ক্রাইমর্বাতা রির্পোট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে তীব্র সমালোচনা৷
এ সমালোচনায় অংশ নিয়েছেন খোদ ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। ভিপি নুরের অভিযোগ, ‘এমন বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।’
এ বিষয়ে নুর বলেন, ‘ওই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আমার সঙ্গে বা ডাকসুতে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি৷ ’
এ বিজ্ঞপ্তিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ‘ব্যক্তিগত’ বিজ্ঞপ্তি বলে মন্তব্য করেন ভিপি নুর।
বিষয়টিতে তিনি ছাত্রলীগের ‘দখলদারি প্রবণতার বহির্প্রকাশ’ আখ্যা দেন। এদিকে ছাত্রলীগ বলছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ওই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা মহলে বিতর্কে মেতেছেন শিক্ষার্থীরা।
কেননা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেকোনো বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসুর ভিপি ও জিএসের স্বাক্ষর থাকার নিয়ম থাকলেও এ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু জিএস গোলাম রাব্বানীর স্বাক্ষর রয়েছে।
কী লেখা রয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে?
বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছে- ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি প্রেরণে ডাকসু একক এখতিয়ার রাখে৷ এ বিষয়ে ডাকসুর সংশ্লিষ্ট সম্পাদকরা দ্রুত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন৷ তার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হয়ে যেকোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগে ডাকসুর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করা হলো৷’
মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তিটির অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদের ডিন, হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউটগুলোর পরিচালক, বিভাগগুলোর চেয়ারম্যান, প্রক্টর কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে পাঠানো হয়েছে৷
এমন বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমের ওপর এ ধরনের ‘নিয়ন্ত্রণ’ আরোপের এখতিয়ার কারও নেই৷ যে যার যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী যেকোনো প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার রাখেন৷
বিতর্কিত ওই বিজ্ঞপ্তির সমালোচনা করেছেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ, স্বতন্ত্র জোট থেকে ডাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অরণি সেমন্তি খান, ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উম্মে হাবিবা বেনজীর।
ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন ডাকসুর নামে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে৷
এ বিষয়ে সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘ওই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না৷’ শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ বলেন, ‘এমন বিজ্ঞপ্তি শিক্ষার্থীদের স্বকীয়তার ওপর অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপের অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।’
স্বতন্ত্র জোটের অরণি সেমন্তি খান বলেন, ‘সবাইকে দখলদারির রাজনীতিতে শামিল করতে প্রথম পদক্ষেপ এ বিজ্ঞপ্তি৷’ ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, ‘ডাকসুর বিজ্ঞপ্তি হয়ে থাকলে এতে ভিপির স্বাক্ষর কোথায়? এর মানে ডাকসুতে ‘স্বৈরতন্ত্র’ শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসুর ভিপি নুরের স্বাক্ষর নেই কেন এবং একে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের বিতর্ক বিষয়ে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷
তবে ডাকসুর এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ডাকসুর ভিপি গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাস করেন না বলেই’ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন৷ আর ডাকসুর সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তির বক্তব্যের সব সমালোচনা অমূলক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য আসেনি।