ক্রাইমর্বাতা রিপোট: বরগুনা সদর উপজেলায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। বুধবার সড়কে লোকজনের সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনার দৃশ্য ধারণ করা হয় মোবাইলে। পরে তা ছড়িয়ে দেয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ হত্যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দোষীদের শাস্তির দাবি ওঠে সব মহল থেকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নববিবাহিত স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে খুনি নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এক সময়ের বন্ধু নয়ন দাবি করছিল মিন্নি তার স্ত্রী। মিন্নির সঙ্গে নয়নের প্রেমের সম্পর্কের বেশকিছু ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করে সে।
এসব বিষয় নিয়ে রিফাতের সঙ্গে দু-একবার কথাকাটাকাটি হয় নয়নের। এক সময়ের ছাত্রলীগ এবং পরে যুবলীগ কর্মী রিফাত শরীফও ছেড়ে কথা বলেননি নয়নকে।
এ অবস্থায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয় নয়ন বন্ড। বিষয়টি নিজের মাকে জানায় রিফাত। সবকিছু শোনার পর পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কলেজ এলাকায় গিয়ে মিন্নির সঙ্গে দেখা করতে ছেলেকে নিষেধ করেন রিফাত শরীফের মা। প্রয়োজন ছাড়া বরগুনা শহরে যেতেও নিষেধ করেন তাকে।
বৃহস্পতিবার এসব কথা যুগান্তরকে বলেন রিফাতের মা। তারপরও বুধবার স্ত্রী মিন্নির সঙ্গে দেখা করা এবং তাকে নিরাপত্তা দিতে বরগুনা সরকারি কলেজে যায় রিফাত শরীফ। আর সেখানেই ঘটে তাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা।
নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা।
রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান।
পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।
নিহতের পরিবার জানায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় অংশ নেয় নয়ন বন্ডসহ ৪-৫ জন। রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে পুলিশলাইন সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকেন।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।