ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ ফেনীর আলোচিত ঘটনা সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলায় সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আড্ডায় প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে রংপুরবাসী। ওসি মোয়াজ্জেমকে রংপুর ডিআইজি অফিসে সংযুক্তি করায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে রংপুরবাসী।
এমন আদেশের ফলে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার পুণ্যভূমি রংপুরে নুসরাত হত্যার সাহায্যকারী মোয়াজ্জেমের ঠাই হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন রংপুরের ছাত্র-শিক্ষকসহ সচেতন মহল।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে বদলি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা।
এদিকে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করার প্রতিবাদে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর লালবাগ মোড়ে জুতা প্রদর্শন করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ল ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে রংপুর থেকে প্রত্যাহার এবং স্থায়ী চাকরিচ্যুত করার দাবিতে শিক্ষার্থীরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে লিখেছেন, ‘এর আগে বিতর্কিত শুশান্ত পালকেও ওএসডি করে রংপুরে পাঠানো হয়েছিল। সোচ্চার হউন, প্রতিবাদ হবেই। বেগম রোকেয়ার পুন্যভুমি রংপুর,আর এই রংপুরে নারী দুর্বলতা নিয়ে লাঞ্ছনাকারী ওই কলংকিত ওসি মোয়াজ্জেম রংপুর রেঞ্জে বদলি এসেছে! সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমরা রংপুরবাসী তাকে রংপুর বিভাগে দেখতে চাই না। দয়া করে আপনারা মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার রংপুরকে নোংরাদের এনে কলংকিত করবেন না। রংপুর বিভাগ বাসী সকলেই সোচ্চার হউন এবং হউক প্রতিবাদ।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য আশিকুন নাহার চৌধুরী টুকটুকিও একই রকম স্টাটাস দিয়েছেন।
শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদের নেতা মাসুদ মোন্নাফ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু নির্বাচন গবেষণায় নিয়োজিত নিয়মিত অনুপস্থিত উপাচার্য। আবারো অতিব্যস্ত/অচল জিনিসকে রংপুর বিভাগে দিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবেন না। উত্তরবঙ্গের মানুষের সরলতা অনেকটা বেশি। ওসি মোয়াজ্জেম বেইমানি করেছে তার মহান পেশার সঙ্গে।’
রংপুরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এমন হাজারো স্ট্যাটাস দিয়ে এই আদেশের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এবিষয়ে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মোয়াজ্জেম হোসেন আপাতত বেতন-ভাতা ও পদ অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। শুধু নিয়ম অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন।
২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা রাফির শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রাফি মারা যান।
রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল ডিআইজি এসএম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ২ মে প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে জমা দেয়।
ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল ও এসআই ইউসুফের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনের
সুপারিশ পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিট অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ফেনীর পুলিশ সুপারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওসি মোয়াজ্জেমকে রংপুরে বদলির প্রতিবাদে ‘জুতা প্রদর্শন’
ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পরে তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে জুতা প্রদর্শন করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার নগরীর লালবাগ মোড়ে ওসি মোয়াজ্জেমকে রংপুর রেঞ্জ থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং স্থায়ী চাকরিচ্যুত করার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আয়োজনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনটির রংপুর বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক রায়হান শরীফের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার পূণ্যভূমি রংপুরে নুসরাত হত্যার সাহায্যকারী মোয়াজ্জেমের ঠাঁই হবে না।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে রংপুর রেঞ্জ থেকে প্রত্যাহার, স্থায়ী চাকরিচ্যুত এবং হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে জুতা প্রদর্শন করে নারী নির্যাতন ও হত্যাকারীদের সহযোগী ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।