ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে উপচে পড়া পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। এতে ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাবে ২৬ জেলায় অন্তত দেড় লাখ একর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া ২২ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৫৯ গ্রাম। সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে ৫টি বড় হাওর।
এছাড়া নওগাঁ, ঝালকাঠি, ভোলা, খুলনা ও বরগুনায় বাঁধ ভেঙে ফসলের মাঠ ও লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তারা বলছেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না, দ্রুত বাঁধ মেরামত চাই।’
সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে নতুন বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
এদিকে ভোলা ও বরগুনার পাথরঘাটায় কয়েকশ’ পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসন থেকে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পটুয়াখালীর দশমিনায় ৩০টি টিনশেড স্কুলঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলায় ঘরচাপা পড়ে একজন নিহত হওয়ার খবর সরকারিভাবে বলা হলেও ফণীর প্রভাবজনিত কারণে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
যুগান্তর রিপোর্ট, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর : ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার পাঁচটি বড় হাওরের অবশিষ্ট পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। রোববার ভোর রাতে বাঁধ ভেঙে ও উপচে ওই হাওরগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করে।
ক্ষতিগ্রস্ত হাওরগুলো হল- তাহিরপুর উপজেলার শনি ও মাটিয়ান হাওর,জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার সোনামোড়ল হাওর এবং সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওর। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক ভূঁইয়ার দাবি, ৫টি হাওরে বাঁধ ভেঙে নয়, উপচে পানি ঢুকেছে।
মৌসুমের এ সময়ে এসে হাওরগুলোর প্রায় ৮৫ ভাগ বোরো ফসল কাটা হয়ে গেছে। পানি ঢোকার খবর পেয়ে অবশিষ্ট ফসল যে যার মতো কেটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি, বাঁধ ভেঙে যে হাওরগুলোতে পানি ঢুকছে সেগুলোর ৯৩ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি ৭ ভাগ ধান হাওরের উঁচু জমিতে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় আছে। সেখানে পানি ঢোকার আগেই অবশিষ্ট ধান কেটে নিয়ে যেতে পারবেন কৃষক।
২০১৭ সাল থেকে হাওরের কৃষকের অধিকার রক্ষা নিয়ে কাজ করে স্থানীয় সংগঠন হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন। তাদের দাবি, হাওরে এখনও ৩০ ভাগ জমিতে পাকা ধান রয়েছে। যে বাঁধগুলো ভেঙে হাওরে পানি ঢুকছে সেগুলো দুর্বল করে নির্মাণ করার কারণে পানির প্রথম ধাক্কাতেই সেগুলো ভেঙে গেছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় এসব দাবি করেন।
এদিকে, বৃষ্টিপাতের কারণে কাটা ধান মাড়াই ও মাড়াই করা ধান শুকানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
রোববার খরচার হাওরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাওরের চাতলপার এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি তোড়ে হাওররক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে হাওরে পানি ঢুকছে। অন্যদিকে মিছাখালি রাবার ড্যাম উপচেও হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।
নওগাঁ ও নিয়ামতপুর : শুক্র ও শনিবার দফায় দফায় অবিরাম বৃষ্টিতে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের ইরি ও বোরো ক্ষেত। নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নের চাঁচাইবাড়ী গ্রামের কৃষক হান্নান বলেন, তিনি ৩৫ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। সব জমির ধানই পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারছেন না।
বুধবার শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিয়ে ৫ বিঘা জমির ধান কেটে জমিতে রেখেছিলেন উঠানে তোলার আশায়। কিন্তু শুক্র ও শনিবারের বৃষ্টিতে সে ধান এখন পানিতে ভাসছে। সদর উপজেলার বরুনকান্দি গ্রামের কৃষক আবদুরও ধান পানিতে ডুবে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
রোববার নিয়ামতপুর উপজেলার পাঁড়ইল, শ্রীমন্তপুর ও নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বোরো ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেতে পাকা ধানের শিষগুলো জমে থাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষক তাদের ফসল বাঁচাতে জমির আইল কেটে পানি বের করার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ তলিয়ে যাওয়া কাটা ধান মাঠ থেকে ঘরে তুলছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমীর আবদুল্লাহ মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ঝড়োবৃষ্টিতে কিছু নিচু এলাকার বোরো ধান ডুবে গেছে বা ঝড়ো হাওয়ায় শুয়ে গেছে। তবে ফণীর প্রভাব কেটে যাওয়ায় আশা করছি আবহাওয়ার উন্নতি ঘটবে এবং মাঠের ধান নির্বিঘ্নে কৃষক ঘরে তুলতে পারবেন।
ঝালকাঠি : রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় বিষখালী নদী তীরের ৪০০ ফুট বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি ঢুকে ৫০০ হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে গেছে ২৪টি কাঁচা ঘরবাড়ি। জেলা প্রশাসন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়াও মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।
কাঁঠালিয়ার শৌলজালিয়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, বিষখালী নদী তীরের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে আমাদের বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। রাজাপুরের বড়াইয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ধানক্ষেত পানিতে ডুবে আছে।
এ বছর ৫০ হাজার টাকার ফসলের ক্ষতি হতে পারে। পানির মধ্যে অপরিপক্ব ধান কাটাও যাচ্ছে না। ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর বলেন, কাঁচা ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করছি।
ভোলা, মনপুরা ও লালমোহন : জেলায় ঘরবাড়ি হারিয়ে দুই শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। রোববার পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এদের দুই বেলা শুকনো খাবার, দুই বেলা রান্না খিচুড়ি বিতরণ করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার কর্মীও এদের চাল-ডাল দিয়ে সহযোগিতা করেন।
