প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই জমে উঠেছে সাতক্ষীরার আমের বাজার: পৃথক বাজার না থাকায় হতাশ চাষীরা

আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: প্রশাসনের  বেধে  দেয়া সময়ের আগেই জমে উঠেছে সাতক্ষীরার আমের বাজার। ফলে আমের পক্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পরও দেশের পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখন সাতক্ষীরাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ধুম পড়ে গেছে আম কেনা বেচায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আম চাষীদের কর্মব্যস্ততার যেন শেষ নেই। প্রথম দিনে জেলা থেকে প্রায় ১৫ ট্রাক গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে বড় মানের গোবিন্দ ভোগ। এছাড়া জেলার পাইকারী বাজারে এক থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে ছোট আম। আম চাষীরা বলছে আম পাকতে থাকায় তারা আম পাড়ছে। আগাম মুকুল আসা ও পর্যাপ্ত গরমের কারণে এবছর আগাম আম পাকতে শুরু করেছে বলে চাষীরা জানান।

জেলায় আমের জন্য পৃথক বাজার না থাকায় আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগী দালালদের খপ্পরে পড়ে আমচাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ। তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাইকারী ব্যাবসায়ী ও বাগান মালিকদের অভিযোগ পুলিশ প্রশাসসহ কিছু ব্যক্তি গোষ্ঠিকে চাঁদা দেয়ার কারণে আমের বাজার মূল্যে তারতম্য হয়।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভোক্তার অধিকার ক্ষুণœ করে আম পাকাতে কেউ ফরমালিনের আশ্রয় নিলে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কেউ যেন ফরমালিন দিয়ে আম পাকাতে না পারে তার জন্য প্রশাসেনর মোবাইল কোটের ব্যবস্থা রয়েছে।

জেলা কৃষি খামারবাড়ি সূত্র জানায়, চলতি মাসের, ১৫ তারিখ থেকে গোবিন্দভোগ, ২২ তারিখের পর থেকে হিমসাগর ও ২৯ তারিখের পর থেকে ল্যাংড়া এবং ৮ জুন থেকে আ¤্রপালি আম বাজারে উঠতে পারে। একইভাবে ২২ মের পর থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আম চাষীদের অভিযোগ এবছর আমের আগাম মুকুল আসায় দ্রুত আম পাকতে শুরু করেছে। পাঁকা আম গাছে ধরে রাখা যায় না। তাই ৮ এপ্রিল থেকে জেলার বাজারের পাকা আম উঠতে শুরু করেছে। ঢাকার শতাধীক ও সাতক্ষীরার সহ¯্রাধীক পাইকারী আম ব্যবসায়ী এখন ব্যস্ত সময় পার করছে আম প্রকিয়াজাত করণে। চলতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার আম ক্রয়-বিক্রয় হবে বলে আম ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তবে বাজার মনিটার ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বীগ্ন ব্যবসায়ীরা।

আমচাষীরা বলছে,এ বছর গরমের তীব্রতায় আগেভাগেই আম পেকেছে। শুক্রুবার সাতক্ষীরার বড় বাজারে গিয়ে সেই সত্যতা মিলল। বাজার জুড়ে আম। সারি সারি ভটভটি ও ভ্যান আম নিয়ে ছুটছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে সাতক্ষীরার বাজারের গোপালভোগ ও গোবিন্দ ভোগ আম উঠতে শুরু করেছে।

কুয়াশা ও ঝড় বৃষ্টির পর এবছর জেলায় আমের উৎপাদন কম হয়েছে । এর পরও চলতি মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও জেলা থেকে প্রায় ১০০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিরা।

বড় ধরণের কোন পাইকারী বাজার না থাকায় সুলতানপুর বড় বাজারের দীর্ঘ জান-জটের কবলে পড়তে হচ্ছে জনসাধারণকে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা বড়বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে মন্টু মিয়ার জমি ইজারা নিয়ে আম প্রক্রিয়া জাতের কাজ করছে। অর্ধশাধিক ব্যবসায়ী জমি ইজার নিয়ে আড়ত ঘর তৈরি করেছে। এখানে প্রতিদিন দুইশতাধী শ্রমিক আমের ক্যারট করে ট্রাক সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

