ঈদুল ফিতরঃ ঈদুল ফিতর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। ঈদ ও ফিত্র দুটিই আরবী শব্দ। ঈদ এর অর্থ উৎসব বা আনন্দ। ফিত্র এর অর্থ বিদীর্ণ করা, উপবাস ভঙ্গকরণ, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া। পবিত্র রমযান মাসে সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর শাওয়াল মাসের ১লা তারিখে সিয়াম ভঙ্গ করে স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরে যাওয়ার আনন্দময় দিবসটি ঈদুল ফিত্র নামে অভিহিত। ধর্মীয় পরিভাষায় একে ইয়াউমুল জাএজ (অর্থঃ পুরস্কারের দিবস) হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সাথে পালন করে থাকে।
তারিখ ও ইতিহাসঃ হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। তবে এই পঞ্জিকা অনুসারে কোনও অবস্থাতে রমজান মাস ৩০ দিনের বেশী দীর্ঘ হবে না। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের প্রারম্ভ গণনা করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় লাইলাতুল জায়জা (অর্থ: পুরস্কার রজনী) এবং চলতি ভাষায় “চাঁদ রাত” বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ হয়, এই কথা থেকেই চাঁদ রাত কথাটির উদ্ভব। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেয়া ইসলামী বিধান। আধুনিক কালে অনেক দেশে গাণিতিক হিসাবে ঈদের দিন নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশে ঈদের দিন নির্ধারিত হয় দেশের কোথাও না-কোথাও চাঁদ দর্শনের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে। দেশের কোনো স্থানে স্থানীয় ভাবে চাঁদ দেখা গেলে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে ঈদের দিন ঠিক করা হয়। মুসলমানদের জন্য ঈদের পূর্বে পুরো রমজান মাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম।
পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে যে সব প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হয় সেগুলির মধ্যে ঈদুল ফিত্র হচ্ছে কনিষ্ঠতম। এ মহান পুণ্যময় দিবসের উদযাপন শুরু হয় আজ থেকে মাত্র ১৩৮০ সৌর বছর পূর্বে। ইসলামের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মদীনাতে হিজরত-এর অব্যবহিত পরেই ঈদুল ফিত্র উৎসব পালন শুরু হয়। হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস থেকে জানা যায়, নবী করিম (সা.) মদীনা আগমন করে দেখলেন মদীনাবাসীগণ দুই দিবসে আনন্দ-উল্লাস করে থাকে। মহানবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এ দিবসদ্বয় কি? ওরা বলল, জাহেলী যুগ থেকেই এ দুটি দিবসে আনন্দ-উল্লাস করে থাকি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে উক্ত দিবসদ্বয়ের পরিবর্তে উত্তম দুটি দিবস দান করেছেন। দিবসদ্বয় হলো ঈদুল আযহার দিবস ও ঈদুল ফিত্রের দিবস। (সুনান আবূ দাউদ, কিতাবুল ঈদায়ন)’’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পারসিক প্রভাবে শরতের পূর্ণিমার নওরোয নামে এবং বসন্তের পূর্ণিমার মিহিরজান নামে উৎসব দুটি মদীনাবাসীরা বিভিন্ন ধরনের আনন্দ-আহ্লাদ, খেলাধুলা ও কুরুচিপূর্ণ রংতামাশার মাধ্যমে উদযাপন করত। উৎসব দুটির রীতি-নীতি, আচার-ব্যবহার ছিল সম্পূর্ণরূপে ইসলামের আদর্শ পরিপন্থী। জরথুস্ত্র প্রবর্তিত নওরোয ছিল নববর্ষের উৎসব। কিন্তু এটি ছয়দিন ব্যাপী উদযাপিত হতো যার মধ্যে শুধুমাত্র একটি দিবস নওরোয-এ-আম্মা বা কুসাক ছিল সাধারণ মানুষের জন্য নির্দিষ্ট। অন্যান্য দিনগুলি ছিল সম্ভ্রান্ত ও উচ্চবিত্তের ব্যক্তিবর্গের জন্য সুনির্দিষ্ট। অনুরূপভাবে ৬ (ছয়) দিনব্যাপী মিহিরজান অনুষ্ঠানেও শুধুমাত্র একটি দিন সাধারণ, দরিদ্র মানুষেরা উপভোগ করতে পারত। শ্রেণি বৈষম্য, ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে কৃত্রিম পার্থক্য, ঐশ্বর্য-অহমিকা ও অশালীনতার পূর্ণ প্রকাশে কলুষিত ছিল এ দুটি উৎসব।
