ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সম্প্রতি সাতক্ষীরাসহ আশেপাশের এলাকায় বিরাজ করছে ছেলে-মেয়ে ধরা আতঙ্ক। সাধারণ মানুষও বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। বোরখা বাহিনী নামে একটি বিশেষ বাহিনী নাকি ছদ্মবেশে গ্রামে প্রবেশ করে শিশুদের প্রলোভন দেখিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কারো ধরে নিয়ে গেছে এমন খবর দিতে পারেনি কেউ। আবার বোরখা বাহিনীর কোন সদস্যকে হাতেনাতে ধরতেও পারেনি কেউ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নাগাল পাচ্ছে এ বাহিনীর। পুলিশ সুপার মো. সাজাজাদুর রহমান ইতোমধ্যে জনগণকে সচেতন করার জন্য গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পুলিশ বলেছেন, সাতক্ষীরা জেলায় ‘বাচ্চা ধরা’ নিয়ে একটি মিথ্যা তথ্য বা গুজব মানুষের মুখে মুখে ও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। এ ধরণের কোন বস্তুনিষ্ঠ তথ্য নেই। এটা নিছক একটি গুজব এবং মিথ্যাচার। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। গুজবে কান না দেয়ার জন্য তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে গুজবে কান না দেয়ার জন্য সাতক্ষীরা সদর থানার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে কলারোয়া থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি আরিফ মাহমুদ জানান, কলারোয়ায় গুজবে কান না দেয়ার আহবান জানিয়ে মাইকিং করে প্রচার করেছে কলারোয়া থানা পুলিশ। সম্প্রতি উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় বহিরাগত অচেনা লোকজনের আনাগোনায় বিভিন্ন গুজব ও প্রোপাগান্ডার জন্য জনসচেতনতার জন্য এ মাইকিং করা হয়। রোহিঙ্গা ছেলেধরা, কালো পোশাক পরিহিত ব্যক্তিদের দ্বারা চুরি-ত্রাস সৃষ্টিসহ বিভিন্ন গুজবে ভাসছে অনেকে। বিশেষ করে অতিসম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গুজবমূলক খবর প্রচারিত হলেও বাস্তবে এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। সবাই বলছে, ‘শুনেছি’। কিন্তু কেউ চাক্ষুস দেখেছে কিংবা স্বয়ং ভূক্তভোগি এমন কাউকে সনাক্ত করে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর সেজন্যই গুজবে কান না দেয়ার আহবান জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জনসচেতনতায় মাইকিং করা হয়েছে উপজেলাব্যাপী।
এদিকে পুলিশের প্রচার মাইক থেকে বলা হয়: ‘গুজবে কান দেবেন না।’ সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় কালো কাপড় পরিহিত সন্ত্রাসীরা বা ভিক্ষুক বেশে ছেলে ধরা বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যা সম্পূর্ন গুজব ও ভিত্তিহীন। অদ্যাবধি এ ধরনের কোন ঘটনার সত্যতা বা কোন ঘটনার স্বীকার অভিযোগকারীর সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। এলাকার কোন মসজিদে এই ধরনের গুজব প্রচার করা যাবে না। এই ধরনের গুজবে সবাইকে বিচলিত না হওয়ার জন্য এবং নির্ভয়ে এলাকায় থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সর্বদা গোয়েন্দা নজরদারিসহ প্রস্তুত রয়েছে। যদি কেউ এই ধরনের গুজব ছড়ায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সম্প্রতি তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া ও সদর উপজেলার কয়েকটি অঞ্চলে এ অভিযোগে ইতোমধ্যে অনেক অপরিচিত মানুষকেই মারপিট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশ মাইকিং করে জানিয়েছে এটি গুজব।
আমাদের কপিলমুনি (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, পাইকগাছাবাসী গত কয়েক দিন গুজব আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাছে। বোরকা পার্টি, ছেলে ধরা ও এলাকায় রোহিঙ্গার প্রবেশ আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে তারা। আতঙ্ক এত বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে যে, থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। জানানো হচ্ছে এটি নিছক গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। ইতোমধ্যে উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যত মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল)কে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ। এদিকে গুজবকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত মহিলাকে পিটিয়ে জখম করার ঘটনায় দুই থেকে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে।
