২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা গেল ৬ জন : প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৬১ 

* ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা গেল ৬ জন 
* মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে 
* প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৬১ 
ইবরাহীম খলিল:ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: : সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬ জন। সরকারি হিসেব মতে এ নিয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হলো। তবে সংবাদপত্রে আসা খবরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৫২ জন। পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৭৭ জন। সে হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী। অর্থাৎ এক মিনিটের কম সময়ে ভর্তি হচ্ছে একজন করে ডেঙ্গু রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এডিস মশার প্রজননস্থানগুলো ধ্বংসে সফলতা না এলে এই রোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মশার প্রজননস্থল নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলেই জোরেশোরে অ্যাট সোর্স মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। যসি সোর্স রিডাকশনে সফল হই তাহলে এটাকে থামাতে পারব। যদি কোনো কারণে কার্যকরভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে প্রতিবছর এটা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যায়। পিক টাইম সেপ্টেম্বরে। সুতরাং এখানে একটাই পদ্ধতি সেটা হচ্ছে সোর্স রিডাকশন। ‘যত রকম ওষুধই ব্যবহার করি না কেন যদি সোর্স রিডাকশন না হয় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। যদি সোর্স রিডাকশনে আমরা সবাই মিলে কাজ না করি তাহলে ট্রেন্ড থামানো যাবে না। সেদিক থেকে প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। সেটা না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়বে। পরে আস্তে আস্তে কমে আসবে।’ সাধারণত অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এ বছর জুনের শুরুতেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের খবর আসতে থাকে। জুলাইয়ে এসে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার পর্যন্ত নেত্রকোণা ছাড়া সবগুলো জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৭ হাজার ১৮৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে সংবাদপত্রে আসা খবরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর অর্ধশত ছাড়িয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তহমিনা, জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আক্তারুজ্জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
ডেঙ্গু পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় রি-এজেণ্টের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তহমিনা বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ৫০ হাজার এনএসওয়ান কিট আমদানি করা হচ্ছে। এগুলো যেহেতু দেশে তৈরি হয় না এজন্য এগুলো আনতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে না। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও এক লাখ কিট দেবে যেগুলো আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব। এগুলো বিনা পয়সায় দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ব্যবহৃত আরডিডি কিট সব জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সানিয়া তহমিনা। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু গাইডলাইনও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে প্রশিক্ষণ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪০০ দল ঢাকা শহরের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই লাখ শিক্ষার্থীর কাছে যাবে। তারা ডেঙ্গুর উৎসস্থল নির্মূলে কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেবে, তারা যেন আবার বাসায় গিয়ে তা প্রয়োগ করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সী সেণ্টার ও কণ্ট্রোল রুম থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৭৭ জন। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৯২৮ জন। আর ঢাকা শহর বাদে ঢাকা বিভাগীয় এলাকায় রোগীর সংখ্যা ১১২ জন। ঢাকার বাইরে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৫৪৯ জন।
এই ২৪ ঘণ্টায় দেশের আট বিভাগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে। অধিদফতর জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৬ জন, খুলনা বিভাগে ১০৮ জন, রংপুর বিভাগে ৩১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬১ জন, বরিশাল বিভাগে ২২ জন, সিলেট বিভাগে ২৯ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৮০ জন ডেঙ্গু রোগী মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন।সব মিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৮৩। এর মধ্যে অবশ্য ১২ হাজার ২শ ৬৬ জন রোগীই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকি ৪ হাজার ৯শ ০৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন।
এদিকে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১৫৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৬২ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৬ জন ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৭৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেণ্ট হাসপাতালে ৩৭ জন, বারডেম হাসপাতালে ১৩ জন, বিএসএমএমইউতে ৩৫ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৩২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫২ জন, পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে দুই জন ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নতুনভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৬২ জন রোগী। এদের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩২ জন, ধানমন্ডি ইবনে সিনা মেডিকেলে ১৬ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ১১ জন, হাই কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেডে ৩২ জন, ল্যাবএইড হাসপাতালে ৫ জন, সেণ্ট্রাল হাসপাতালে ৩৪ জন, হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে ২ জন, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন ও কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেণ্ট্রাল হাসপাতালে ২০ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও খিদমা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ১৫ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডে ১০ জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ১৬ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

