায় যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারেন, এসআই শরিফুল ইসলামের মোটরসাইকেল সেটি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন রিকশার মধ্যে অপকর্মের কারণে ওই যুবককে আটক করে। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে চড়-থাপ্পড় মেরে সালাহউদ্দিনকে ছেড়ে দিই। তাঁর কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া বা বিকাশে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘সঙ্গের নারীটি সালাহউদ্দিনের ভাবি ছিল না। অন্য কোনো মেয়ে ছিল।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ হয়েছে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’