আমার মেয়েকে নিয়ে সিনেমা বানাবেন না: নুসরাতের মা

ক্রাইমবার্তা রিপোট      ফেনীর সোনাগাজীতে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার বলেছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আমার মেয়ে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন। নুসরাত শহীদ হয়ে গোটা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছে। সে কবরে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছে। সিনেমা নাটক বানিয়ে তাকে দয়া করে দোজখে নিবেন না।

তিনি বলেন, শুনছি কেউ নাকি, আমার মেয়েকে নিয়ে সিনেমা ও নাটক বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। দয়া করে আমার মেয়েকে নিয়ে কেউ সিনেমা বা নাটক বানাবেন না। আমার মেয়ে একটি নিষ্পাপ ফুল। এই ফুলকে কষ্ট দিবেন না। আমরা অর্থের দিক দিয়ে গরিব হতে পারি; কিন্তু ধর্মের দিক দিয়ে আমরা গরিব নই। আমার মেয়েকে প্রথমে নুরানী মাদ্রাসায়, পরে মহিলা মাদ্রাসায় এবং সেখান থেকে দাখিল পাস করার পর সোনাগাজী মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। নুসরাতের বাপ, দাদা, চাচা ও ভাই সবাই আলেম। দুনিয়াতে কিছু না পেলেও আখেরাতে আমার মেয়ে শহীদি মর্যদা পাবে।

নুসরাতের পরিবারটি কেমন আছে জানতে গেলে শুক্রবার বিকালে নুসরাত জাহান রাফির মা এই প্রতিবেদককে এইসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আমরা ভাল আছি। আমরা জীবিত অবস্থায় নুসরাতের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চাই। তাহলে আমার মেয়েটির আত্মা শান্তি পাবে।

উল্লেখ্য, নিহত নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। এই ব্যপারে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে পাশের একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।

কয়েক দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ২২জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার জানিয়েছেন ২৭মে’র মধ্যে এই মামলার চার্জশীট প্রদান করা হবে। এ ঘটনায় ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগের পর দায়ীত্বে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল আহম্মদ ও মোহাম্মদ ইউছুপকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও ইংরেজি প্রভাষক আবছার উদ্দিনের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।