ঢামেকে নতুন ইউনিট
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে, প্রয়োজনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে একটি আলাদা ইউনিট খোলা হবে। সেখানে ভর্তি রেখে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম নাছির উদ্দীন। গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে হাসপাতালের পরিচালক এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সেবার জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ছুটি বাতিল ও কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে যারা ভর্তির যোগ্য তাদের ভর্তি রেখে বিনা পয়সায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে। যারা ভর্তির যোগ্য নয়, তাদের ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রয়োজনে ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনে আনসারদের অস্থায়ী থাকার স্থানে শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

ছুটি বাতিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে স্বেচ্ছায় সাত দিনের ছুটি বাতিল করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। দেশে ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ আকার ধারণ ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতির এই সময়ে ছুটি নিয়ে সপরিবারে মালয়েশিয়া যাওয়ায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত বুধবার দেশে ফিরে আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বা অফিস শুরু করবেন তিনি।
এর আগে সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় ডেঙ্গু ও বন্যাজনিত কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়। এসময় মন্ত্রীর অবকাশের ছুটি মূলত সমালোচনার প্রধান কারণ। তাছাড়া জানা যায় আগামী ৪ আগস্ট মন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা ছিল।
বিদেশী মিডিয়ায় ডেঙ্গু : আশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার উদ্বেগজনক বিস্তার হওয়ায় এশিয়ায় বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভারত, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম রীতিমত যুদ্ধ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণে বিস্তার ঘটেছে ডেঙ্গুর। এরই মধ্যে ম্যালেরিয়া বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
মার্কিন মিডিয়া সিএনএন’এর এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মপ্রধান ও গ্রীষ্মপ্রধানের কাছাকাছি এমন দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব খুব সাধারণ বিষয়। কিন্তু এখন তা এমন সব দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে যে সব দেশ গ্রীষ্মপ্রধান নয়। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল, অস্ট্রেলিয়া, চীনের উপকূলীয় এলাকা ও জাপান। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা বিশ্বের ওইসব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সিএনএন বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে কমপক্ষে ১০০০ মানুষ নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে যাদের বেশির ভাগই শিশু। বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা একে ভয়াবহতার রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

ডেঙ্গুতে মারা গেলেন পুলিশের এস আই
পুলিশের এসআই কোহিনুরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় প্রথম জানাজা এবং তার গ্রামের বাড়ি ভূঞাপুরের অর্জুনায় বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পূর্বপাড়া পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এসআই কোহিনুরের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে।
কোহিনুর ঢাকার সিটি হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোহিনুরকে গুরুতর অবস্থায় সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুরু থেকেই তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি হয়। মঙ্গলবার রাত সোয়া ১টার দিকে কোহিনুরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এসআই কোহিনুরের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা গ্রামে। তার বাবা আবদুুস ছালাম। তার স্বামী জহির উদ্দিন প্রাণ কোম্পানীতে কর্মরত।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ৯ দিন পরে রবিউল ইসলাম রাব্বি (২১) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রবিউল রাজধানীর মিরপুর শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় স্যামসাং সার্ভিসিং সেণ্টারে কাজ করতেন এবং ওই এলাকায় বাস করতেন। তার বাবার নাম আমিরুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ২২ জুলাই রবিউলের জ্বর আসে। পরদিন টেস্ট করালে জানা যায়, রবিউল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক পরামর্শ দেন জ্বর বাড়লে বা শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ভর্তি হতে হবে। ২৫ জুলাই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রবিউলকে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।

