ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের কাছে নিগৃহীত হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে তার মা সামসুন নাহার তসলিম হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ব্যারিস্টার তুরিনের অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আইন, বিচার, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সামসুন নাহার তসলিম। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তুরিন আফরোজের ছোট ভাই শাহনেওয়াজ শিশির।
সামসুন নাহার তসলিম বলেন, ‘আজ দুই বছর তিন মাস উনিশ দিন আমি আমার বাসার বাইরে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার আঠারো দিন পরে তুরিন আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার দোষ তার (তুরিন আফরোজ) কিছু অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ করা। যেমন, আমাদের ভাড়াটিয়াদের থেকে সবসময় ভাড়ার টাকা আমিই নিতাম। আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার, ওষুধ খরচ চলত। এরপর ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে (তুরিন আফরোজ) বাসা ভাড়ার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়।’
তুরিন আফরোজের মা বলেন, ‘অপরিচিত লোকদের রাত-বিরাত ঘরে প্রবেশ নিয়ে দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে, তার সঙ্গে প্রায় লাগতো (ঝগড়া)। এসব বিষয়ে নিষেধ করলে র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে ভয় দেখাত এবং বলত, ওরা সবাই তার বন্ধু। কোনো কিছু বললেই ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করার ভয় দেখাত। আমি তো ধারা বুঝি না। আরও বলত, পৃথিবীর যেখানেই থাকো সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসব। আর তার গানম্যান দিয়ে ভয় দেখাত। গ্রামের বাড়ি নীলফামারি যেতে পারি না, সে সেখানে দায়িত্ব নিয়ে জমিজমা ও বাড়ি নিজের নামে কুক্ষিগত করেছে।’
সামসুন নাহার তসলিম আরও বলেন, ‘এসব জানাতে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ব্যর্থ হই। ভেবেছিলাম, তিনি একজন মা। আমরা জানি, উনি অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমি চাই, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। আমি আজ মিডিয়ার মাধ্যমে উনার সহযোগিতা কামনা করছি। আমার শরীর ভীষণ খারাপ। ৬৫ শতাংশ কিডনি অকেজো… (কাঁদতে থাকেন)। সঙ্গে আবার ডায়াবেটিকস আছে। ওষুধ কেনার পয়সা বাড়িভাড়া থেকে পেতাম, সেটাও সে কেড়ে নিয়েছে। দেশে থাকার জায়গা নেই এখানে.. সেখানে থেকে বেড়াই। আমি আমার দেশ ছেড়ে এ বয়সে কেন বিদেশে পড়ে থাকব? এ দেশ আমার জন্মস্থান ও আমার ৪৮ বছরের সংসার। আমি তো এখানেই থাকতে চাই। আমি আমার সংসারে ফিরে যেতে চাই। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে তুরিন আফরোজের ছোট ভাই শাহনেওয়াজ শিশির বলেন, ‘ক্ষমতার দাপটে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমাকে এবং আমার বিধবা মাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানি করে আসছে। তার কারণ একটি। আর তা হলো, দেশে আমাদের সম্পদ তার কুক্ষিগত করা। চক্ষু লজ্জায় এতদিন বিষয়টি আড়াল করে রেখেছি। আমি ও আমার অভাগিনি মা ক্ষমতাসীন কাউকে অবমাননা করতে চাইনি।’
শাহনেওয়াজ শিশির আরও বলেন, ‘একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমার বাসা থেকে আমাদের বের করে দেওয়ার পরও রাজউক কর্তৃক কর ও ভূমি কর আমি নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমার অনুপস্থিতিতে নিজ স্বার্থে কাজে লাগিয়ে তুরিন আফরোজ ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে সংবিধান বহির্ভুত কাজে বাধ্য করে আমাকে আর আমার মাকে ক্ষতি করছে। ব্যারিস্টার তুরিন শুধু ঢাকাতেই নয়, নীলফামারি আমাদের চাচাতো ভাই ও বোনদের জমিজমা জিম্মি করে রেখেছে।’ এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবি জানান তিনি।
নিজ বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে গত ১৩ জুন রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ছোট ভাই শাহনেওয়াজ শিশির। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, শিশিরের নিজস্ব ভবনে বসবাস করেন তুরিন আফরোজ। তিনি কানাডা প্রবাসী। কয়েকবছর আগে তাদের মাকে তুরিন সে বাসা থেকে বের করে দেন। পরে মাকে নিয়ে কানাডা চলে যান শিশির। ১৩ জুন রাতে তিনি কানাডা থেকে ফিরে নিজের বাসায় গেলে সেখানে বোন তুরিন আফরোজ তাকে ঢুকতে দেননি।
এর আগে উত্তরায় ভাইয়ের নামে মায়ের দেওয়া ওই বহুতল বাড়িটি গত বছর জোর করে দখলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে। ওই বছর নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তুরিন ও শিশিরের মা শামসুন নাহার। দখল হওয়া বাড়ি উদ্ধারের জন্য ঢাকার নিম্ন আদালতে মামলা করেন তুরিনের ছোট ভাই শাহনওয়াজ আহমেদ শিশির