ক্রাইমর্বাতা রিপোট: ইংল্যান্ডের কাছে ভারতের দৃষ্টিকটু হারের পর পুরনো আক্ষেপ নতুন করে পোড়াচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দৃষ্টিসীমায় চলে আসা জয় যদি মুঠোবন্দি করা যেত কিংবা শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচটা যদি বৃষ্টিতে ভেসে না যেত, তাহলে নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতেই থাকত।
তা হয়নি বলেই এখন সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেই। রোববার এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৩১ রানের জয়ে বাংলাদেশের জন্য সেমিফাইনালে ওঠার সমীকরণ ভীষণ কঠিন হয়ে গেছে।
পরিস্থিতি এমন যে এজবাস্টনে আজ ভারতের বিপক্ষে লিগপর্বে নিজেদের অষ্টম ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য অলিখিত ফাইনালে রূপ নিয়েছে। হারলে বিশ্বকাপ থেকে মাশরাফিদের বিদায় আজই নিশ্চিত হয়ে যাবে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ থেকে তখন আর পাওয়ার কিছু থাকবে না। আশার বাতি অন্তত আরও একদিন জ্বালিয়ে রাখতে ভারতকে আজ মরণকামড় দিতেই হবে টাইগারদের। যে কোনো মূল্যে চাই জয়। দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই বাংলাদেশের সামনে।
আট ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত টেবিলের চারে ইংল্যান্ড। সম্ভাব্য চতুর্থ স্থানের জন্য ইংল্যান্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন পাকিস্তান (৯) ও বাংলাদেশ (৭)। এই তিন দলের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ইংল্যান্ড।
৩ জুলাই নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে কোনো সমীকরণ ছাড়াই সেমিতে চলে যাবে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ যদি আজ জিততে পারে সেক্ষেত্রে বিকল্প একটা পথ খোলা থাকবে মাশরাফিদের সামনে। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ সমান ১১ পয়েন্ট।
নেট রানরেটে অনেক এগিয়ে থাকায় বাকি দুই ম্যাচে হারলেও সেমিতে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকবে ভারতের। নিউজিল্যান্ডও রানরেটে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে নেই।
শেষ ম্যাচে তারা যদি ইংল্যান্ডের কাছে অন্তত ৮০ রানের ব্যবধানে হারে সেক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলে সেমিতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। গত পরশু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত জিতলে বাংলাদেশের সামনে আরও বিকল্প থাকত।
কিন্তু পুরো উপমহাদেশ তাদের জন্য প্রার্থনা করলেও ভারতের ব্যাখ্যাতীত ঘুমপাড়ানি ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে জেতার ইচ্ছাই ছিল না কোহলিদের! ভারত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়ায় এখন সেমির জটিল সমীকরণ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজেদের কাজটা শুধু ঠিকঠাক শেষ করতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা, ‘এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, নিজেদের কাজটা ঠিকভাবে শেষ করা।
সেদিকেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিচ্ছি আমরা। ভারতকে যদি হারাতে পারি, এরপর পাকিস্তানকে, তাহলে অন্তত নিজেদের কাজটুকু করতে পারার তৃপ্তি পাব।’ টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট হলেও ভারতকে হারানো অসাধ্য কিছু নয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের অনেক দুর্বলতাই বেরিয়ে এসেছে।
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে দ্রুত ফেরাতে পারলেই ভারতের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। বোলিংয়ে হুমকি বলতে শুধু দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সামি। এর মধ্যে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই ১৩ উইকেট নিয়েছেন সামি। এখানে একটু পিছিয়ে বাংলাদেশ।
গোটা আসরেই নিষ্প্রভ বাংলাদেশের পেস আক্রমণ। ছয় ম্যাচে পেসাররা নিতে পেরেছেন মাত্র ২৪ উইকেট। তবে ব্যাটিংয়ে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারে টাইগাররা। ব্যাটে-বলে বিশ্বকাপের সবচেয়ে উজ্জ্বল চরিত্র সাকিব আল হাসান একাই গড়ে দিতে পারেন ব্যবধান।
সাকিবের মতো ব্যাটিংয়ে মুশফিকুর রহিমও আছেন দারুণ ছন্দে। তামিম ইকবাল, লিটন দাস কিংবা সৌম্য সরকারও হতে পারেন নায়ক। চোট কাটিয়ে অনুশীলনে ফেরায় মাহমুদউল্লাহর খেলার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল।
অন্যদিকে টুর্নামেন্টে প্রথম হারের ধাক্কায় একটু টলে যাওয়া ভারতকে মরণকামড় দেয়ার এটাই সেরা সুযোগ। গাণিতিকভাবে সেমিফাইনাল এখনও নিশ্চিত না হওয়ায় ভারতও চাপে থাকবে।
এই মাঠেই ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ২৬৪ রান তুলেও ভারতের কাছে নয় উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার পাশার দান উল্টে দেয়ার প্রথম শর্তটা আগেই জানিয়ে দিলেন মাশরাফি, ‘৩০০ থেকে ৩২০ রানের মধ্যে ভারতকে আটকাতে হবে। আর আমরা আগে ব্যাট করলে অন্তত ৩৪০ রান করতে হবে