ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:: ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
সোনাগাজী মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিও ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের হয়েছিল।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে গত ১৫ এপ্রিল মামলাটি দায়ের করেন। শুনানি করে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
আসামি মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফারুক আহমেদ।
শুনানিতে আসামিপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, আসামি মোয়াজ্জেম একজন নবম গ্রেডের কর্মকর্তা। তিনি এখনো চাকরিরত। ২০১২ সালের ৩০ জুলাইয়ে প্রকাশিত গ্যাজেট অনুসারে তিনি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ও নাগরিক। তাই মোয়াজ্জেম হোসেন কারাগারে প্রথম শ্রেণির কয়েদি মর্যাদার সব সুবিধা পেতে পারেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম বিভিন্ন স্থানে কর্মরত থাকাকালে অনেক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করেছেন। তাদের অনেকের সাজা-ফাঁসিও হয়েছে। অনেকেই কারাগারে আছেন। এজন্য তিনি সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে থাকলে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। এমতাবস্থায় মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রথম শ্রেণির ডিভিশনের প্রার্থনা করেন তিনি।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম (শামীম) আসামির ডিভিশনের বিষয়ে বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আসামিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাই আসামির ডিভিশনের বিরোধিতা করছি। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ওই আদেশ দেন।
এর আগে গত ২০ জুন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জন্য কারাগারে ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী ফারুক আহমেদ। এ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৪ জুন দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক।
আদালত সূত্র জানায়, গত ১৭ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে ১৬ জুন হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার হন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন।
রাফি এর প্রতিবাদ করেন এবং এ বিষয়ে রাফির মা শিরীন আক্তার মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠান।
ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল নুসরাত ও তার পরিবারকে। কিন্তু মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে আগুন দেয় বোরকা পরা কয়েকজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া রাফি ১০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে মারা যান।
রাফির গায়ে আগুন দেয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। রাফির মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
হত্যাকাণ্ডের দিন দশেক আগে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান নুসরাত। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সেই সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ৮ মে মোয়াজ্জেমকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক’দিন থেকে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিল। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।
পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাটি জারি করেন।
পরোয়ানা জারির দুদিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার। ১৬ জুন