ঢাকার বাইরে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। বরিশালের গৌরনদীতে মঙ্গলবার রাতে আরও একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুধু ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে ১৫৩জন ডেঙ্গু রোগীর। প্রতিদিনই বরিশালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। মঙ্গলবার রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বরিশাল মেডিকেলে এ রোগে মারা যায় আরও দুজন। গতকাল পর্যন্ত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গজ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ১০১জন।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১৫৩ জন। চিকিৎসক জানান, চিকিৎসাধীন প্রত্যেক রোগীকে আলাদাভাবে মশারি দেয়া হচ্ছে। সব রোগীই ঢাকা থেকে সেখানে গেছেন। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা একটি কর্ণার খুলেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এপর্যন্ত ১৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ঢাকা থেকে গেছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এরইমধ্যে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কীট পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আলকরণ এলাকায় জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে নয় দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৫০ জনকে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে মঙ্গলবার সকালে দু’জনকে ঢাকায় আনা হয়েছে। চিকিৎসক জানান, রোগীদের জন্য মশারীর ব্যবস্থা করা সহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রনে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬০জন ডেঙ্গু রোগী।হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সিলেটেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬জন ডেঙ্গু রোগী। সাতক্ষীরায় ১৯ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এসব রোগীর অধিকাংশই ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় ফিরে গেছেন সাতক্ষীরায়।
বরগুনায় ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত। চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ের বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দেয়া সম্ভব। কিন্তু গুরুতর রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠাতে হয়। শেরপুর জেলা হাসপাতালে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। প্রতিদিনই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের জন্য আলাদা ইউনিট করা হয়েছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ১৪ ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পটুয়াখালীতে ২১জন রোগী ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৬জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। খাগড়াছড়িতে ৬জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছে। তবে এ নিয়ে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকের। ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগছে লক্ষ্মীপুরবাসীও। জেলার সদর হাসপাতালে নয়জন ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসা চলছে।
কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা॥ কাউখালী উপজেলার গোসনতারা গ্রামের আদম আলীর পুত্র সোহেল (১৫) ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করে। জানা যায়, সোহেল ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার প্রথমে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয় পরে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার মারা যায়। উপজেলাবাসী ডেঙ্গুর আতংকে ভুগছে। দিনের বেলায়ও অনেকেই তার শিশু সন্তান নিয়ে মশারী ব্যবহার করছে।
কুমিল্লা অফিস : কুমিল্লায় ডেঙ্গু আক্রান্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ৬০ জন রোগী রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান।
বুধবার দুপুরে কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে, ‘ডেঙ্গু জ্বর ও আমাদের করণীয়’ উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা জানান। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর। গত এক সাপ্তাহের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তিন গুন বেড়েছে।
কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী জানান, আমাদের এখানে যেসব ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন সকলে সঠিক সেবা পাচ্ছেন। ডেঙ্গু চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সকল ব্যবস্থা আমাদের এখানে রয়েছে।কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, ৬০জন ডেঙ্গু রোগী এখন পর্যন্ত সবাই আশঙ্কামুক্ত। ডেঙ্গু মুক্ত সমাজ গড়তে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখতে হবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত যারা ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পেয়েছি, কেউ কুমিল্লা আক্রান্ত হননি। বেশির ভাগই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা চিকিৎসাধীন আছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে গত কয়েকদিন আগে আরো জানা যায় কুমিল্লা পরিক্ষা নীরিক্ষায় ডেঙ্গু রোগবাহী এডিস মশায় ডেঙ্গু লার্ভ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু রোধে উপজেলা ভিত্তিক নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করা সহ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালে ৭জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। হাসপাতালের টিএইচও (ভারপ্রাপ্ত) ডা.বখতিয়ার আল মামুন জানান, গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার বরিয়ালী গ্রামের রুস্তুম তালুকদারের ছেলে নির্জন তালুকদার (২০), যবসেন গ্রামের শাহজালাল পাইকের ছেলে রোমান পাইক (১৩), দক্ষিণ নাঠৈ গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২১) আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়। ডা.বখতিয়ার আল মামুন তাদের প্রাথমিক চিকিৎসায় তাদের শরীরে ডেঙ্গু রোগ ধরা পরে বলে জানান। এছাড়াও গত চারদিন আগে বড়কোঠা গ্রামের আলমগীর বেপারীর ছেলে মামুন বেপারী (২৫) ও হাওলা গ্রামের গৌরাঙ্গ হালদারের ছেলে অজয় হালদার(১৮), দক্ষিণ গৈলা গ্রামের ইউছুব সরদারের ছেলে ইসমাইল সরদার (৮) ও আস্কর গ্রামের মনিন্দ্র অধিকারীর ছেলে হৃদয় অধিকারী (২৭) আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়। তাদের সবাইকে বরিশাল শেবাচিমে প্রেরন করা হয়।
