নিহত আলমগীর হোসেন গোবিন্দকাটি গ্রামের ফকির আহম্মদ সরদারের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরার সংগ্রাম পরিবহনের সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের হাইসোয়া প্রকল্পের মাঠ কর্মী ও বলাডাঙ্গা গ্রামের রহিমা খাতুন জানান, প্রথম স্ত্রী গোবিন্দকাটি গ্রামের আয়েশা খাতুনকে তালাক দিয়ে গোবিন্দকাটি গ্রামের আলমগীর হোসেন আলম ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে তাকে ভালবেসে বিয়ে করে। বর্তমানে আজমীর হোসেন জিমি নামে তাদের দু’বছর দু’মাসের এক সন্তান রয়েছে। তালাকনামা না তুলে আয়েশা তার স্বামীর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পারিবারিক আদালতে ও বিনা অনুমতিতে বিয়ের অভিযোগে আদালতে মোট তিনটি মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আক্তারের নির্দেশ অনুযায়ি আলমগীর তার বড় স্ত্রী ও মেয়ে ঝাউডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী দিশার পড়াশুনা ও সংসার খরচ বাবদ জমি ও টাকা দিয়ে ছয় মাস আগে মীমাংসা করে নেন। মীমাংসার শর্ত অনুযায়ি আয়েশাকে পৃথক দু’টি দলিলে তিন কাঠা ও দু’শতক জমি লিখে দেন। চার মাস আগে তাকে ৬০ হাজার টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়। অথচ গত ২৪ জুন ধার্য দিনে আদালতে আসলে প্রথম স্ত্রী আয়েশা ও তার বাবা আনছার আলী আদালত চত্ত্বরে আলমগীরকে মারপিট করার চেষ্টা করে। হত্যার হুমকি দেওয়ায় আলমগীরকে নিয়ে তিনি কৌশলে পালিয়ে বাড়িতে আসেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসেন আরা আক্তার হজ্ব পালন শেষে ফিরে এলে আইনজীবী এড. আজগার আলীর সঙ্গে কথা বলে মামলা তুলে নেওয়ার কথা ছিল আয়েশার।
রহিমা খাতুন আরো জানান, আলমগীরের বাবার দুই বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর নাম রাজিয়া খাতুন ও ছোট স্ত্রীর নাম খাদিজা খাতুন। দু’স্ত্রীর মোট ১২টি ছেলে। আলমগীর ছিল ছোট মায়ের ছেলে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আলমগীর তার বাড়ি থেকে (বলাডাঙ্গা) বের হয়ে মাধবকাটি বাজারের কামরুলের চায়ের দোকানে বন্ধু ইউপি সদস্য সুমনের সঙ্গে কথা বলে রাস্তার পাশে সাইকেল রেখে একটি ইজিবাইকে উঠে চলে যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি শাশুড়িকে জানান। একপর্যায়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গোবিন্দকাটি গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার একটি পাটক্ষেতে আলমগীরের লাশ পড়ে থাকার খবর শুনে তিনি সেখানে যান। আয়েশা ও তার বাবা আনছার আলী পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন রহিমা।
আলমগীরের মা খাদিজা খাতুন জানান, সোমবার রাত সাড়ে সাতটা থেকে আলমগীরের ছোট স্ত্রী রহিমার মুহুর্মুহু ফোনে পেয়ে তিনি ছেলের ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় বিয়ের কারণে প্রথম স্ত্রী ও তার স্বজনরা আলমগীরকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
আলমগীরের প্রথম স্ত্রীর সন্তান স্কুল ছাত্রী দিশা বলেন, তার বাবাকে কে বা কারা মেরেছে তা সে বলতে পারে না। তবে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাবা তাদের বাড়িতে এসে মায়ের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে যায়। সাতক্ষীরা সদর হাপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ মঙ্গলবার বিকেলে বাড়িতে আনা হয়। গোবিন্দকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ঈদগাহে নামাজে জানাজা শেষে তার বাবার লাশ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলমগীরকে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতের মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগানো আছে। মৃতদেহের পাশে একটি মোবাইল ফোন পড়ে ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের প্রথম স্ত্রী আয়েশা ও দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমাকে থানায় নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মেঝ ভাই গোলাম কিবরিয়া বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।