ইসলামী আদর্শে উজ্জীবিত আরববাসীরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশে শুরু করল ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহা উৎসব উদযাপন। জন্ম নিল শ্রেণি বৈষম্য বিবর্জিত, পঙ্কিলতা ও অশালীনতামুক্ত সুনির্মল আনন্দে ভরা সুস্নিগ্ধ, প্রীতি-সঘন মিলন উৎসব ঈদুল ফিত্র।
উল্লেখ্য যে, ইসলাম ধর্মীয় উৎসব বলে ঈদুল ফিত্র প্রধানত মুসলমানদের মধ্যেই সীমিত থাকে। তবে, ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম এবং ঈদের অর্থ আনন্দ বিধায় প্রকারান্তরে ঈদ সকল মানবের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে।
ঈদের নামাযঃ ঈদের দিন ভোরে মুসলমানরা মহান আল্লাহর ইবাদত করে থাকে। ইসলামিক বিধান অনুসারে ২ রাকাত ঈদের নামাজ ৬ তাকবিরের সাথে ময়দান বা বড় মসজিদে পড়া হয়। ফযরের নামাযের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ঈদুল ফিতরের নামাযের সময় হয়। এই নামায আদায় করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব। ইমাম কর্তৃক শুক্রবারে জুম্মার নামাজের পূর্বে খুৎবা (ইসলামিক বক্তব্য) প্রদানের বিধান থাকলেও ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে তা নামাজের পরে প্রদান করার নিয়ম ইসলামে রয়েছে। ইসলামের বর্ননা অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে খুৎবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত ; তা শ্রবণ করা নামাযীর জন্য ওয়াজিব। সাধারণত: ঈদের নামাজের পরে মুসলমানরা সমবেতভাবে মুনাজাত করে থাকে এবং একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করে ঈদের সম্ভাষণ বিনিময় করে থাকে। ঈদের বিশেষ শুভেচ্ছাসূচক সম্ভাষণটি হলো, “ঈদ মুবারাক”। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া নামক স্থানে।
নামাযে মহিলাদের অংশগ্রহণঃ বেশিরভাগ ইসলামী চিন্তাবিদ মহিলাদের ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে মহিলাদের ঈদের নামাযে অংশগ্রহণ করার হার তুলনামূলকভাবে কম।
ঈদের নামাযের সময়ঃ সূর্য দিগন্ত থেকে আনুমানিক ২ মিটার উচ্চতায় পৌঁছালে ঈদের নামায পড়া হয়। জোহর এর নামাযের আগেই ঈদের নামায আদায় করতে হয়। সুন্নাত হিসেবে ঈদুল ফিতরের নামায কিছুটা দেরি করে এবং ঈদ–উল–আযহার নামায দ্রুত আদায় করা হয়।
প্রস্তুতিঃ মুসলমানদের বিধান অনুযায়ী ঈদের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার আগে একটি খেজুর কিংবা খোরমা অথবা মিষ্টান্ন খেয়ে রওনা হওয়া সওয়াবের কাজ। ঈদুল ফিতরের ব্যাপারে ইসলামী নির্দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে গোসল করা, মিসওয়াক করা, আতর-সুরমা লাগানো, এক রাস্তা দিয়ে ঈদের মাঠে গমন এবং নামাজ-শেষে ভিন্ন পথে গৃহে প্রত্যাবর্তন। এছাড়া সর্বাগ্রে অযু-গোসলের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার বিধানও রয়েছে। ইসলামে নতুন পোশাক পরিধান করার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বিভিন্ন দেশে তা বহুল প্রচলিত একটি রীতিতে পরিনত হয়েছে।
