সাতক্ষীরা থানার সামনে চার ঘন্টা সংবাদিকদের অবস্থান

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   বিশেষ প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় মিথ্যে মামলা রেকর্ড করার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা থানার সামনে চার ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে।

আজ সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত ওই মামরার ২১ আসামীসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক সাতক্ষীরা সদর থানা চত্বরে বসে থাকেন। এ সময় সাংবাদিকরা পুলিশকে বলেন ‘থানায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আমরা ২১ জন আসামী থানায় আত্মসমার্পন করার জন্য এখনে এসেছি। বাইরে আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই। সাতক্ষীরা সদর আসনের সরকার দলীয় এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর কারনে আমরা আজ নিরাপ্তাহীনতায়। তারা আরো বলেন, গত ৩০ মে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেই হামলা মামলার অন্যতম আসামী মনিরুজ্জামান তুহিন কিভাবে এজহারভূক্ত আসামী হয়ে রোববার রাতে থানায় এসে মিথ্যে মামলা দায়ের করলো তা আমরা জানতে চাই। আমাদের গ্রেফতার করুন’।

সাংবাদিকরা এভাবে অবস্থান নেওয়ার চার ঘন্টা পর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ওই মামলা প্রত্যাহারের ঘোষনা দেওয়া হলে সাংবাদিকরা তাদের অবস্থান কর্মসূচী তুলে নেয়।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ জানায়, সাতক্ষীরা সদর আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির অসৌজন্যমূলক আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২০ মার্চ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ পরিষদের সভা করে তাকে (এমপি রবিকে) প্রেসক্লাবে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এমপি রবির পক্ষে প্রেসক্লাবের কয়েকজন সদস্য অবস্থান নিয়ে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এরই এক পর্যায় গত ২৯ মে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এমপি রবির বিরুদ্ধে অবাঞ্চিত ঘোষনার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহর করে নেয় এবং গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কার্যকলাপের অভিযোগে প্রেসক্লাবের ৪ জন সদস্যের সদস্য পদ বাতিল করে।

এ ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ গত ৩০ মে ওই চার সাংবাদিকের নেতৃত্বে বহিরাগত শতাধিক সন্ত্রাসী সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব অতর্কীত হামলা চালায়। তারা প্রেসক্লাবে সভাপতি, সম্পাদকসহ ১০ জন সিনিয়র সাংবাদিককে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এনিয়ে ঘটনার রাতেই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে সদর থানায়। ওই মামরায় ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৫০ জনকে আসামী করা হয়।

ঘটনার চারদিন পর ওই হামলা মামলার অন্যতম আসামী মনিরুজ্জামান তুহিন বাদী হয়ে গত রোববার রাতে প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাবেক দুইজন সভাপতি, সাবেক দুইজন সাধারণ সম্পাদকসহ সাতক্ষীরার ২১ জন সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা মিথ্যে মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৫, তারিখ-২-৬-১৯।

সোমবার দুপুরে মামলা রেকর্ডের এই খবর সাংবাদিকরা জানার পর তারা ফুঁসে ওঠে এবং বেলা আড়াইটার দিকে যে ২১ জনের নামে মিথ্যে মামলা রেকর্ড হয়েছে তারাসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক সাতক্ষীরা সদর থানায় গিয়ে থানার প্রবেশ মুখে মাটিতে বসে পড়েন। এ সময় তারা বলেন, আমারা আত্মসমর্পন করতে থানায় এসেছি। আমাদেরকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেন।

ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা থানার সামনে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী অবস্থান নেওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয় টার দিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইলতুৎমিশ দায়েরকৃত ওই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার ঘোষণা দিলে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা তাদের অবস্থান কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয়।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইলতুৎমিশ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গত রোববার রাতে যে মামলা হয়েছে ( সাতক্ষীরা সদর থানার মামলা নং-৫, তারিখ- ২-৬-১৯ ) এই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার / নিস্পত্তি করে নেওয়া হবে। এই মামলাটি ভ্যালুলেস একটি মামলা। মামলা প্রত্যাহারের ঘোষনা দেওয়ার পর সাংবাদিক নেতারা তাদের অবস্থান কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।