আবার জেলার অনেক আম ব্যবসায়ী বাজারের আড়তদারদের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আড়তদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ব্যবসা করার কারণে বাগানের সমস্ত আম উঠার পর আড়তদারদের কাছে সেই আম বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়। ফলে সিন্ডিকেটের কবলে পড়তে হয় জেলার গোটা আম ব্যবসায়ীদের।

একটি আম উৎপান থেকে চুড়ান্ত ভোগ পর্যনমশ কয়েকবার হাত বদল হয়। এতে আমের দামকয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। শুধু আড়তে আম উঠানোর করণে আড়তদারদের শতকরা আট টাকা হারে খরচ দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, সাতক্ষীরাতে যে আমের মণ ২ হাজার টাকা ঢাকাতে তা বেড়ে দাড়ায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আবার জেলার গ্রাম পর্যায়ে আমের মণ ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় জেলার পাইকারী বাজারে তা ২ হাজার থেকে ২২ শত টাকা। ফলে প্রকৃত চাষীরা আমের ন্যর্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

আম ব্যবসায়ি জালেম খা। শহরের ৫নং ওয়ার্ডে মিয়াসাবের ডাঙ্গা এলাকার এক জন আম ব্যবসায়ি। তিন লক্ষ টাকা দাদন নিয়ে তিনি কয়েকটি আমবাগান কিনেছেন। কিন্তু সম্প্রতি সাতক্ষীরার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে তার বাগানের বেশির ভাগ আমনষ্ট হয়েছে। এখন সে পথে বসার উপক্রম। ক্ষতি পূরণের দাবী তার।
সদরের লাবসা এলাকার মথুরাপুর গ্রামের পুরুষ্কারপ্রাপ্ত আমী চাষী জাহাঙ্গীর আলী। ইউরোপের বাজার ধরার জন্য তার ৫শ আম গাছ প্রস্তুত। আমের ফলনও ভাল। সরকারী ভাবে পৃষ্টপোষকতার দাবী তার।

কয়েকজন আম চাষীর সাথে কথা হয়। তারা জানান জেলাতে আমের কোনো নিজস্ব বাজার নেই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কানসার্ট, বেলতলাসহ দেশের বিভিন্ন আম উৎপাদনকারী স্থানে আমের নিজস্ব অস্থায়ী বাজার বসে। চাষীরা সেখানে তাদের আম বিক্রি করার সুযোগ পান। সুলতানপুর বড় বাজারের মুখিয়ে থাকা ফড়িয়ারা জোর করে কৃষকের আম নিয়ে নেয়। ন্যায্য মূল্য দুরের কথা তারা প্রতি মন আমে পাঁচ কেজি ঢল বাদ দেয়। ওজনেও ফাঁকি দেয় উল্লেখ করে তারা বলেন আড়তদার আম বিক্রির সুযোগ নিয়ে প্রতি লাখ টাকায় দশ হাজার থেকে পনের হাজার টাকা মুনাফা লুটে নেয়।

একইভাবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া বিদেশে সাতক্ষীরার আম বাজার ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তারা আরও বলেন চাষী কখনও নিজের উৎপাদিত আমে বিষ প্রয়োগ করে ন। অথচ বিষযুক্ত আম ধরা পড়লে প্রশাসন আম নষ্ট করে আমের সাজা দেয় , যারা অপরাধ করলো তাদের সাজা দেয় না। তাদের জেল জরিমানা করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন আম নষ্ট করলে চাষীর বুক ফেঁটে যায়।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, সাতক্ষীরার আম গুণে-মানে সুস্বাদু। অন্যান্য জেলার থেকে সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এ জেলার মাটি আম চাষের উপযোগী। বিগত বছর গুলোর মতো এবছরর এখানকার আম ইউরোপে রফতানি হবে। যে কারণে টার্গেটকৃত বাগান পরিচর্যা করা হচ্ছে বিদেশে আম পাঠানোর জন্য। তিনি আরো জানান চলতি মাসের, ১৫ তারিখ থেকে গোবিন্দভোগ, ২২ তারিখের পর থেকে হিমসাগর ও ২৯ তারিখের পর থেকে ল্যাংড়া এবং ৮ জুন থেকে আ¤্রপালি আম পাড়ার জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, সাতক্ষীরার আম সারা দেশে সুখ্যাতি রয়েছে। সুনাম ক্ষুণœ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। –আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ১০/০৫/১৯
.

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।