ফিৎরাঃ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের রমযান মাসের রোযার ভুলত্রুটির দূর করার জন্যে ঈদের দিন অভাবী বা দুঃস্থদের কাছে অর্থ প্রদান করা হয়, যেটিকে ফিৎরা বলা হয়ে থাকে। এটি প্রদান করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব। ঈদের নামাজের পূর্বেই ফিৎরা আদায় করার বিধান রয়েছে। তবে ভুলক্রমে নামাজ পড়া হয়ে গেলেও ফিৎরা আদায় করার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে। ফিৎরার ন্যূনতম পরিমাণ ইসলামী বিধান অনুযায়ী নির্দ্দিষ্ট। সাধারণত ফিৎরা নির্র্দিষ্ট পরিমাণ আটা বা অন্য শস্যের (যেমনঃ যব, কিসমিস) মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। সচরাচর আড়াই সের আটার স্থানীয় মূল্যের ভিত্তিতে ন্যূনতম ফিৎরার পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। স্বীয় গোলাম-এর ওপর মালিক কর্তৃক ফিৎরা আদায়যোগ্য হলেও বাসার চাকর/চাকরানি অর্থাৎ কাজের লোকের ওপর ফিৎরা আদায়যোগ্য নয় ; বরং তাকে ফিৎরা দেয়া যেতে পারে। ইসলামে নিয়ম অনুযায়ী, যাকাত পাওয়ার যোগ্যরাই ফিৎরা লাভের যোগ্য।
ঈদ উৎসবঃ বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম-প্রধান দেশে ঈদুল ফিতরই হলো বৃহত্তম বাৎসরিক উৎসব। বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষে সারা রমজান মাস ধরে সন্ধ্যাবেলা কেনাকাটা চলে। অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোষাক কেনা হয়। পত্র-পত্রিকাগুলো ঈদ উপলক্ষে ঈদ সংখ্যা নামে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকদিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করে। ঈদের দিন ঘরে ঘরে সাধ্যমত বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। ঈদের দিনে সেমাই বা অন্যান্য মিষ্টি নাস্তা তৈরি করার চল রয়েছে। বাংলাদেশের শহরগুলো হতে ঈদের ছুটিতে প্রচুর লোক নিজেদের আদি নিবাসে বেড়াতে যায়। এ কারণে ঈদের সময়ে রেল, সড়ক, ও নৌপথে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।
ঈদের গানঃ ঈদের চাঁদ দেখার সময়কার আনন্দমুখর পরিবেশকে নিয়ে লেখা ও সুর করা কাজী নজরুল ইসলামের “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” গানটি বেশ জনপ্রিয়। ঈদের দিনে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এই গানটি বাজানো হয়।
ঈদের গুরুত্বঃ আমাদের জীবনে ঈদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ঈদ এলেই আমরা ব্যস্ত হয়ে উঠি কেনাকাটায়। সামর্থ্যানুযায়ী চলে কেনাকাটা। বিত্তবানদের অনেকেই কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটান। অবশ্য এটা ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার। আমাদের সমাজে সুবিধাবঞ্চিত, আশ্রয়হীন ও অসহায় মানুষের সংখ্যা অগণিত। তাদের প্রতি আমাদের রয়েছে সামাজিক, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।
অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোঃ ঈদে অসহায়দের কথা ভাবা উচিত। বিশেষ করে ভাবতে হবে সুবিধাবঞ্চিত অসহায় শিশুদের কথা, যাদের কাছে একটি নতুন পোশাক অপরিসীম আনন্দের উৎস। বিত্তবানদের মধ্যে অনেকেই এ ব্যাপারে উদারহস্ত হলেও অনেকে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। যে রাস্তা দিয়ে আমরা কেনাকাটা করতে যাই, তারই পাশে একটু সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত শিশু। কী নির্মম নিয়তি! আমাদের মধ্যে কেউ যখন মনের খায়েশ মেটাতে ব্যস্ত, তখন একমুঠো খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে কেউ কেউ। আমরা তাদের সারা বছরের বস্ত্রের সংকুলান হয়তো করতে পারব না, কিন্তু ঈদকে উপলক্ষ করে (যাদের সামর্থ্য আছে) অন্তত একজন অসহায় শিশুর পাশে দাঁড়াতে তো পারি।
