সাতক্ষীরায় ফণী আতংক: সন্ধার পর ঝড় হাওয়া শুরু: তাণ্ডব চালাতে পারে সারা রাত

ক্রাইমর্বাতা রির্পোট  : সাতক্ষীরা:  সাতক্ষীরা প্রয়োজনীয় আশ্রায় কেন্দ্র না থাকায় দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সাতক্ষীরায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।কয়েক হাজার মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে। দুপুর থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে সন্ধার পর দিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সাতক্ষীরার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ১-২ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চ ও যমুনা নদীতে অন্যন্য দিনের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকার আকাশ মেঘলা ও বাসাতের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতিমধ্যে নানা প্রস্তুতি গ্রহন করেছে। তিনি জানান, জেলায় ১৩৭টি আশ্রায় কেন্দ্র ও ১১৬ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে লোকজন ভওে গেছে। জেলায় এখনও ৭ নং সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছে।
জেলার তিনটি ঝুঁকিপূর্ন উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। অপর চারটি উপজেলায়ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার জেলে-বাওয়ালীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উপকুলীয় এলাকায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ১২শ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৩১৬ মেট্রিক টন চাল, ৬ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা, ১১৭ বান টিন, গৃণ নির্মাণে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা ও ৪০ পিস শাড়ি মজুদ আছে। এছাড়া পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়ার পর্যন্ত জেলার সকল সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্ম এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে।
শুক্রুবার এক প্রেসব্রিফিংএ এতথ্য জানানো হয়। এসময় সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী আফম রুহুল হক, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম, প্রেস¬াব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাধারন সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বলা হয়, ইতোমধ্যে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিসে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর ০৪৭১৬৩২৮১।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা এলাকার আবুল হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে সাতক্ষীরা সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানে। এই আইলার ক্ষত এখন কাটিয়ে উঠতে পারেন এই এলাকার মানুষ। রারাস্তা াঘাটের বেহলা দশা, বেঁড়িবাধ ঝুঁকির মধ্যে আকাশে মেঘ দেখলে আমাদের ঘুম হামার হয়ে যায়। আবার ঘুর্ণিঝড় ‘ফেনী’। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রসঙ্গ ২০০৯ সালের ২৫ মে এই দিনে ১৫ ফুট উচ্চতা বেগের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্নিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা ‘আইলা’ আঘাত হানে দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবন উপকুলীয় উপকুলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায়।প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় আইলার আঘাতে তছনছ হয়ে যায় দক্ষিণ-উপকুলীয় সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের হাহাকার কমেনি। এর পর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলিও ঝুকির মধ্যে।

 

ফণীর প্রবাহে রাজধানীসহ সারা দেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া কোথায় কোথায় বাঁধ ভেঙে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ফনি আজ (শুক্রবার) বাংলাদেশের সাতক্ষীরা  উপকূলে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সৃষ্টি করতে পারে। যা সারা রাত পর্যন্ত চলবে।এছাড়া শনিবার পর্যন্ত এর প্রভাব থাকবে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ।

সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফনি শুক্রবার সকাল ১০টায় ভারতের ওড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। ওড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করার সময় এর চারপাশে বাতাসের বেগ ছিল ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার।

তিনি বলেন, বর্তমানে এটি ওড়িষা উপকূল থেকে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উপকূল খুলনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এজন্য পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্ধরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রামকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে ও কক্সবাজারে ৪ নম্বর হুশিয়ারি সংকেট দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ফনি যখন আঘাত হানবে তখন এর ভয়াবহতা কেমন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আগেও বাংলাদেশে হয়েছিল। এর ফলে প্রাণহানি হয়েছিল। এছাড়া গাছপালা উপড়ে যাওয়া ও কাচা-বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।এই ঘূর্ণিঝড় ফনির ক্ষেত্রে এই ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, ফনির প্রবাহে রাজধানীসহ সারা দেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া কোথায় কোথায় বাঁধ ভেঙে গেছে। যেসব এলাকায় আমরা ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দিয়েছি ফণী সেসব এলাকায় প্রথমে আঘাত হানবে। এরপর খুলনা, সাতক্ষীরা,রংপুর ও রাজশাহী হয়ে উত্তরাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হবে।

ফনি যখন আঘাত হানবে তখন বাতাসের গতিবেগ সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ফনি যখন আঘাত হানবে তখন বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় একেক জায়গায় একেকরকম হবে। কোথায় হয়তো ১০০ কিলোমিটার। কোথাও ১২০ কিলোমিটার, কোথায় ১০ কিলোমিটার,কোথাও ২০ কিলোমিটার এ ধরনের বাতাস হতে পারে।

ফনির শক্তিমত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফনি ইতোমধ্যে ভারতে যেভাবে আঘাত হেনেছে তা থেকে বুঝা যাচ্ছে এটি একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।এ সময় তিনি ঘূর্ণিঝড় থেকে নিরাপদে থাককে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার জন্য পরামর্শ দেন।

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।