সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসি হামলায় সভাপতি সম্পাদকসহ ১০ সিনিয়র সাংবাদিক আহত: ডিসি -এসপির নিন্দা :

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:   সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাব দখলে নিতে হামলা চালিয়েছে  সন্ত্রাসীরা  নেতাকর্মীরা। হামলায় প্রেস ক্লাবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।  বেলা ১২টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত সভাপতিসহ দুই জনের অবস্থা গুরুতর। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা স্থানীয় এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির সমর্থক।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে শতাধিক সরকার দলীয় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের কক্ষ থেকে টেনে হেঁচড়ে বের করে কিলচড় ঘুষি মারতে মারতে হামলা চালায়।
লাঠিসোটা হকিস্টিক লোহার রডসহ ঘন্টাব্যাপী হামলায় প্রেসক্লাব সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদসহ ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বাইরে বহু সংখ্যক দাগী সন্ত্রাসী মাদকসেবী ও চোরাচালানিকে মহড়া দিতে দেখা গেছে। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির দুই ভাই মীর মাহমুদ হাসান লাকি ও মাহি আলমকেও ওই সন্ত্রাসীদের সাথে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান দুপুর ১২ টার দিকে শতাধিক সন্ত্রাসী বীরদর্পে প্রেসক্লাব ভবনে ঢুকে হৈ হুল্লোড় করতে করতে প্রথমেই সিসিটিভি ক্যামেরার কানেকশন টেনে ছিড়ে ফেলে। এরপরই তারা লাটিসোটা লোহার রড নিয়ে হামলা করে তাদের মারধর করতে থাকে। সাংবাদিকরা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করার পরও বারবার টেলিফোন পেয়েও মাত্র ১০০ গজ দুরে থাকা সাতক্ষীরা থানা পুলিশ আসতে দেরি করে ফেলে। ততক্ষনে রক্তাক্ত অবস্থায় সাংবাদিকরা আহাজারি করতে থাকেন।
সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় আহত হন দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাতবারের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি চ্যানেল আইয়ের জেলা প্রতিনিধি প্রেসক্লাবের সাবেক পাঁচবারের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সময় টিভির জেলা প্রতিনিধি মমতাজ আহমেদ বাপী, মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুল জলিল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাতবারের সাধারন সম্পাদক আবদুল বারীসহ ১০ জন সিনিয়র সাংবাদিক।
এদিকে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল , পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান , ওসি মোন্তাফিজুর রহমান এবং উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রেসক্লাবে আসেন। তারা এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন একটি মহল সাতক্ষীরায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায়। তারাই নেপথ্যে থেকে ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে এই হামলা চালিয়েছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অভিন্ন ভাষায় বলেন ‘ সাতক্ষীরার মত শান্ত জেলাকে যারা অশান্ত করে ফায়দা লুটতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে’। তারা বলেন সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রেসক্লাবে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া আক্রান্ত সাংবাদিকরা মামলা করলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রেসক্লাবে কেবলমাত্র সাধারণ ভোটার সদস্য ও সহযোগী সদস্য ছাড়া আর কেউ বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে পুলিশ ঘোষনা দিয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সব সাংবাদিক। তারা বলেন ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই প্রথম রক্তপাতের ঘটনা ঘটলো। সাধারন সাংবাদিকরা হামলাকারী ও হামলার নেপথ্য গডফাদারদের চিহ্নিত করেছেন দাবি করে বলেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে যেসব সাংবাদিক এই হামলার সাথে জড়িত তারাও রক্ষা পাবে না বলে জানানো হয়। আজ শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এই সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে প্রেসক্লাব।
উল্লেখ্য গত ২০ মার্চ অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব। এ ঘটনার আড়াই মাস পর গত বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। এর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো। –আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা / ৩০/০৫/১৯

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।