ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:: জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নামে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমক্রেমিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল ড. অলি আহমেদ। নতুন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ নামে নতুন এই সংগঠনের ঘোষণা দেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা দেশকে ভালোবাসে ও তারা দেশপ্রেমিক বলে মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ (বীর বিক্রম)। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের জামায়াত আর ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়। দেশকে তারা অনেক ভালোবাসে, তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার নেতা তাসমিয়া প্রধান, খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা আহমদ আলি কাসেমী, ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী মুহিব খান, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। মঞ্চে না বসলেও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি, সারোয়ার হোসেনসহ একদল নেতা-কর্মীদেরও দেখা গেছে। সাংবাদিক সম্মেলন শুরুর কিছু সময় আগে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও অলি আহমেদ একসঙ্গে গাড়িতে করে জাতীয় প্রেসক্লাবে আসেন। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গলেএকটি ফুলের তোড়া অলির হাতে তুলে নিয়ে জাতীয় মুক্তি মঞ্চে যোগ দেন।
জাতীয় মুক্তিমঞ্চ জাতীর দুরবস্থা ও জাতীয় সমস্যা সমাধানে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। নতুন এই রাজনৈতিক মঞ্চ রাজনৈতিক কোনো জোট নয় উল্লেখ করে কর্নেল অলি বলেন, দেশপ্রেমিক যে কেউ এ মঞ্চে আসতে পারবেন। আত্মপ্রকাশের দিনে সরকারের উদ্দেশ্যে ১৮টি দাবি তুলে ধরা হয় মঞ্চের পক্ষ থেকে। ১৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, জাতীয় সংসদের পুনর্নির্বাচন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, দেশবিরোধী চুক্তি প্রকাশ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা, জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন, দেশের শিক্ষিত যুবকদের নিয়োগে অগ্রাধিকার,গুম ও খুন বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া, লিগ্যাল এইড কমিটি গঠনের ঘোষণা, প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানি বন্ধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভেজাল ও নকল ঔষধ বন্ধ, খাদ্যে ভেজাল কারীদের মৃত্যুদন্ড, কৃষকের ন্যায্যমূল্য, অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, জাল ভোট প্রদানকারী ও সাহয্যকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল ও বন্ধ করে দেয়া মিডিয়া খুলে দেয়া, দুর্নীতি দমন আইনের বৈষম্য দূরীকরণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সাংবিধান অনুযায়ী সুযোগ সৃষ্টির দাবি।
নতুন এই মঞ্চে জামায়াতের নেতাকর্মীরা থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নে কর্ণেল অলি বলেন, এটি কোন রাজনৈতিক জোট নয়। এখানে দেশপ্রেমিক নাগরিকদের যারা দেশ এবং সমাজের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চান তারা সবাই থাকতে পারবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে ২০ দলীয় জোটের প্রধান এ সমন্বয়ক বলেন, আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। লক্ষ্য হবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ও জনগণের সরকার গঠন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা আশা করি আমাদের এ কর্মসূচিতে জনগণ এবং সব বিরোধী দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমর্থন দেবেন এবং সহযোগিতা করবেন। লিখিত বক্তব্যে অলি আহমেদ জানান, তাদের কর্মসূচিতে কোনও ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- থাকবে না। সব বিরোধী দল এবং বিকেবান মানুষকে এতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে অলি আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সব দলকে আমরা সঙ্গে নেবো। আপনি আমার কথা লক্ষ্য করেননি। কোনও জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করলো কারা, অন্যের ঘাড়ের ওপর বন্দুক রেখে কথা বলা ঠিক না। সব সময় আমি অন্যকে দোষ দিয়ে আগাবো এটা ঠিক না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ১৯৭১ সালের জামায়াত এবং ২০১৯ সালের জামায়াত এক নয়। দেশকে তারা অনেক ভালোবাসে, তাদের মধ্যে অনেক সংশোধনী এসেছে।
অলি আহমেদের দাবি, জামায়াত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারা দেশপ্রেমিক শক্তি। যারা দেশকে ভালবাসে, দেশকে মুক্ত করতে চায়, দেশবাসীকে মুক্ত করতে চায়, যারাই আমাদের সঙ্গে আসতে চাইবে তাদেরকে আমরা সঙ্গে নেবো। তবে দালাল- বেঈমানদের না।
