ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনসংখ্যা। সম্প্রতি চালানো এক জরিপ বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে সন্তান সম্ভবা হয়েছেন ৩৪ হাজার ৩’শ ৩৮ জন নারী। এ বছরই তাদের অনাগত সন্তানরা পৃথিবীর আলো দেখবে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ওই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি এখনও চলমান। গত ২৩শে জুন ওই জরিপের প্রাথমিক পরিসংখ্যানসহ কক্সবাজারস্থ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের একটি হালনাগাদ রিপোর্ট ঢাকায় জমা হয়েছে। সমন্বিত ওই রিপোর্টে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপ এবং সংগ্রহ করা তথ্যের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় পাওয়া নিবন্ধিত ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫’শ ৭৬ জন রোহিঙ্গার মধ্যে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮’শ ৫ জন আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্টের পর।
বিশাল ওই জনগোষ্ঠির সঙ্গে এসেছে ৩৯ হাজার ৮ শ ৪১ জন এতিম শিশু। যাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৯ জন ছেলে এবং ২০ হাজার ৭’শ ৮২জন মেয়ে। এতিম ওই শিশুদের মধ্যে ৮ হাজার ৩ শ ৯১ জনের বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। হয়ত তারা নিখোঁজ না হয় বর্মী বর্বরতায় প্রাণ হারিয়েছেন। এতিম ওই শিশুরা স্বজনদের সঙ্গে কোন মতে প্রাণ নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিতে পেরেছে। বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের তরফে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ যৌথভাবে ওই এতিম শিশুদের তত্ত্বাবধান এবং সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। পিতৃমাতৃহীন ওই শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে শুরু থেকেই। অবশ্য তাদের ট্রমা কাটাতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে জাতিসংঘের সহায়তায় বিভিন্ন ধরণের মোটিভেশনাল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রিপোর্ট বলছে, কেবল এতিম শিশু শরনার্থীই নয়, উঠতি বয়সী সব শিশুদের বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। যেসব নারীরা তাদের স্বামী ও স্বজন হারিয়েছেন তাদের সুরক্ষায়ও বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জোর দিচ্ছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্য-চিকিৎসা, সেনিটেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষায় সরকার সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশু-কিশোর এবং উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম ক্যাম্প এলাকাতেই পরিচালিত হয়। রিপোর্টে এসব সেবার খাতওয়ারি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্ট মতে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রাথমিকভাবে ২০০০ একর জমি বরাদ্দ ছিল রোহিঙ্গা শিবির নির্মাণের জন্য। কিন্তু আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ৩৫০০ একর জমি বরাদ্দ হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সেই লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে কেবল নবাগত রোহিঙ্গাদের দখলেই রয়েছে ৬২০০ একর জমি। রিপোর্ট বলছে, প্রাথমিকভাবে নবাগতদের জন্য ৮৪ হাজার অস্থায়ী ঘর নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছিল। কিন্তু এটি এখন ২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ৮ লাখ ৮১ হাজার, ৯ শ ৭৯জন আশ্রয় প্রার্থীসহ প্রায় সব রোহিঙ্গাকে নিয়মিতভাবে খাদ্য এবং অত্যাবশ্যকীয় ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ক্যাম্প এলাকায় ৮ হাজারের বেশী নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার। গোসল খানার সংখ্যা ১৬ হাজার। বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকা। স্বাস্থ্য খাতের বিস্তারিততে বলা হয়েছে- ক্যাম্প এলাকায় ৭টি ফিল্ড হাসপাতাল, ১৬২টি স্বাস্থ্য পরিচর্চা কেন্দ্র চালু রয়েছে। এছাড়া কেবল মা ও শিশুদের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় ১২টি কেন্দ্র বিশেষ সেবা দিচ্ছে। সব ক’টি ক্যাম্পে সরকারি বেসরকারি ১২৪টি সংস্থা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত আছে। রিপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার শিশুকে ক্রিনিংসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার বরাতে রিপোর্টে বলা হয়েছে- প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা ছেলে মেয়ের শিক্ষা সহায়তা প্রয়োজন। ওই টার্গেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭৭ হাজারকে শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।