এদিকে দ্রুত ঘর বা চালা নির্মাণ করার জন্য রোববার বিকালে জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ক্রোড়ালিয়ার ৮নং ওয়ার্ডে ১০২ পরিবারকে দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক।
এছাড়া জেলায় ১০ হাজার ৪৩৭ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তিন উপজেলায় প্রায় দেড় কিলোমিটার বাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলা সদরে দেড় শতাধিক, মনপুরায় ৯০টি ও চরফ্যাশনে ১০০টি, তজুমদ্দিনে ৫০টি, বোরহানউদ্দিনে ৩০, লালমোহনে ৫০টি কাঁচা-পাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়।
এদিকে ভোলায় ঘরচাপা পড়ে একজন নিহত হওয়ার খবর সরকারিভাবে বলা হলেও ফণীর প্রভাবজনিত কারণে মারা গেছেন ৬ জন। এরা হলেন- ভ্যানচালক সফিক (৩৩), ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আনোয়ারা বেগম (৪০), মো. হাসান (৬), মো. আবু জাহের (৩২), আনোয়ার হোসেন ও জাহিদুল ইসলাম সাকিল (১৫) ও রানী বেগম রানু ( ৪৫)।
উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : দু’দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে উপজেলার বেশকিছু এলাকায় আধা পাকা বোরো ধানগাছ মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তা কাটাতে পারছেন না কৃষক। অনেক এলাকায় কৃষকরা মহিলা শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, প্রযুক্তিগতভাবে কৃষকরা অনেক সচেতন হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। ফণীর আগাম বার্তা পাওয়ায় অনেক কৃষক তাদের ক্ষেতের পাকা ধান কেটে নিয়েছেন।
বরগুনা ও পাথরঘাটা : জেলায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ওইসব বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ফণীর প্রভাবে ভাঙন কবলিত এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীনের উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় নিচু বেড়িবাঁধ ভেঙে ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়েছে। পাউবো বরগুনা কার্যালয় সূত্র মতে, ২২টি পোল্ডারের অন্তত ৩২টি পয়েন্টে ১৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, অন্তত ২৫ কিলোমিটার বাঁধ এ মুহূর্তে ঝুঁকিতে রয়েছে। রোববার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার নলী ও আজগরকাঠি এলাকার গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার প্রায় ৭ কিলোমিটার বন্য নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
নলটোনা এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফ বলেন, ফণী আমাদের চরম ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে। আমাদের ঘরবাড়ি অক্ষত থাকলেও জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। কারণ, প্লাবন থেকে রক্ষা করে যে বাঁধ, সেই বাঁধেরই অর্ধেক পানির তোড়ে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। ত্রাণ চাই না, আমাদের বাঁধ নির্মাণ করা দরকার। বাঁধের দ্রুত মেরামত চাই আমরা।
এদিকে পাথরঘাটায় ঝড়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
খুলনা : উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বানিশান্তা বাজারের উত্তর পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে কয়রা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদীর পাড়ে হরিণখোলা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঁধ ক্ষয়ে সরু আইলে পরিণত হয়েছে। জোয়ারের পানির চাপ বাড়লে যে কোনো সময় এটি ভেঙে যেতে পারে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ রক্ষার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, পশুর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দাকোপের বানিশান্তা বাজারের উত্তর পাশে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
সাতক্ষীরা : ‘মানুষ ত্রাণ চায় না, চায় বাঁধ। তারা চায় দুর্যোগে সাইক্লোন শেল্টার’- একথা উল্লেখ করে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ৫৫৩ কিলোমিটার বাঁধ আরও উঁচু এবং টেকসই করার কাজ শুরু করা হবে। আগামী ৫০ বছর ধরে যাতে বাঁধ নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে থাকতে না হয় সেই কাজই করা হবে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী রোববার বিকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ফণীতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে একথা বলেন। অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরায় আরও কমপক্ষে একশ’টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হবে।
পটুয়াখালী (দ.) : পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকার অরক্ষিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। রোববার সকাল থেকে জেলার কলাপাড়া, মির্জাগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার নদীপথে ঘুরে বাঁধগুলো পরিদর্শন করেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ আগামীকাল (সোমবার) থেকে শুরু হবে। এছাড়া টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা নেয়া হবে। এ সময় তিনি ফণীতে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।
দশমিনা (পটুয়াখালী) : দশমিনা উপজেলায় ফণীর আঘাতে ৩০টি টিনশেড প্রাথমিক বিদ্যালয় বিধ্বস্ত হয়েছে। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এসব স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
বগুড়া : ধুনট উপজেলায় দু’দিনের বৃষ্টিতে পাকা সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার শত শত মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ডিসিদের পাঠানো প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন : ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬ জেলার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬২ একর ফসলি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ হাজার ২৩৩টি ঘরবাড়ি। ফণীর প্রভাবে ৫৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২২ কিলোমিটার বাঁধ। বহুল আলোচিত এ ঘূর্ণিঝড়ে ৫ জন মারা গেলেও আহত হয়েছেন ৮৩২ ব্যক্তি।
এছাড়া ১৭৫টি গবাদি পশু মারা গেছে। ফণীর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ জেলার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র।
এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলার ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩ জন ব্যক্তিকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদ আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ২০ জেলায় ৩ হাজার ৮০০ টন চাল, ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা নগদ এবং ৪১ হাজার শুকনা খাবার প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।