আদালতে ভুক্তভোগী পরিবারের মামলা দায়ের * বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ * ‘১৩ দিন ডিবি অফিসে আটক ছিলাম, প্রতিদিনই আমাদের নির্মমভাবে পেটানো হতো, জোরপূর্বক লিখে নেয়া হয় ৬২ বিঘা জমি’
কয়েকজন নিরীহ লোককে ধরে এনে অস্ত্রের মুখে তাদের জমিজমা ও গাড়ি-বাড়ি লিখে নেয়ার অভিযোগে মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করা হয়েছে। এমনকি রিমান্ডে থাকাবস্থায় বৃদ্ধ জাহের আলীর সর্বশেষ জমিটিও রীতিমতো কমিশন বসিয়ে লিখে নেয়া হয়। জোরপূর্বক এ রকম বেআইনি কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে ভুক্তভোগীর ওপর কী পরিমাণ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা রয়েছে এজাহারে। চাঞ্চল্যকর এ মামলার প্রধান আসামি পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল। ১৪ মার্চ মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে মামলাটি করা হয়। বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন আদালত। সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক আত্মপক্ষ সমর্থন করে যুগান্তরকে বলেন, পাওনা টাকা আদায়ের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। বেআইনি কিছুই করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিবেদককে বলেন, ‘তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।’
এদিকে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ জাহের আলী এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলার সুযোগ নেই। তাই আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার চাচ্ছি।’
মামলার আর্জিতে বলা হয়- জাহের আলী নামের ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ ও তার ছেলেকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে আটকে রেখে জমিজমা লিখে নেয়া হয়। এরপর সাজানো প্রতারণার মামলায় তাদের দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখে পুলিশ। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত হলেন, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল। মামলায় আসামি হিসেবে ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদের মধ্যে আছেন- একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রূপগঞ্জ থানার সাবেক ওসি, একজন ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর, একজন এএসআই ও কয়েকজন কনস্টেবল। এছাড়া আসামি করা হয়েছে- সাবরেজিস্ট্রার, দলিল লেখক ও একজন ব্যাংক মানেজারকেও।
মামলার এজাহারে বলা হয়- রূপগঞ্জ বক্তবাড়ি এলাকার বাসিন্দা জাহের আলীকে ফোন করে থানায় ডেকে নেয়ার পর থেকে তিনি বেশকিছু দিন নিখোঁজ ছিলেন। গত বছর ১০ জুলাই রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির ফোন করে তাকে থানায় যেতে বলেন। থানার ফোন পেয়ে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ও মেয়ের জামাই আবু তাহেরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি থানায় যান। সেখান থেকে তাদের পুলিশ সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর থেকে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাতেও তারা ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা থানায় জিডি করতে যান। কিন্তু থানা পুলিশ জিডি না নিয়ে উল্টো তাদের হুমকি দিয়ে বলে, ‘এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেন না। আর বাড়াবাড়ি করলে পরিবারের সবাইকে মেরে গুম করে নদীতে ফেলে দেয়া হবে।’ এর কয়েকদিন পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, পুলিশ সদর দফতরে নিয়ে যাওয়ার পর জাহের আলী ও তার জামাইকে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। এমনকি আটক থাকাবস্থায় ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাদের সব জমিজমা লিখে নিতে চাচ্ছে পুলিশ।
ঢাকার আদালতপাড়ায় এক আইনজীবীর চেম্বারে বসে যুগান্তরের কাছে পুলিশি নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন বৃদ্ধ জাহের আলী। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে পুলিশ সদর দফতরের চার তলায় অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেলের রুমে নিয়ে যায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। সেখানে সবার হাতে হাতকড়া পরানো হয়। রাতে পুলিশ সদর দফতরে ডিবির লোকজন এসে হাজির হয়। তারা আমাদের চোখে কালো কাপড় বেঁধে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানোর পর জমিজমা লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। ডিবির ইন্সপেক্টর দীপক কুমার দাস আমাদের ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার ভয়ও দেখান। একপর্যায়ে ডিবি কার্যালয়ে আটক অবস্থাতেই আমরা মোট ১০টি দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য হই। ১১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১৩ দিন আমি এবং আমার ছেলে আবদুল