ক্রাইমর্বাতা রির্পোট ঢাকা: বিএনপির নির্বাচিত চারজনের শপথ গ্রহণের পেছনে কোনো সমঝোতা আছে কি না, তা খোলসা করার আহ্বান জানিয়েছেন মাহমুদুর রহমান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তাদের জোটসঙ্গী এই নেতা বলেছেন, “যদি সমঝোতা হয় তা হলে সেই সমঝোতাটা খোলাখুলি বলেন, কী সমঝোতা হয়েছে?”
তার প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেছেন, “বিএনপি সমঝোতা করলে অনেক আগেই সমঝোতা করতে পারত। বেগম খালেদা জিয়া যদি সমঝোতা করতেন তাহলে উনি প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না… এই কথাগুলো আপনাদের মনে রাখতে হবে।”
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তোলা বিএনপি সংসদে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার শনিবার রাতে বৈঠক করে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আব্দুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন শপথ নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানান মির্জা ফখরুল।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন বলে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
হঠাৎ করে বিএনপির এই অবস্থান বদলকে সঠিক মনে করছেন না নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান।
বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে তাদের ঘাঁটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বগুড়ার একটি আসনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে পরাজিত হওয়া মান্না অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি সবার কাছে আবেদন বলতে চাই, আমাদের লড়াই ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ নেই। আপসকামিতায়-সহযোগিতা-সহমর্মিতায়-সমঝোতায় আপনি জিততে পারবেন না।”
সমঝোতা হয়ে থাকলে বিএনপি তার ভাগেরটা এখনও বুঝে পায়নি বলেও মনে করছেন তিনি।
“আগেই তো আপনার কাজ সেরে ফেলেছেন। খেলতে বসে দাবার চাল দিয়ে দিয়েছেন, এবার ওই পক্ষ চাল দেবে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে,” বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন মান্না।
আলোচনায় তার কথার জবাব দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত বদল রাজনীতির চমক, একে ইউটার্ন হিসেবেও ধরে নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, “গতকাল থেকে রাজনীতি খুব গরম হয়ে উঠেছে। গরম হয়ে উঠেছে যে, বিএনপির নির্বাচিত বলে ঘোষিত যে সমস্ত সংসদ সদস্য তারা সংসদে শপথ নিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে একটা চমক। চমকের মতো একটা সংবাদ। ইউটার্ন- এর মতো।
“কারণ আমাদের দলীয় যে সিদ্ধান্ত ছিল, সেই সিদ্ধান্ত ছিল ৩০ ডিসেম্বরের যে নির্বাচন সেই নির্বাচন মনে করেছি যে, এটা কোনো নির্বাচনই ছিল না। ২৯ তারিখ রাতেই ভোট চুরি হয়ে গেছে এবং এটা পুরোপুরিভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে তাদেরকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সেই নির্বাচন ক্ষমতাসীন শাসক দল তাদের দিকে নিয়ে গেছে।
“নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন সবাই ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত থেকে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। জনগণের ক্ষোভের ধারাবাহিকতায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমরা শপথ গ্রহণ করব না।”
তাহলে শেষ মুহূর্তে কেন এই সিদ্ধান্ত বদল- তার ব্যাখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “যেটা আমরা বিশ্বাস করি, কোনো সিদ্ধান্তই পার্মানেন্ট বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে থাকবে, স্থবির হয়ে থাকবে- এটা সব সময় সঠিক নয়।
“বিশেষ করে বর্তমানে সারা বিশ্বে যে রাজনীতি চলছে এবং সারা বিশ্বের রাজনীতির যে প্রেক্ষাপট সব কিছুকে প্রেক্ষিতে নিয়ে আমরা আমাদের বক্তব্যে খুব স্পষ্ট করে বলেছি যে, আমরা ন্যূনতম যে সুযোগটুকু আছে সংসদের ভেতরে গিয়ে কথা বলার সেই সুযোগটিকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“এটা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি এবং আমার মনে হয়, দেশের যারা চিন্তাবিদ আছেন যে, এই সিদ্ধান্তটা আমাদের জন্য খুব খারাপ সিদ্ধান্ত বলে মনে করি না।”
দলের এই অবস্থানের পক্ষে সাফাই দিলেও নিজে শপথ নিচ্ছেন না মির্জা ফখরুল। তিনি বলছেন, তার শপথ না নেওয়াটাও দলীয় সিদ্ধান্তেই, এটা তাদের ‘কৌশলেরই অংশ’।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে মানবাধিকার সংগঠন আওয়াজের উদ্যোগে ‘উন্নয়নের মৃত্যুকূপে জনজীবন: নুসরাত একটি প্রতিবাদ’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের সভাপতি সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আওয়াজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপিকা শাহিদা রফিকসহ নারী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।