ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় হতবাক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানেও প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে ঢাকার একটি সূত্রের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ২৪ মে ঢাকায় পরীক্ষা না থাকলেও ঢাকায় বসেই কঠোর গোপনীয়তায় উচ্চপর্যায়ের কমিটি প্রশ্নপত্র তৈরি করে। কে বা কারা প্রশ্ন ফাঁস করল সে উত্তর জানতে মাঠে নেমেছে মন্ত্রণালয়।
শুরু হয়ে গেছে গোয়েন্দা তৎপরতা। প্রযুক্তির সাহায্যে মাঠে র্যাবও। সন্দেহের তালিকায় প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে প্রশ্ন বিতরণের সঙ্গে জড়িতরাও। এছাড়া সাতক্ষীরায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এদিকে আগামী ৩১ মে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা হবে। পরীক্ষাটি সুষ্ঠুভাবে নিতে একাধিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা ছাড়াও আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কানে কাপড় বেঁধে পরীক্ষার হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা ছাড়াও কারিগরি ও প্রযুক্তিগত আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, গত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি কেবল সাতক্ষীরায় ঘটেছে। কিন্তু গ্রেফতারকৃতরা বলছেন, সেখানে প্রশ্ন গেছে ঢাকা থেকে। আমরা জানতে চাই ঢাকার সেই ব্যক্তিটা কে? আমাদের কাজ হচ্ছে মূল হোতাকে খুঁজে বের করা। জানতে চাই সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে কিনা? র্যাবকে আমরা অনুরোধ করব। তিনি বলেন, সাতক্ষীরার ঘটনায় আমরা বিস্মিত। এমন ঘটনার পর আমি নিজেকেই প্রশ্ন করছি- ‘আমি নিজেই জড়িত কিনা’। এ তথ্য বের করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরের পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠুভাবে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষাটি আমরা ‘জিরো রিস্কে’ (ঝুঁকিমুক্ত) নিয়ে যেতে চাই।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষা ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর প্রথম কর্মদিবসে রোববার একাধিক বৈঠক হয়েছে। একটি হয়েছে বুয়েটে। খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বুয়েটের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সঙ্গেও। এ সময় তিনি প্রশ্নপত্র পাঠানোর প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে কথা বলেছেন। পাশাপাশি পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন আরও সুরক্ষিত করার প্রযুক্তি সম্পর্কেও আলোচনা করেন তিনি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৩১ মের পরীক্ষা সামনে রেখে ২৬ জেলার ডিসিকে বিশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, জেলার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ তৎপর রাখতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ কাজের জন্য আগে গঠিত কমিটি পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। এই কাজে ইতিবাচক ভাবমূর্তিসম্পন্ন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া কারিগরি ও প্রযুক্তিগত কাজে কোনো শিথিলতা বা দুর্বলতা আছে কিনা তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতে বুয়েটকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপার কাজে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে আরও সতর্কতা গ্রহণ, পরীক্ষার্থীদের নজরদারি, নকল রোধে বোরকা পরিহিত পরীক্ষার্থীদের কান খোলা রাখার ব্যবস্থাসহ আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা ১১ জেলায় হয়। সেদিন সাতক্ষীরায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২৯ জনকে আটক করা হয়েছিল। যুগান্তর