সূত্রমতে, গত কয়েকদিন যাবৎ এলাকার সর্বত্রই বোরকা পার্টি, ছেলে ধরা ও রোহিঙ্গা প্রবেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে। পৌর সদরসহ উপজেলার প্রতিটি প্রান্তে এলাকাবাসি রাতে লাঠি সোটা নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা বসিয়েছে। পুলিশ এর কোনো কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এরপরও কিছু কিছু মানুষ নানা বিভ্রান্তিমূলক গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। যার ফলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কপিলমুনি ইউনিয়নের আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন সিলেমানপুর এলাকায় স্থানীয় এলাকাবাসি অজ্ঞাত এক মহিলাকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর জখম করে। থানা পুলিশের চেষ্টায় অজ্ঞাত ওই মহিলাকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও তার শারীরিক অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
এ ঘটনায় তিন শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামী করে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। অপর দিকে এ ধরণের গুজবে আর কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি নির্যাতনের স্বীকার না হন এ জন্য থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জনসচেতনতার অংশ হিসেবে গোটা উপজেলায় দিনভর মাইকিং করা হচ্ছে। মাইকিংএ বলা হয়েছে সম্প্রতি কিছু মানসিক ভারসাম্যহীন পাগল এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এটিকে অনেকেই ছেলে ধরা হিসাবে এলাকায় গুজব ছড়াচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। যদি কোনো পাগল কিংবা অপরিচিত লোককে কোথাও দেখতে পাওয়া যায় সাথে সাথে থানা পুলিশকে জানানোর কথা বলা হয়।
এলাকায় মাইকিং করার পাশাপাশি থানা পুলিশ গত কয়েক দিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডজন খানেক মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল) থানায় জড়ো করেন। এরপর তাদের গোসল করিয়ে, চুল ছাটিয়ে ও নতুন পোশাক পরিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ জানান, একটি কুচক্রী মহল গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। অপ্রচারকারী কুচক্রী মহলে বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রশাসন কাজ শুরু করছেন। বোরকা পার্টি বলে কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এটি নিছক গুজব। এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের অনুরোধ কোথাও কোনো অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখলে সাথে সাথে থানা পুলিশকে খবর দিন। দয়া করে কেউ আইন হাতে তুলে নিবেন না।
ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা জেলা তালা উপজেলা ছেলে ধরা গুজব বিরাজ করছে। ছেলে ধরার আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে স্থানীয়রা। কয়েকজনকে ছেলে ধরা হিসেবে সন্দেহ করে ধনধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনগণ। তবে বিষয়টি গুজব বলে প্রমাণিত হয়েছে। কোন কুচক্রি মহল ছেলে ধরা গুজব ছড়িয়ে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ছেলে ধরা গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থার হুশিয়ারি করেছে পুলিশ।
জানাযায়, উপজেলার ঘোষনগর নামক খেয়াঘাট স্থান থেকে ১ জন, নাংলা নতুন বাজার হতে ১ জন,তালা ব্রীজ মোড় হইতে ১ জন সহ বিভিন্ন স্থানে থেকে সন্দেহ ভাজন হিসাবে জনগণ আটক করে মারধরও করে। এসময় এগিয়ে যান কিছু সচেতন মানুষ। আটক ৩-৫‘জনের পরিচয় নিতে গিয়ে দেখা যায় তারা বিকৃত ভাষায় কথা বলতে শুরো করে । পরে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। কারা গুজব ছড়িয়ে তা খুঁজতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে রোহিঙ্গারা এই এলাকায় সে কাজের সন্ধানে ঘোরা ঘুরি করছে ।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী রাসেল জানান, ৩-৫’জন যদি ছেলে ধরা হিসেবে গণপিটুনিতে মারা যেতেন তাহলে দায়ভার কে নিতো। তাই গ্রামের মানুষ যদি এসব বিষয়ে সতর্ক না হয় তাহলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরা কেউ ছেলে ধরা না ,আমরা প্রতি নিয়ত মাইাকিং করছি জনগকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য । যদি তাদের বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ পাই যে তারা ছেলে ধরা তাহলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব । গুজবের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত কোন স্থান থেকে ছেলে ধরার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ কিংবা তথ্য আসেনি। শুধুমাত্র সন্দেহ ও অনুমানের ভিত্তিতে এসব গুজবে কান দিচ্ছে স্থানীয়রা।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলা হয়েছে ‘সাতক্ষীরা জেলায় বাচ্চা ধরা যে মিথ্যা গুজব স্যোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে এর বস্তু নিষ্ঠ কোন তথ্য নেই। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে গুজুবে কান দেবেন না।’
গুজবে কান না দেয়ার আহবান পুলিশের