এবার ১৮ লাখ টাকায় চুক্তি, অগ্রিম ১০ ইবিতে আবারও শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস টাকা জোগাতে ব্যাংক লোন ও জমি বিক্রির চেষ্টা প্রার্থীর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবারও শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে আর্থিক দেন-দরবার নিয়ে ইবির দুই শিক্ষকের অডিও ক্লিপ যুগান্তরের হাতে এসেছে।

অভিযুক্তরা হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম আবদুর রহিম। এর মধ্যে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে এর আগেও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে এক প্রার্থীর সঙ্গে ১৮ লাখ টাকায় চুক্তি করেছেন অভিযুক্ত দুই শিক্ষক। এর মধ্যে নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভা হওয়ার আগে দিতে হবে ১০ লাখ টাকা।

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভা সিন্ডিকেটে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেলে বাকি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। আগামীকাল শনিবার হবে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নির্বাচনী বোর্ডের সভা।

প্রার্থীর সঙ্গে দুই শিক্ষকের কথোপকথনের অডিওতে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। এদিকে নিয়োগ নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুর রহিমকে বাঁচাতে এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা ফিন্যান্স বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখাও করতে চান এবং দেখা করার পরে নিউজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে এর আগেও অভিযোগ উঠে। এ বোর্ড নিয়ে ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল যুগান্তরে ‘থ্রি ফার্স্ট ক্লাসে ১৫, ফোরে ১২ লাখ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তখন বিভাগের সভাপতি ছিলেন এই রুহুল আমিন। নিয়োগ বোর্ডের সভা হওয়ার আগেই তার সঙ্গে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির এক বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের ১০ মিনিটের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়।

এরপর বোর্ডের সভা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। সেই অভিযোগে সিন্ডিকেটে লঘুদণ্ড (৫টি ইনক্রিমেন্ট বন্ধ ও ৫ বছর কোনো প্রশাসনিক কাজে অংশ নিতে পারবেন না) দেয়া হয় ‘প্রশাসনের আশীর্বাদপুষ্ট’ রুহুল আমিনকে। এছাড়া ইতিপূর্বে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্য দুই শিক্ষককে শাস্তি হিসেবে পদাবনতিও করা হয়।

এবার ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭ সালে স্থগিত হওয়া ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে নতুন একটি পদ বৃদ্ধি করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়; যার নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভা আগামীকাল।

তার আগেই আরিফ হাসান নামে এক প্রার্থীর সঙ্গে দেন-দরবার করেন ওই দুই শিক্ষক। ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে উঠে এসেছে শিক্ষক রুহুল আমিন ও আবদুর রহিমের সঙ্গে প্রার্থী আরিফ হাসানের নিয়োগ নিয়ে চুক্তির বিষয়টি।

কত টাকা দিতে হবে, কিভাবে দিতে হবে- এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রার্থীর কাছ থেকে দ্রুত টাকা নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে শোনা গেছে। প্রার্থী টাকা জোগাড় করতে ব্যাংক লোন ও জমি বিক্রির কথা বলেছেন।

তাদের মধ্যে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ, বাংলালিংক ও রবি নম্বর থেকে কথা হয়েছে। এর মধ্যে এসএম রহিমের গ্রামীণফোনের ০১৭১৫৫৪৪৫৫৫, বাংলালিংক ০১৯৬৬৭৬৪৯৯৫ ও রবি ০১৮৪৬৩৬১৩৭৫ এবং রুহুল আমিনের গ্রামীণফোনের ০১৭১২০৭৭০৪৭ নম্বরের মাধ্যমে নিয়োগপ্রার্থী আরিফ হাসানের ০১৭১৭৫১৩২৪৫ নম্বরে কথা হয়েছে; যার রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।

অডিও ক্লিপ অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। অডিও ক্লিপে এসেছে সাবেক ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও সাবেক প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমানের নামও।

নিয়োগ বাণিজ্যের অডিওর বিষয়ে ইইই বিভাগের আবদুর রহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সাবেক প্রক্টরের বাসা আমার এলাকায় এবং আমরা একই বিভাগের (ইইই) হওয়ায় স্যারের সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। পরে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে চান।

এ নিয়ে ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, এরকম কোনো বিষয় আমি জানি না। পরে অডিও রেকর্ড আছে বললে তিনি বলেন, আমি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। তবে সবকিছু অস্বীকার করলেও নিজেকে বাঁচাতে এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন তিনি।

ফাঁস হওয়া অডিও ও নিয়োগ বাণিজ্য বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসকারী যুগান্তরকে বলেন- কোনো কথা নেই, যারা জড়িত তাদের চাকরি থাকবে না। ডকুমেন্ট পেলে যেই জড়িত থাক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

https://youtu.be/MwBTFjhs1FY

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।