প্রাইমারির প্রশ্ন ফাঁসে ধরাছোঁয়ার বাইরে সাতক্ষীরার প্রভাবশালি নেতারা

নিজস্ব প্রতিনিধি: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের সাথে মূল প্রশ্নপত্রের হুবহু মিলও পাওয়া গেছে। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং র‌্যাব-৬ এর সদস্যরা শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় অভিযান চালিয়ে পরীক্ষার আগেই যে প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেছিলো তার সাথে মূল প্রশ্নপত্রের মিল খুঁজে পেয়েছে।
জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ৮০টি প্রশ্ন ছিলো। পরীক্ষায় আগেই র‌্যাব-৬ ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই ) কলারোয়া থেকে যে প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেছিলো তাতেও ৮০টি প্রশ্নই ছিলো। ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের সাথে পরীক্ষার আগেই উদ্ধার হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিক চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত। এদের মধ্যে শুক্রবার সকালে ২৯ জনের একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়লে ২১জনের সাজা হয়েছে। ৮জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যরা থেকে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এসব চক্র কৌশলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, কলারোয়া থেকে এ চক্রটি ধরা পড়লেও জেলা সদর ও অন্যান্য উপজেলায়ও চক্রটি সক্রিয় কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সন্দেহের তীর জেলার সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের দিকে এমন তথ্য দিয়ে সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার ছেলে একটি চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়। ওই নেতার ছেলে ঢাকাতে থাকেন। কয়েক দিন আগে তিনি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরাতে এসে অবস্থান নিয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায় গোপনে এজেন্ট নিয়োগ করে তাদের হাতে পশ্নপত্র তুলে দিয়েছেন। আর ফাঁসকৃত এসব প্রশ্ন মূল প্রশ্নের সাথে হুবহু মিল ছিলো। তবে চক্রটি রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার একেবারেই বাইরে।
সাতক্ষীরা জেলা শহরের সুলতানপুরে বসবাস করেন এমন একজন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক (হেড টিচার) প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনার সাথে জড়িত বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জেলা শহরে অবস্থিত ওই কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী হাসেমি পরিবারের সদস্য তিনি। জানা গেছে, মাদকাসক্ত ওই কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক (প্রশ্নপত্র ফাঁস করে) প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্ধকোটি টাকা।
এছাড়া সাতক্ষীরা শহরের উত্তর কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফখরুল ইসলাম অন্য একটি চক্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনিও কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব চক্রের হোতাদেরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এর সাথে জড়িত শীর্ষ রাঘোববোয়ালরা বেরিয়ে আসবে।
সাতক্ষীরা নাগরিক সমাজের দাবি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াসি অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, সাতক্ষীরায় প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় যে ২১ জনকে ধরা হয়েছে তাদের প্রত্যেককে ২ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। এসব চক্রের সাথে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে কাজ করছে।

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।