নিকট আত্মীয়কে সাহায্য করাঃ আমাদের নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশীদের মধ্যেও থাকতে পারে এমন অসহায় সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও মানুষ। তাদের কথাও ভেবে দেখতে হবে। আমাদের একটু সুদৃষ্টি অসংখ্য অসহায় অসহায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
তাই মুসলমানদের জীবনের ঈদের তাৎপর্য অনেক। ঈদুল ফিতরের দিনে দান–খয়রাতের মাধ্যমে পবিত্র ঈদের উৎসবকে আনন্দে উদ্ভাসিত করে তোলা। জাকাত–ফিতরার মাধ্যমে ধনী ও গরিবের মধ্যকার ভেদাভেদ দূরীভূত হয়। আর এতেই হয় মুসলিম হৃদয় উদ্বেলিত।
সামাজিক তাৎপর্য : ঈদুল ফিতরের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতায় পরস্পরের শুভেচ্ছা, আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা বিনিময়ের মাধ্যমে মানবিক ও সামাজিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা হলো ঈদুল ফিতরের সামাজিক তাৎপর্য।
অর্থনৈতিক তাৎপর্য : সমগ্র বিশ্বের প্রত্যেক মুসলমান যাতে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সেজন্য রমযান মাসে বেশি হারে দান–খয়রাত, জাকাত ও ফিতরা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এটা হলো ঈদুল ফিতরের অর্থনৈতিক তাৎপর্য।
ঈদ হোক সম্প্রীতির সেতুবন্ধঃ ধনী–গরীব, শিক্ষিত–অশিক্ষিত, সাদা–কালো নির্বিশেষে একই কাতারে মিলিত হওয়া মানবসম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন পবিত্র ঈদ। বর্তমানে ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য থেকে মানুষ অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। কলহ–বিবাদ, হিংসা–বিদ্বেষের ফলে গোটা সমাজ তলিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান ঈদ নামমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন ‘অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ ঈদের বাজারের দিকে তাকিয়ে দেখালেই বোঝা যায়; সবাই কেমন অসহনীয় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তারা অধিক মূল্যবান পোশাক–আশাকে সুসজ্জিত হয়ে সবার দৃষ্টিতে আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
ঈদের করণীয় বিষয়সমূহ: ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামাত। কিন্তু আমরা এ দিনকে নিয়ামত হিসাবে গ্রহণ করি না। এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও একটি ইবাদতে পরিণত হতে পারে।
ধনসম্পদের প্রাচুর্যে অপচয়ে মত্ত হয় এক স্তরের মানুষ এই ঈদকে কেন্দ্র করে। আর পাশের বাড়ির মানুষটি না খেয়ে থাকলেও খবর রাখে না কেউ।
তাই বিভেদ ভুলে ঈদ হোক সমতার। ঈদ হোক সম্প্রীতির; ভ্রাতৃত্বের।
শেষ করছি নিজের লেখা একটি কবিতা দিয়েইঃ
ঈদ মানে কি কেনাকাটা
হাল ফ্যাশনের স্টাইল?
জড়িয়ে গায়ে, ঘুরিয়ে মাথা
ক্লিক, ক্লিক, স্মাইল?
ঈদ মানে কি লম্বা-ছুটি
বিদেশ ভ্রমণ, ফীস্টে?
পাতায়া বীচ, সিঙ্গাপুর
মরিসাসও লিস্টে?
ঈদ মানে কি বিশাল পার্টি
ঢাকার ফাইভস্টার হোটেলে?
কিংবা রিভারক্রুজের ব্যাপার
দূরের কাছের মোটেলে?
কিন্তু ঈদের আসল মানে
ক’জন রাখে মনে?
ঈদ মানেতো অহম ভুলে
আনন্দ এক সনে।
ধনী-গরীব এক কাতারে
মন ও খুশীর টানে
হোক না এটাই সবার তরে
ঈদের আসল মানে।
(কবিতাঃ ঈদের মানে)