মেহেরপুর সংবাদদাতা : মেহেরপুর জেলাতেও তিন জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এক জন এবং আজ বুধবার (৩১ জুলাই) আরো দু’জনের শরীরে ডেঙ্গু চিহ্নিত হয়েছে। তাদেরকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে।
এরা হলেন- গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় পাড়ার হোসেন আলীর স্ত্রী উম্বিয়া খাতুন (৩৫), চৌগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নাছিমা খাতুন (৫৫) ও কষবা গ্রামের বাসিন্দা ধানখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সুফিয়া খাতুন (৪৮)। তাদেরকে হাসপাতালের একটি কেবিনে আলাদা করে মশারীর মধ্যে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নওগাঁ সংবাদদাতা : নওগাঁ সদর হাসপাতালে গতকাল বুধবার ১জনসহ গত ৫ দিনে ১১জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাঁকী ৮জন নওগাঁ সদর হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রওশন আরা খানম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ১১জন রোগীর নয়জনই ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে নওগাঁয় আসেন। তবে এখন পর্যন্ত জেলার ১০ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ নওগাঁ সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ডিভাইস না থাকায় শহরের বেসরকারি দুইটি ক্লিনিকে পরীক্ষা ও শনাক্ত করা হচ্ছে। জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তরা হলেন-জেলার মহাদেবপুর উপজেলা সদরের মোরশেদ আলী (৩৫), পতœীতলার জুটুবটি গ্রামের সিহাব উদ্দিন (৩১), সদরের তিলকপুর গ্রামের সুখি বানু (২৩) সদরের চকদেবপাড়ার সাংবাদিক শেখ আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫), মহাদেবপুরের মুঘইল গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান (২৫), রানীনগরের আবাদপুকুর গ্রামের কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান (২০), সদর উপজেলার চাকলা কালুপাড়া গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সিফাইত জাহান (২০), মান্দার তুরাগবাড়িয়া গ্রামের লাইলী বেগম (৩২), নওগাঁ সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হাট নওগাঁর বাসিন্দা ইয়াসির আরাফাত সবুজের স্ত্রী সাবিহা খাতুন (২২) সহ মোট ১১জন।
নরসিংদী সংবাদদাতা: নরসিংদী জেলাজুড়ে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতংক বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে নরসিংদী জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নেই। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পর থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে কোন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়নি।
নরসিংদী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই পর্যন্ত নরসিংদীতে ২১ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ৪ জন ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৩ জন ভর্তি রয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৭ জন। অন্যরা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সরেজমিনে নরসিংদীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, আক্রান্ত রোগীদের মশারীর ভিতরে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হয়েছে। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষে মশার কয়েল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে ডেঙ্গু শনাক্ত করার তেমন কোন লজিস্টিক সাপোর্ট ও রিএজেণ্টস সরবরাহ নেই। শুধুমাত্র মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ডেঙ্গুর জীবানু পরীক্ষা করা হচ্ছে। হঠাৎ করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা সংকটের মধ্যেও আন্তরিকতা দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের অধিকাংশই ছাত্র এবং চাকরিজীবি। ঢাকায় লেখাপড়া অথবা চাকরি করেন এমন ব্যক্তিদেরই বেশী আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। নরসিংদী রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়ায় আক্রান্তরা কোন না কোন ভাবে ঢাকা থেকে ডেঙ্গুর জীবানু বহন করে নিয়ে এসেছেন। নরসিংদীবাসীরা তেমন বিপদজনক পর্যায়ে নেই। তবে সবরকম প্রস্তুতি আমাদের আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি দুটি হাসপাতাল নরসিংদী সদর ও ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্ত করার লজিস্টিক সাপোর্ট ও রিএজেণ্ট নেই। আক্রান্তরা এই দুটি হাসপাতালে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শহরের বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেণ্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি ৫০০ টাকা হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ১৫০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ আছে। অনেক ক্ষেত্রে, এসব বেসরকারি চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার নির্ধারিত ফি নেওয়ার কথা উঠলে স্টিপ না থাকার অজুহাতে পরীক্ষা করা হচ্ছে না।
নরসিংদীর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ আমীরুল হক বলেন, সার্বিকভাবে এখানকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্যান্য জেলার তুলনায় নিয়ন্ত্রণে আছে। ২১ জন ছাড়া আর কোন ব্যক্তির ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর আমরা পাইনি। এখানে একটা ডেঙ্গু রোগীও পাওয়া যেত না, যদি নরসিংদী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা না হতো। আমাদের হাসপাতালগুলোতে দ্রুতই সব ধরনের রিএজেণ্ট ও লজিস্টিক সাপোর্ট চলে আসার কথা রয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।