শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্টের বোলিং নৈপুণ্যে গতবারের মতো এবারও ফাইনাল নিশ্চিত করল নিউজিল্যান্ড।
টানটান উত্তেজনাকর ম্যাচে লড়াই করেও হেরে গেল ভারত। ৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যাওয়ার পর হার্দিক পান্ডিয়া ও রিশব প্যান্টের ব্যাটে খেলায় ফেরে ভারত।
৯২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ার পরও অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান রবিন্দ্র জাদেজা ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। সপ্তম উইকেটে তারা ১১৬ রানের জুটি গড়েন। তাদের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। জাদেজা-ধোনির দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ভারত।
জয়ের জন্য শেষ দিকে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১৪ বলে ৩২ রান। খেলার এমন অবস্থায় উইকেট হারান দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যাওয়া রবিন্দ্র জাদেজা। ৫৯ বলে চারটি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৭ রান করে জাদেজার বিদায়ে জয়ের স্বপ্ন ভেঙে যায় ভারতের।
শেষ ১২ বলে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩১ রান। ৪৯তম ওভারে ফাগুর্নসনের করা প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে আবারও স্বপ্ন দেখান মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু ওভারের তৃতীয় বলে মার্টিন গাপটিলের অসাধারণ থ্রোতে রান আউট হয়ে ফেরেন ধোনি। ৭২ বলে একটি চার ও সমনা ছক্কায় ৫০ রান করে ধোনি আউট হলে জয়ের স্বপ্ন ভেঙে যায় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে টস জিতে ৫ উইকেটে ৪৬.১ ওভারে ২১১ রান করতেই বৃষ্টির বাগড়ায় পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। আগের দিন যেখানে খেলা শেষ করেছিল, বুধবার রিজার্ভডেতে সেখান থেকেই ফের খেলা শুরু করে কিউইরা। বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রথম সেমিফাইনালে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৯ রানে ইনিংস গুটায় কেন উইলিয়ামসনের দল।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪০ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে মাত্র ৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৪ রানে ম্যাট হেনরির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত শর্মা। আগের তিন ম্যাচে টানা সেঞ্চুরি করা রোহিত এদিন ফেরেন চার বলে মাত্র ১ রান করে।
রোহিত শর্মার বিদায়ের পর উইকেটে নেমে ৬ বল খেলার সুযোগ পান বিরাট কোহলি। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্টের গতির বলে এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি তিনি। কোহলি ফেরেন মাত্র ১ রান করে।
চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ম্যাট হেনরির বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন অন্য ওপেনার লোকেশ রাহুল। তিনিও ফেরেন মাত্র এক রানে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম তিন ব্যাটসম্যান এভাবে ১ রান করে আউট হওয়ার রেকর্ড এবারই প্রথম।
মাত্র ৫ রানে ৩ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় কোহলিরা।
দলের এমন চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ের ম্যাচে হাল ধরবেন বলে দিনেশ কার্তিকের প্রতি ভরসা করেছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। দলের এই দুঃসময়ে তিনিও নিজে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি। ম্যাট হেনরির বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জেমস নিশামের বাঁ-হাতের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন কার্তিক। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ১০ ওভারে মাত্র ২৪ রানে প্রথম সারির ৪ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত।
পঞ্চম উইকেটে হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন রিশব প্যান্ট। আগের ১২ বলে মাত্র ১ রান নেয় ভারত। পরপর ডটবল খেলার কারণে বাউন্ডারি হাঁকাতে চেষ্টা করেছিলেন প্যান্ট। কিন্তু মিচেল স্যান্টনারের বল তুলে মারতে গিয়ে কলিন ডি গ্রান্ডহোমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে ৫৬ বলে মাত্র ৩২ রান করেন রিশব প্যান্ট।
এরপর ২১ রানের ব্যবধানে মিচেল স্যান্টনারের দ্বিতীয় শিকার হন হার্দিক পান্ডিয়া। তার আগে ৬২ বলে ৩২ রান করেন তিনি। পান্ডিয়ার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ৩০.৩ ওভারে ৯২ রানে ৬ উইকেট হারায় ভারত। এরপর সপ্তম উইকেটে রবিন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই পার্টনারশিপে তারা ১১৬ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে শেষ দিকে মাত্র ১৩ রানের ব্যবধানে রবিন্দ্র জাদেজা, মহেন্দ্র সিং ধোনি, ভুবনেশ্বর কুমার ও যুজবেন্দ্র চাহালের উইকেট হারিয়ে তীরে গিয়ে তরী ডুবে ভারতের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩৯/৮ (টেইলর ৭৪, উইলিয়ামসন ৬৭, নিকোলাস ২৮, গ্রান্ডহোম ১৬, নিশাম ১২; ভুবনেশ্বর ৩/৪৩)।
ভারত: ৪৯.৩ ওভারে ২২১/১০ (জাদেজা ৭৭, ধোনি ৫০, পান্ডিয়া ৩২, রিশব ৩২, কার্তিক ৬; হেনরি ৩/৩৭, স্যান্টনার ২/৩৪, বোল্ট ২/৪২)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ১৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: ম্যাট হেনরি (নিউজিল্যান্ড)।