মতিন ও মেয়ে জামাই আবু তাহের ডিবি অফিসে আটক ছিলাম। প্রতিদিনই আমাদের নির্মমভাবে পেটানো হতো। ভয়ভীতি ও নির্যাতনের মুখে আমাদের মালিকানায় যেসব ব্যক্তিগত জমি ছিল তার সবই অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল ও তার স্ত্রীর নামে লিখে দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু সবকিছু লিখে দেয়ার পরও মুক্তি পাইনি। ১৬ জুলাই আমাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি প্রতারণার মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। ২৫ জুলাই ফের আমাদের রিমান্ডে নিয়ে আসে ডিবি পুলিশ। ২৬ জুলাই আদালতের আদেশে আনুষ্ঠানিক রিমান্ডে থাকাবস্থাতেই আমাদের কাছ থেকে আরও দুটি দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়। এভাবে আমাদের বসতভিটাসহ মোট সাড়ে ৬২ বিঘা জমি লিখে নেয়া হয়েছে। যার মূল্য অন্তত ৬০ কোটি টাকা।’
বৃদ্ধ জাহের আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কপাল খারাপ। জমিজমাসহ সর্বস্ব লিখে দেয়ার পরও আমাদের জেলে পাঠানো হয়। আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একের পর এক প্রতারণার মামলা হতে থাকে। ঢাকার শাহবাগ, ডেমরা থানায় একটি করে দুটি এবং ১১টি প্রতারণার মামলা হয় রূপগঞ্জ থানায়। আদালত একটি মামলায় জামিন দিলেই আরেকটি পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতার দেখানো হতো। ফলে জামিনের শত চেষ্টা করেও আমরা কারাগার থেকে বের হতে পারিনি। প্রায় ১ বছর আমাদের কারাগারে থাকতে হয়েছে।’
জাহের আলীর ছেলে আবদুল মতিন বলেন, ‘আমার বৃদ্ধ পিতা চিকিৎসার জন্য কারা হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু তাকে হাসপাতালেও বেশিদিন থাকতে দেয়নি পুলিশ। কারা কর্তৃপক্ষকে ফোন করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার ব্যবস্থা হয়। এখন আমাদের পুরো পরিবার ছিন্নভিন্ন। পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় আছে তা কেউ জানে না। এমনকি পুলিশের ভয়ে কেউই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারছেন না। কারণ ফোন ব্যবহার করলেই কল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গ্রেফতার করবে পুলিশ।
জাহের আলী বলেন, তার ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সবাই এখন পলাতক। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে খেয়ে না খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তিন ছেলে আবদুল মতিন, রফিকুল ইসলাম ও সফিকুল ইসলাম, ভাই আলী হোসেন, ভাতিজা আনিস, জামাই আবু তাহের, পুত্রবধূ ও মামলার বাদী আফরোজা আক্তার আঁখি, বৃদ্ধ স্ত্রী ফিরোজা বেগম। এমনকি ১০ বছরের নাতনি তাসনিম পুলিশের ভয়ে ১ বছর ধরে স্কুলেও যেতে পারছে না। ৫ বছরের নাতি হামিম ও মেয়ে হেলেনা বেগমের রাত কাটছে এখানে-সেখানে। পুলিশের ভয়ে আমরা একেক দিন একেক এলাকায় থাকি।
ভুক্তভোগীরা জানান, আদালতে গাজী মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে মামলা করার পর বাদী আফরোজা আক্তার আঁখিকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। এছাড়া মামলার সব সাক্ষীর নামেও একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। জমিজমা ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত ৩টি মূল্যবান গাড়িও লিখে নেয়া হয়। গাড়িগুলোর নম্বর হচ্ছে- ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৯২৫১ (টয়োটা হ্যারিয়ার), ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-২৫২৮ (হোন্ডা-সিআরভি), ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৩৪৬৫২ (টয়োটা এলিয়ন)। বাসার গ্যারেজ থেকে পুলিশ যখন একে একে তিনটি গাড়ি বের করে নিয়ে যায় তখন সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। আদালতে সেই ফুটেজ জমা দেয়া হয়েছে। তিনটি গাড়ির মধ্যে হ্যারিয়ার মডেলের গাড়িটি এখন নিজেই ব্যবহার করছেন গাজী মোজাম্মেল হক এবং তার তার স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল। হোন্ডা সিআরবি মডেলের আরেকটি গাড়ি ব্যবহার করছেন মোজাম্মেলের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদর দফতরের এএসআই নজরুল ইসলাম। এছাড়া ডেমরা সারুলিয়া এলাকায় গাজী মোজাম্মেলের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে অপর একটি গাড়ি ব্যবহৃত হচ্ছে।
