ক্রাইমর্বাতা রিপোট: বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নেয়াজ রিফাত শরীফ নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার জন্য ব্যক্তিগত কারণকেই দায়ী করেছে পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার মো: মারুফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা সবাই বুঝতে পারছি যে ব্যক্তিগত কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে ব্যক্তিগত কোন কারণে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি প্রকাশ করেননি তিনি।
বুধবার ওই হত্যাকাণ্ডের পর নানা গণমাধ্যমে মাদকের বিষয়টি আসলেও পুলিশ সুপারের দাবি বরগুনা শহরে মাদকের তেমন ছড়াছড়ি নেই। এখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সব দিক থেকেই ভালো ছিলো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বিবিসিকে বলেন, অভিযুক্তরা যেনো পালাতে না পারে সেজন্য সব সীমান্ত ও বন্দরে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
“রিফাত হত্যার ঘটনায় মোট ১২ জন এজাহারভুক্ত আসামি। এর মধ্যে আমরা তিনজনকে আটক করেছি। বাকীদের ধরতে অভিযান চলছে,” বলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, মিন্নি (নিহত রিফাতের স্ত্রী যিনি হামলা থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন) এখানে ভিকটিম। তার স্বামী মারা গেছে ৪৮ ঘণ্টাও পার হয়নি। তাকে নিয়ে কথা বলা সমীচীন হবে না।
“একটি নারকীয় হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। যারা এ কাজটি করেছে তাদের খুঁজে বের করে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবো।”
প্রকাশ্যে হামলা
হামলার ভিডিওতে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটকের কাছে কয়েকজন যুবক রিফাতের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে উপর্যুপরি হামলা চালাচ্ছে।
এসময় তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার একাই দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
বিবিসি বাংলার কাছে আয়েশা আক্তার ব্যাখ্যা করেন তার সেই ‘বিভীষিকাময়’ অভিজ্ঞতার কথা।
“আমার স্বামী আমাকে কলেজ থেকে নিয়ে ফেরার সময় দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। আমি অস্ত্রের মুখে পড়েও অনেক বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাঁচাতে পারি নাই।”
তিনি বলেন, “আমার আশেপাশে অনেক মানুষ ছিল। আমি চিৎকার করছি, সবাইকে বলছি – ওরে একটু বাঁচান। কিন্তু কেউ এসে আমারে একটু সাহায্যও করে নাই।”
রাজপথে বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড: কী নির্দেশ করে?
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন বলে ভিডিওতে দেখা গেছে এবং এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
দুর্বৃত্তদের প্রাণপণে বাধা দিয়েও হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে পারেননি নিহতের স্ত্রী আয়েশা আক্তার। দোষীদের ফাঁসি চেয়ে সরকারের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন। উচ্চ আদালত এর মধ্যেই এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তের তদারকি করছে।
কিন্তু রাজপথে এমন বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড সমাজের ঠিক কোন ব্যাধির প্রতি দিক নির্দেশ করছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মেঘনা গুহঠাকুরতা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এটা ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের মতোই ঘটনা যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন তাকে মারার চেষ্টা করছে আর ওয়াইফ বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আগে পাড়ার বা পাশের বাড়ির লোকের কিছু হলে মানুষ নিজের মনে করতো। যেটা গ্রামে গঞ্জে এখনো আছে। কিন্তু এখন যতক্ষণ নিজের ওপর না আসছে ততক্ষণ সবাই আলাদা।
“সব ঘটনার একটাই ধারাবাহিকতা- নিষ্ক্রিয়তা। খুব হিংস্র হয়ে যাচ্ছে। আগের মূল্যবোধ ধরে রাখা যাচ্ছে না আবার সেই মূল্যবোধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা অনেকেই মানছে না।”
মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, কেউ বিচারে বিশ্বাস করছে না। সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেম ভেঙ্গে পড়েছে।
সূত্র: বিবিসি
Check Also
সাতক্ষীরায় ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ গ্যালন ফরমালিন পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। তবে এসময় …