ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার তার স্ত্রী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে সকালে মিন্নির জামিন আবেদন শুনানির জন্য আবেদন করেন তার আইনজীবী ও জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে দিনের কার্যতালিকায় তোলা হয় মামলাটি। পরে বেলা ১১টার দিকে মিন্নির জামিনের জন্য শুনানি শুরু হয়।
মিন্নির জামিনের জন্য আদালতে শুনানিতে তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের, অ্যাডভোকেট দীপক চন্দ্র হালদার, অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট সাহিদা বেগম, অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ ও অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান।
মিন্নির আইনজীবী আসলাম শুনানি শেষে বলেন, রিফাত হত্যা মামলায় মিন্নির জামিনের পক্ষে বিস্তারিত শুনানি হয়েছে। আদালতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ৪ জন প্রতিনিধি, ব্লাস্টে পটুয়াখালী ও বরিশাল প্রতিনিধিসহ বরগুনা আদালতের ৩০ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আদালত মিন্নি জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।
মিন্নির জামিন শুনানির কথা শুনে সকালে আদালতে এসে হাজির হন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ও নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরদিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।
পরদিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
এরপর শুক্রবার বিকেলে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।