আলোচিত এ মামলায় আসামি হিসেবে অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল ছাড়া আরও ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এরা হলেন- ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের রমনা জোনাল টিমের ইন্সপেক্টর দীপক কুমার দাস, রূপগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মনিরুজ্জামান মনির, ডেমরা ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্টার আফছানা বেগম, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক নয়াবাজার শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার সাজ্জাদুর রহমান মজুমদার, দলিল লেখক জাকির হোসেন, দলিলের সাক্ষী জসিম উদ্দিন, ইমরান হোসেন, আনন্দ হাউজিং সোসাইটির পরিচালক এবং পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, পুলিশ সদর দফতরের স্টেট শাখায় কর্মরত এএসআই নজরুল ইসলাম, আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটির সিনিয়র ম্যানেজার এবিএম সিদ্দিকুর রহমান, ডেমরা এলাকায় অবস্থিত ব্রিজ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কর্মচারী খোরশেদ আলম ও আবদুর রহিম, এছাড়া তারিকুল মাস্টার, সিদ্ধার্থ, গণেশ, পলাশ ও সৈকতের নাম উল্লেখ রয়েছে। এজাহারে এদের ঠিকানা লেখা হয় ঢাকা পুলিশ সদর দফতর।
মামলার এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়- এরা একদলভুক্ত, ঠক, প্রতারক, আইন অমান্যকারী, ভূমিদস্যু এবং অপরাধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। অপরাধ আমলে নিয়ে আদালতের কাছে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি অথবা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন। মামলাটি এখন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১৫-এর আদালতে বিচারাধীন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ১৫ নম্বর আদালতের পেশকার তানভির মামুন রোববার যুগান্তরকে বলেন, এ মামলায় বেশিরভাগ আসামি পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় গোপনীয়তার সঙ্গে তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে চারজন সাক্ষীর বক্তব্য শুনেছেন আদালত।
জানতে চাইলে মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী হাসনা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ‘রিমান্ডে থাকাবস্থায় জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার অভিযোগ উপস্থাপন করা হলে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? তখন আমরা সংশ্লিষ্ট জমির দলিল থেকে শুরু করে অন্যান্য সব প্রমাণপত্র আদালতে উপস্থাপন করি। পুরো ঘটনা শুনে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন।’
জমি দখলের অভিযোগ ও আদালতে দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ২৬ মে পুলিশ সদর দফতরের চতুর্থ তলায় নিজের অফিস কক্ষে বসে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দীর্ঘ সময় কথা বলেন অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, জাহের আলী তার পূর্বপরিচিত। ২০০৬ সাল থেকে তিনি তাকে চেনেন। আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটি নামের একটি আবাসন প্রকল্পের প্রধান হিসেবে জাহের আলীর মাধ্যমে তিনি জমিজমা কিনতেন। তাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতেন তিনি। তার মাধ্যমে প্রকল্পের জন্য মোট ১৫১ বিঘা জমি কেনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে হিসাব করতে গিয়ে দেখা যায়, জাহের আলী অনেক টাকা নয়ছয় করেছেন। হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেছে, তার কাছে আমার ৩৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ টাকা দেয়ার জন্য আমি তাকে অনুরোধ করলে সে বারবার তার অবস্থান পরিবর্তন করে। এ নিয়ে কয়েক দফা মীমাংসা বৈঠকও হয়। একপর্যায়ে জাহের আলী স্ট্যাম্পে লিখিত দেন তিনি সমুদয় টাকা পরিশোধ করবেন। এমনকি পাওনা টাকা না দিতে পারলে তার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিজমা ও সম্পদ আমার হাউজিংয়ের নামে লিখে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। কিন্তু ৩ মাস পার হয়ে গেলেও জাহের আলী তার কথা রাখেননি। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করে আনা হয়।
গাজী মোজাম্মেল হক এক প্রশ্নের উত্তরে যুগান্তরকে বলেন, পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। জাহের আলীর সঙ্গে সম্পাদিত কয়েকটি সমঝোতা চুক্তি ও অঙ্গীকারনামার ফটোকপি দিয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, জাহের আলী একজন পেশাদার প্রতারক। আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটির বিপুল পরিমাণ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে সে আত্মসাৎ করেছে।
এ প্রসঙ্গে জাহের আলীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘অস্ত্রের মুখে জোরর্পূবক আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে সই নেয়া হয়। এমনকি স্ট্যাম্পে কী লেখা আছে সেটিও দেখতে দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি হলফ করে বলছি, অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক আমার কাছে ১টি টাকাও পাওনা নেই। সবকিছু করেছেন ক্ষমতার জোরে। উনি ভেবেছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে কে কথা বলবে। উল্টো তিনি বহু প্রভাবশালী পুলিশকে পক্ষে রাখতে তাদের বিনামূল্যে আনন্দ হাউজিংয়ে প্লট দেয়ার প্রলোভন দেন। ওই লোভে পড়ে পুলিশের কেউ কেউ গাজী মোজাম্মেলের কথামতো আমার পুরো পরিবারের ওপর হামলে পড়েন।’ যুগান্তর।