যে কারণে সজীবের মাথা কেটে ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় রবিন

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নেত্রকোনা শহরের নিউটাউন পুকুরপাড় এলাকায় সজীব মিয়া (৭) নামের এক শিশুর কাটা মাথা ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গণপিটুনিতে নিহত হন বখাটে যুবক রবিন (২৮)।

এ ঘটনার পর পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনার কোনো কূল-কিনার করতে না পারলেও সে সময় নেত্রকোনার পুলিশ সুপার (এসপি) জয়দেব চৌধুরী ধারণা করেছিলেন, বিকৃত মানসিকতা থেকেই শিশু সজিবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

এর সঙ্গে পদ্মাসেতুর গুজবের কোনোই যোগসূত্রতা নেই বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

অবশেষে ৬ দিন পর নেত্রকোনার পুলিশ সুপারের ধারণাই সঠিক হলো।

শিশু সজীবকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে রবিন। প্রতিবেশীর ছেলে সজীবকে ফুসলিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের তিনতলার একটি কক্ষে নিয়ে বলাৎকার করে সে। সজীব পরে সব জানিয়ে দিবে সেই ভয় ও আতঙ্কে গলা কেটে হত্যা করে শিশুটির মাথা ব্যাগে নিয়ে মদ খেতে যায় রবিন।

শিশু সজীবের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া।

বুধবার দুপুরে নেত্রকোনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, শিশু সজীব হত্যার রহস্য উন্মোচন হলো। পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এটা নিছকই গুজব তা আবারও প্রমাণিত হলো। যারা এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন,ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, শিশু সজীবকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়। এ এ হত্যাকাণ্ডে পারিবারিক দ্বন্দ্ব জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এটা দৃশ্যমান যে, ফেসবুকে ছেলেধরা ও পদ্মা সেতুতে মাথা দরকার গুজব ছড়ানোর সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের কোনোই সম্পর্ক নেই। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

তিনি যোগ করেন, ছেলেধরা ও মাথা কাটার বিষয়টি নিছই গুজব ছাড়া আর কিছু্ই নয়। যারা এমন মনগড়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচারণা চলানোর চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে।

ঘাতক রবিন প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, রবিন মাদকাসক্ত ছিলেন। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। রবিনের জব্দকৃত মুঠোফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলা এখনও তদন্তাধীন।

ঘাতক রবিনের প্রতিবেশী সুফিয়া আক্তার ও প্রতিবেশী সৌকত হোসেন জানান, রবিন মিয়া বিবাহিত ছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর আগে মারুফা আক্তারের সয়্গে বিয়ে হয় তার। কিন্তু বিয়ের পর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাদের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে। বছর খানেক আগে স্ত্রী রবিনকে ছেড়ে চলে যায়।

মাদক সেবনের মাত্র দেড় মাস আগে জেল খেটে বের হন রবিন। কিন্তু কোনোই উন্নতি হয়নি। আবারও মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাসখানেক আগে তাকে শিকলে বেঁধে পুলিশে খবর দিতে যান বাবা। এ সময় পালিয়ে যায় রবিন। এরপর থেকে আর বাড়ি আসেনি। এরই মধ্যে শিশু সজীবকে হত্যা করে রবিন।

রবিন রিকসা চালাত ও যা উপার্জন করতো তা দিয়ে সবসময় নেশা করতো বলে জানিয়েছেন একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিয়া ও স্কুলশিক্ষক এমদাদ মিয়া।

প্রসঙ্গত গত ১৮ জুলাই দুপুরে শহরের কাটলি এলাকায় একটি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হরিজন পল্লীতে যেতে থাকে রবিন। ব্যাগ থেকে রক্ত পড়তে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তার গতি রোধ করে ব্যাগে কি আছে জিজ্ঞেস করলে রবিন জানায়, এতে মাছ আছে।

কিন্তু এলাকাবাসী ব্যাগ খুলে এতে রবিনেরই প্রতিবেশী সজীবের মাথা দেখতে পান। এসময় রবিন দৌড়ে পালাতে গেলে ধাওয়া করে নিউটাউনের অনন্তপুকুর পাড়ে ধরে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয় তাকে।

পরে পুলিশ কাটলি এলাকায় কলোনিতে রাস্তার পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের তিনতলার টয়লেটে শিশু সজীবের গলা কাটা দেহ উদ্ধার করে।

Check Also

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।