এড. এখলেছার বাচ্চু
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান সাহেবের একান্ত
ব্যক্তি প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সকল কারা বন্দীদের প্রাত নাস্তায় চিড়া গুড়ের পরিবর্তে সুস্বাদুু খিচুড়ি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে কারাবন্দীসহ সামাজিকভাবে এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। একজন মানবিক মূল্যবোধ পিপাসু মানুষ হিসেবে আমিও অনেক তৃপ্ত হয়েছি। এই মহতি উদ্যোগটা যেনো কারাবন্দী ১৫০ বছরের কষ্টবদ্ধ মানুষকে লোহার গারদ ভেদ করে একটু ঠান্ডা হাওয়ার শীতল পরশ মাখিয়ে দিয়েছে।যারা কারাগারে আছেন তারা সবাই যে সমভাবে অপরাধী এমনটি নয়। কেউ বড় অপরাধে, কেউ লঘু অপরাধে, কেউবা প্রকৃত অপরাধী না হয়েও কারাবন্দী হয়ে বিচার নিষ্পত্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। যে অবস্থায় থাকুক না কেন কারাবন্দীরা আমাদের সমাজের কোন না কোন পরিবােেরর বাবা, সন্তান, মা, ভাই, বোন, নিকট কিংবা দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়। ধর্মীয় দৃষ্টিতে সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা একটা পশুকে শিকল দিয়ে আটকে রেখে তাকে পোষ মানাতে পারি। পশুর খাদ্য তালিকায় যুক্ত করি অনেক টাকার বাজেট। প্রত্যেক উন্নত দেশে কারাগারের বন্দীদেরকে মানবিক বিবেচনায় থাকা, খাওয়া, শিক্ষা, কর্মের বিনিময় মূল্য, বিনোদনের ব্যবস্থাসহ বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি যে সব দেশে কারাবন্দীদের উপর অমানবিক নির্যাচন করা হয় তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংরক্ষণকারী সংস্থাগুলিকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে দেখা যায়।
সম্প্রতি সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ জনাব শেখ মফিজুর রহমান সাহেব জেলা কারাগার পরিদর্শন কালে ‘কারাগার’ নাম পরিবর্তনে সংশোধনাগার নামকরণের জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছেন এবং এ প্রস্তাবটি সরকারের অনুমোদন নেওয়ার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং প্রচেষ্টা। বলাই বাহুল্য আমরা অপরাধকে সব সময় ঘৃণা করি। তার পরেও মানুষ কোন না কোনভাবে নানান অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে। মানব সৃষ্টির আদিকাল থেকে লোভ, লালসার কারণে এবং অন্যের স্বার্থ হরণের জন্য বিভিন্ন ধরণের অপরাধ সংঘটিত করে আসছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং শিক্ষা ও জ্ঞানের অনুপ্রবেশ খুব বেশিদিন ঘটেনি। আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবী অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু মানুষের মনজগতে আমরা কতটুকু পরিবর্তন আনতে পেরেছি সেটিই আজ মূল বিচায্য বিষয়। আমরা কী মানুষকে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন করে তুলতে পেরেছি ? মানুষের সাথে মানুষের আত্মিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছি। অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্টে সুখী মানুষকে সামিল করতে পেরেছি? তাহলে জ্ঞান বিজ্ঞানের উচ্চ শিখরে উঠে মানুষের অর্জনটা কী হলো?
এবার আমি আমার শিরোনামে ফিরে আসি। আগেই বলেছি সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ জনাব শেখ মফিজুর রহমান সাহেব কারাবন্দীদের প্রতি স্পর্শকাতর হয়ে ইতোমধ্যে এক যুগান্তরকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তার মানবিক মূল্যবোধ ধারালো না হলে এমন কঠিন কাজটি সহজতর হতোনা। আমি বশ্বাস করি তিনি যতদিন সাতক্ষীরায় থাকবেন ততোদিন তার ধারালো ইচ্ছার দ্বারা কারাবন্দীদের জীবন আরো সুখময় হয়ে উঠতে পারে। তার জন্য আমার সিমিত কিছু প্রস্তাবনা নি¤েœ তুলে ধরলাম।
১. সাতক্ষীরা কারাবন্দীদের মানষিক উৎকর্ষতা সাধনে তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চর্চার আগ্রহ গড়ে তুলতে হবে। সপ্তাহে একদিন একজন গানের শিক্ষক তাদেরকে সংগীত বিষয়ে শিক্ষা দান করবেন। পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ শিক্ষাদানের জন্য সাতক্ষীরার কিছু শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। যারা বিনা মূল্যে নিশ্চয়ই এই কাজটি সানন্দে গ্রহণ করবেন। তবে সংগীতের শিক্ষকের মাসিক বেতন নির্ধারণ করে তা পরিশোধ করার জন্য সাতক্ষীরার অর্থবান ব্যক্তিদের সহযোগিতা চাওয়া হলে আমি মনে করি তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।
২. কারাবন্দীদের শরীর মন প্রফুল্ল রাখার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা, ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি ইত্যাদী খেলার জন্য বিনামূল্যে দক্ষ প্রশিক্ষক
নিয়োগের জন্য সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া যেতে পারে। আমি মনে করি জেলা ক্রীড়া সংস্থা এমন মানবিক কাজে অবশ্যই এগিয়ে আসবে।
৩. কারাবন্দীদের মনের উৎকর্ষতা সাধনসহ মনকে প্রফুল্ল রাখতে বছরে অন্তত একবার ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।
৪. কারাবন্দীদের জন্য একটি লাইব্রেরি আছে। মনজাগতিক পরিবর্তন আনে এমন কিছু বই কারাবন্দীদের জন্য সংগ্রহশালায় যুক্ত করা যেতে পারে।
৫. গরমকালে কারাবন্দীরা খুবই কষ্ট ভোগ করে। তাদের এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, প্রেসক্লাব, সুশীল সমাজসহ সকলের সহযোগিতায় একটি লটারীর আয়োজন করা যেতে পারে এবং তা থেকে অর্জিত অর্থ দ্বারা কারাগারের প্রতিটি রুমে এসি সংযুক্ত করা যেতে পারে।
মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সকলে মিলে কাজ করার একটা দীর্ঘ মেয়াদী আনন্দ আছে। আমি বিশ্বাস করি কারাবন্দীদের নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ সাহেবের ভাবনার সাথে উল্লেখিত মানবিক কাজগুলো যুক্ত হলে সাতক্ষীরার মানুষ চিরকাল মনে রাখবে। লেখক: আইনজীবী
Check Also
সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ১০ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ
মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সীমান্তে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ১০ বোতল ভারতীয় …