সাতক্ষীরা পৌরসভায়ও টেন্ডার ছাড়াই ৪৬ লাখ টাকার দুটি প্রকল্প ভাগ-বাটোয়ারা

নিজস্ব প্রতিনিধি: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ বরাদ্দ। অথচ ঠিকাদারই জানেন না? সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করেনি তারপরও তাদের নামে ৪৬ লাখ টাকার দুটি প্রকল্প দিয়ে যেন-তেনভাবে কাজ করে টাকা আত্মসাতের পায়তারা চালাচ্ছেন।
সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে নিজস্ব হতবিলের আওতায় ‘পৌরসভার তৃতীয় তলা মেয়র মহোদয়ের কক্ষ অভ্যন্তরীণ সর্জ্জিতকরণ ও বিভিন্ন শাখায় আসবাবপত্রসহ ৩টি ফগার মেশিন সরবরাহ বিষয়ে দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও সেটা না করে গোপনে মিমো এন্টারপ্রাইজ স্বত্ত্বাধিকারী মীর মোশারফ হোসেন মন্টু ও আব্দুর রাজ্জাক ও রাশেদুজ্জামানের নামে দরপত্র ক্রয় করে পৌর কর্তৃপক্ষ। পরে তাদের মধ্যে থেকে মিমো এন্টারপ্রাইজকে দরপত্র জমা দেখিয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়। অথচ এ প্রতিষ্ঠান জানেই না। আরো একটি ইজিপি টেন্ডার সানি নামের একজন ঠিকাদারের নামে দরপত্র জমা দেওয়া হলে তিনি জানেন না বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মাহমুদ পাপা বলেন, পৌরসভা জনগণের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পৌর মেয়র যা ইচ্ছা তাই করছে। বিদেশী সংস্থা থেকে টাকা আসছে সেটার জন্য টেন্ডার হবে। কিন্তু তিনি তা না করে গোপনে টেন্ডার করে টাকা ভাগ ভাটোয়ারার চেষ্টা করছেন। এই টেন্ডারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরপত্র বিক্রির সুযোগ হলে সরকার কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব পেতো। একই সাথে সেই সুযোগ সরকারকে না দিয়ে সমদরে ইচ্ছে মাফিক কাগজ কলমে টেন্ডার দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত করে টাকা আত্মসাতের পায়তারা চালাচ্ছেন পৌর মেয়র ও মাথা মোটা এক জনপ্রতিনিধি ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। যে সব কাউন্সিলর কিছু বলতে পারেন না, তাদের ওয়ার্ডে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়। মেয়র সাহেবের ওয়ার্ডে প্রতিবার বেশি বরাদ্দ দেয়। তার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। সচিবকে মর্যাদা দেওয়া হয় না। প্রকৌশলীকেও মর্যাদা দেওয়া হয় না। ওনি (মেয়র) যা ইচ্ছা তাই করেন। ওনার মদপুষ্টদের মাথায় তুলে রেখেছেন। ওনার (মেয়র) দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি সকল অন্যায় কাজে প্রতিবাদ করি, সেজন্য তার কাছে খারাপ।
পৌর প্যানেল মেয়র মো. সেলিম হোসেন বলেন, আমি টেন্ডার কমিটির আহবায়ক। আমাকে কখনও এই সক্রান্ত সভায় ডাকা হয় না। ওনার (মেয়র) ইচ্ছামতো কাজ করেন। ১৩ লাখ টাকার যে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু জানতাম না। পরে আমার কাছে কাজের ফাইনালের জন্য স্বাক্ষর করতে আনে, তখন আমি বুঝতে পারি। সেখানে আমি স্বাক্ষর না করে পুনরায় টেন্ডার দিতে বলেছি। কিন্তু যেসব ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া হয়েছে তারাও কিছু জানেন না। পরে তারা আমার কাছে এসে স্বীকার করেছেন। মেয়র অন্য লোকের নামে কাজ নিয়ে পরে দায়সারাভাবে কাজ করে তিনি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা টাকা আত্মসাতের পায়তারা করছিলেন। পৌর সভার অনেক ঠিকাদার আছে যারা প্রতি বছর তাদের লাইসেন্স নবায়ন করে এই টেন্ডারের মাধ্যমে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে এবং পৌরসভা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি টেন্ডার কমিটির আহবায়ক হয়েও ৪৬ লাখ টাকার টেন্ডার হয়েছে সেই বিষয়ে আমি কিছুই জানতে পারিনি। সকল কাজ শেষ করে আমার স্বাক্ষর করার সময় আমি জানতে পেরেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক কয়েকজন কমিশনার বলেন, তাজকিন আহমেদ চিশতি নামে মাত্র মেয়র পৌর সভায় চলে সাতক্ষীরার মাথা মোট এক জনপ্রতিনিধি এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা জাদুর বলে। তাদের ইশারা ছাড়া পৌর মেয়রের কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই।

Check Also

সাতক্ষীরায় ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে এসময় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।