২১ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার দাবিতে থানা চত্তরে চার ঘন্টা অবস্থান, রোববারের মধ্যে নিষ্পত্তির ঘোষণায় কর্মসুচি প্রত্যাহার

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ    গত ৩০ মে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সন্ত্রাসী হামলায় আহত সাংবাদিকসহ ২১ জনের নামে মামলা করেছে জেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাতের সাবেক অর্থদাতা সন্ত্রাসী মনিরুজ্জামান তুহিন। এ মামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সোমবার বেলা ২টা ২৫ মিনিটের সময় সাতক্ষীরা সদর থানায় হাজির হয়ে মামলার আসামী সাংবাদিকরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের প্রতি আবেদন জানান। তারা থানা চত্বরে বসে পড়েন। এভাবে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা অবস্থানের পর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিশ আগামী রোববারের মধ্যে উক্ত মিথ্যা মামলা নিষ্পত্তি করার ঘোষণা দেন। এপরপরই সাংবাদিকরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এরকিছু পূর্বে মিথ্যা মামলাটির বাদী সন্ত্রাসী মনিরুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে এমপি রবির মদদপুষ্ট ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী থানা চত্বরে সাংবাদিকদের পাশেই অবস্থান নেয়। একই সময় থানার পাশের লিচুতলায় আরো ৪০/৫০জন সন্ত্রাসী অবস্থান নেয়। যদিও সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর ঐ সন্ত্রাসীরাও থানা চত্বর নির্বিঘেœ ত্যাগ করে।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন, প্রেসক্লাব সভাপতি দৈনিক কালেরচিত্রের সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি চ্যানেল আই এর আবুল কালাম আজাদ, সেক্রেটারি সময় টিভির মমতাজ আহমেদ বাপী, যুগান্তরের সুভাষ চৌধুরী, এটিএনএর এম কামরুজ্জামান, বাংলা ভিশন টিভির আসাদুজ্জামান আসাদ, মানবজমিনের ইয়ারব হোসেন, ডিবিসি টিভির জিল্লুর রহমান, মোহনা টিভির আবদুল জলিল, প্রেসক্লাব নির্বাহী কমিটির সদস্য সেলিম রেজা মুকুল, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক আশেক ই এলাহি, সমাজের কথার আমিরুজ্জামান বাবু, দৈনিক বনিক বার্তার গোলাম সরোয়ার, বাংলা ট্রিবিউনের আসাদুজ্জামান মধু, সাবেক সেক্রেটারি আবদুল বারী, যুগ্ম-সম্পাদক আবদুস সামাদ, কালের চিত্রের আশরাফুল ইসলাম খোকন, দৈনিক দক্ষিণাঞ্চলের আব্দুল গফুর প্রমুখ।
টানা চার ঘন্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎমিস সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভূঁয়া মামলাটি এই মুহূর্ত থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, প্রেসক্লাব সেক্রেটারির দেওয়া প্রথম মামলাটি তার নিজস্ব গতিতে চলবে। একই সাথে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে। এরপরই সাংবাদিকরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহমেদ ও জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু সাংবাদিকদের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি প্রকাশ করেন। একই সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করবেন বলেও জানান।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। তারা সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সাংবাদিকদের এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে রক্তাক্ত করে ফেলে। এ সময় আহত হন প্রেসক্লাব সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, মোহনা টিভির আব্দুল জলিল, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জী, সেক্রেটারি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সেক্রেটারি আবদুল বারীসহ ১০ সাংবাদিক। এ ঘটনায় ২৪ জনকে আসামি করে সাতক্ষীরা থানায় একটি মামলা করা হয়। উক্ত ঘটনার সময় সাংবাদিকরা বারবার টেলিফোন করে পুলিশের সহায়তা চেলেও প্রায় ৪০ মিনিট পর প্রেসক্লাব থেকে মাত্র ১০০ গজ দুরে অবস্থিত থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়।
এদিকে, এই মামলার আসামীদের না ধরে পুলিশ স্থানীয় সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবির চাপের মুখে ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার আহত সাংবাদিকগণসহ কয়েকজন প্রবীন সাংবাদিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে একটি ভূঁয়া মামলা রেকর্ড করা হয়। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকরা ফুঁসে ওঠেন। ২১ জন সাংবাদিক সরাসরি থানায় গিয়ে চত্তরে অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘আমাদের গ্রেপ্তার করুন’। পুলিশ এ সময় বিপাকে পড়ে যায়। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন ছাড়াও খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি, সাতক্ষীরার ডিসি ও এসপির সাথে কথা বলেন। এরপর প্রশাসনে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। নানাভাবে পুলিশ সাংবাদিকদের নিবৃত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এদিকে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে দৈনিক দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নুর ইসলাম, দৈনিক সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জী, সাবেক সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুস, সূর্যের আলোর সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরি, দৈনিক কল্যাণের কাজী ময়না, সাপ্তাহিক ডাইজেস্ট সম্পাদক মাও. সাখাওয়াত উল্লাহ, ভোরের ডাকের মোহম্মদ আলী সুজন, দীপ্ত টিভির রঘু নাথ খা, দৈনিক পত্রদূতের এসএম শহীদুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন, শেখ ফরিদ আহমেদ ময়নাসহ আরও দুই ডজন সাংবাদিক এবং বিপুল পরিমান ফটো সাংবাদিক সেখানে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন।

Check Also

সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ১০ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সীমান্তে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ১০ বোতল ভারতীয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।