ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ পাসপোর্ট ছাড়া বিমান পাইলটের কাতার যাত্রার ঘটনায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেছেন, ফ্লাইটে ওঠার এক ঘণ্টা পরই পাসপোর্ট না আনার কথা মনে পড়ে।
পরে ফ্লাইট থেকেই দোহারে বিমানের ইমিগ্রেশন হ্যান্ডলিং এজেন্টকে বিষয়টি জানাই। হ্যান্ডলিং অফিসার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমাকে জানান, পাসপোর্ট আনতে পারলেই আমি কাতারে প্রবেশের অনুমতি পাব। পরে আমি পাসপোর্ট পাঠিয়ে দেয়ার জন্য বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন ও বিমান এমডি ক্যাপ্টেন ফারহাত জামিলকে অনুরোধ করি।
ফারহাত জামিল পাসপোর্ট পাঠানোর ব্যাপারে আমাকে আশ্বস্ত করায় আমি ফ্লাইট থেকে নেমে দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রানজিট হোটেল অরিস এয়ারপোর্টে অবস্থান করি। পাসপোর্ট পাওয়ার পরই আমি কাতার বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাই এবং কাতারে প্রবেশ করি। তদন্ত কমিটিকে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেছেন, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আমাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।
কাতারের ইমিগ্রেশন হ্যান্ডলিং এজেন্ট আমাকে আশ্বস্ত না করলে আমি যে ফ্লাইটে কাতার যাই ওই ফ্লাইটেই ঢাকা ফেরত আসতাম। রোববার বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সামনে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন। শনিবার ভোররাতে একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সে তিনি দোহা থেকে ঢাকায় আসেন।
ক্যাপ্টেন ফজলকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে পুরো বিষয় সম্পর্কে তথ্য নেন কমিটির সদস্যরা। এজন্য তারা ওই ফ্লাইটের ২ জন পাইলট ও ৫ জন কেবিন ক্রুর (পার্সার) সাক্ষাৎকার নেন। পার্সাররা হলেন ডিজিএম নুরুজ্জামান রনজু, পার্সার বৃষ্টি, নুসরাত, জবা ও আরমান।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ফ্লাইটে যাওয়ার আগে ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ নিজেই পার্সারসহ ১২ কেবিন ক্রুকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট নিয়ে আধ ঘণ্টার ব্রিফ করেন। ব্রিফে ক্যাপ্টেন ফজল সবাইকে বিমানে ওঠার আগে পুরনো লাগেজপত্র ঝেড়ে পরিষ্কার করে নেয়ার কথা বলেন। এরপর পাসপোর্টসহ আনুষঙ্গিক লাগেজে ভরার নির্দেশনা দেন।
ক্যাপ্টেন ফজল তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে পাইলট-ক্রুদের জন্য ইমিগ্রেশনের আলাদা কাউন্টার রয়েছে। আগে ওই কাউন্টারে পাসপোর্ট দেখে জেনারেল ডিকলারেশন (জিডি) ক্লিয়ারেন্স করা হতো। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা পাইলট ক্রুদের কাছে তাদের ডিটেইল জানার জন্য বিমানের পি-নম্বর জিজ্ঞাসা করতেন। কিন্তু এবারই প্রথম আমার ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানিং করা হয়েছে। যেহেতু ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানিংয়ে একসঙ্গে সবকিছু দেখা সম্ভব সে কারণে হয়তো পাসপোর্ট, পি-নম্বরসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখার প্রয়োজনীয়তা মনে করেননি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। যার কারণে আমিও পাসপোর্টের কথা ভুলে যাই।
তদন্ত কমিটিকে তিনি বলেছেন, বিশ্বস্ততার কারণে চাকরিজীবনে অসংখ্যবার আমি ভিভিআইপি ফ্লাইট চালনা করেছি। প্রতিটি ফ্লাইটে আমি ছিলাম বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বুধবার হঠাৎ একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেছে। অনিচ্ছাকৃত এই ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন তদন্ত কমিটির কাছে। ক্যাপ্টেন ফজল বলেছেন, ‘ভুল অনিচ্ছাকৃত হলেও এই দায় আমার নিজের। ভবিষ্যতে এই ঘটনা আমার জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।’
বিমানের নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ফজল মাহমুদ বলেছেন, ‘আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনায় নিন। ভুলবশত পাসপোর্ট না নেয়ায় আমি বিমানবন্দরের ট্রানজিট হোটেল অরিস এয়ারপোর্টের একটি কক্ষ ভাড়া নেই। বৃহস্পতিবার রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে যাওয়া পাসপোর্ট নিয়ে সহজেই ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিমান নির্ধারিত ক্রাউন প্লাজা হোটেলে উঠি।
তিনি বলেন, বিমান থেকে নেমে আমি বিমানের ইমিগ্রেশন হ্যান্ডলিং এজেন্টকে পাসপোর্ট না থাকার কথা জানাই। ওই এজেন্টই আমাকে হোটেল ভাড়া করে দেন। এরপর আমি ট্রানজিট যাত্রীর মতো ওই হোটেলে অবস্থান করি। পরদিন বৃহস্পতিবার সোয়া ১১টার দিকে বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ইলিয়াসের কাছ থেকে পাসপোর্ট গ্রহণের পর ক্রাউন প্লাজা হোটেলে যাই।