এসময় এক সাংবাদিক দালাল- বেঈমানদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা যে দালাল-বেঈমান এটা কারও অজানা না। আমাদের অনেকে দালালি করেছে বলে আজকে জাতির এই অবস্থা। আমাদের সঙ্গের সিনিয়র লোক তাদেরকে চেনেন, তারা জানেন গত ১০-২০ বছর ধরে কীভাবে তারা দালালি করছে।
১৮ দফা দাবি আদায়ের জন্য আর কিছু করবেন কিনা জানতে চাইলে অলি আহমেদ বলেন, ‘দিস ইজ দ্য বিগিনিং! আগে আগে দেখেন কি হয়। এখানে সব মুক্তিযোদ্ধা, কোনও দালালদের কাজ না। আওয়ামী লীগ সরকার না মানলে এই ১৮ দফা দাবি কার কাছে করছেন, জানতে চাইলে অলি আহমেদ বলেন, যেহেতু তারা সরকারে আছে তাদেরকেই বলছি যতো তাড়াতাড়ি পারেন, নিজের ভুল উপলব্ধি করে পুনরায় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।
নির্দিষ্ট কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে অলি আহমেদ বলেন, এটাই তো নির্দিষ্ট কর্মসূচি। গত ১০ বছরে এরকম কর্মসূচি কেউ দিয়েছে? এটাই আমাদের কর্মসূচি, এটা নিয়েই আমরা জনগণের কাছে যাবো। আমাদের এই জাতীয় মুক্ত মঞ্চ কোনও ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে সমর্থন দেবে না। কোনও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে কাউকে সাহায্য করবো না। জনগণকে ভয় দেখানো যাবে না। সরকারকে বোঝাতে হবে আপনারা ভুল পথে আছেন।
১৮ দফা অতীতে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কখনও দেওয়া হয়নি দাবি করে অলি আহমেদ বলেন, শুধু সবার একটাই দাবি ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। আমি যখন বলা শুরু করেছি মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই, তখন সবাই বলা শুরু করেছে। আসলে আমি টেস্ট করার জন্য বলেছিলাম। মধ্যবর্তী নির্বাচন শুদ্ধ কথা নয়, পুনর্র্নিবাচন শুদ্ধ কথা।
কর্নেল অলি বলেন, আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, ১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল উদার গণতন্ত্র ; একনায়কতন্ত্র নয়। সুতরাং কোন অবস্থাতেই আমরা একনায়কতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র মেনে নিতে পারি না। তিনি বলেন, বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হচ্ছে একনায়কতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, দ্বিতীয়টি হচ্ছে উদার গণতন্ত্র। সুতরাং, আমরা বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দিতে পারি না।
একাত্তরের রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন,আমাদের এবারের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ এবং লক্ষ্য হবে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা অর্থাৎ জাতিকে মুক্ত করা তথা ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও জনগণের সরকার গঠন করা। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং সকল রাজবন্দীদের মুক্ত করতে হবে, নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আশাকরি আমাদের এই কর্মসূচিতে জনগণ এবং সকল বিরোধী দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমর্থন দেবেন,সহযোগিতা করবেন, অংশগ্রহণ করবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে চার পৃষ্ঠা লিখিত বক্তৃতা পাঠ করার পর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরণের দাবি এর আগে কেউ দেয়নি। আমি যখন বললাম মধ্যবর্তী নির্বাচন চাই। তখন সবাই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানালো। আসলে মধ্যবর্তী নির্বাচন সঠিক কথা নয়। ওটা আমি পরীক্ষা করার জন্য বলেছিলাম। আসল কথা হলো পুনঃর্নির্বাচন। মধ্যবর্তী নির্বাচন চাইলেতো আগের নির্বাচন মেনে নেয়া হয়। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল অলি আহমদ বলেন, আমার ডানে বামে মুক্তিযোদ্ধারা বসে আছেন। আমার সামনে যারা বসে আছেন এদের অনেকে ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছেন, অনেকে সময় নিয়েছেন। আমাদের সাথে কারা কারা আছেন যথা সময়ে তালিকা আপনাদের সামনে প্রকাশ করবো।
এটা নতুন কোনো জোট কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল অলি আহমদ বলেন, এটা জোট কেন হবে। আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি। ২০ দলীয় জোটের মূল দল বিএনপি ২০ দলীয় জোটে থেকেই কামাল হোসেনের সাথে কাজ করছেন। ১৩ মে, ২০ দলীয় ঐক্য জোটের মিটিং এ নজরুল ইসলাম পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আপনারা যে যেভাবে পারেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নিজ নিজ মঞ্চ থেকে আন্দোলন শুরু করেন।
বিএনপির কিছু নেতা সরকারের সঙ্গে আতাত করেছে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বিএনপির কথা বলিনি। আমি বলেছি আমাদের অনেকে সরকারের সাথে দালালি করছে বলে জাতির এ অবস্থা। এরা কারা জানতে চাইলে কর্নেল অলি বলেন, আপনি সাংবাদিক আমি আশা করবো, আপনি আমাদের সহায়তা করবেন। আপনি যে দালালদের চিনেন না, এটা সত্য কথা না। আপনি যদি বলেন, আপনি চেনেন না, তাহলে আমি আপনাকে চিনিয়ে দেব। আপনি সিনিয়র লোক, আপনি চেনেন, কারা কিভাবে ২০/৩০ বছর যাবত দালালী করছে।