আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছের তৈরি অক্সিজেন গ্রহণ করেই আমরা বেঁচে আছি। ফুলের সৌন্দর্য মনকে প্রফুল্ল করে। ফল মানুষের পুস্টি জোগায়। বৃক্ষ আমাদের ছায়া দেয়। অকাজের গাছটিও জ্বালানি হিসেবে মানুষের উপকারে আসে। শিল্পের নানা উপাদান হিসেবে গাছ ও তার ফল ব্যবহার হয়। গাছের সীমাহীন গুরুত্ব সত্ত্বেও আমাদের বনগুলোর অবস্থা আজ হতাশাজনক। বিখ্যাত সুন্দরবন আমাদের গর্ব। কিন্তু এখন আর সুন্দরবনের সেই সৌন্দর্য নেই। ভাওয়ালের শাল-গজারীর বন ধ্বংসের পথে। মধুপুর আর সিলেটের বনের অবস্থাও ভালো নয়। পাবর্ত্য জেলাগুলোর বনের অবস্থা কারও অজানা নয়। র্নিবিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাহাড়ধস ও নদী ভাঙনের ঘটনা, ধ্বংস হচ্ছে বসতবাড়ি, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এভাবে বাংলাদেশ হারাতে বসেছে তার চিরচেনা রূপ।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে পার্বত্য বনাঞ্চলে প্রবেশ করে বন উজাড় করে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে। তারা জ্বালানি ও জীবন নির্বাহের জন্য কী পরিমাণ বৃক্ষনিধন করছে তা কল্পনার বাইরে। তাই চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনের অবস্থাও করুণ। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের আয়তনের এক-চতুর্থাংশ বনাঞ্চল থাকা জরুরি। আমাদের রয়েছে মাত্র ১২-১৫ শতাংশ বনভূমি। বর্তমান বাস্তবতায় এর পরিমাণও কমছে। এ কারণে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের নিত্যসঙ্গী। এখনই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবা দরকার। তা না হলে এক সময় দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যেতে পারে, যা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য বিশাল হুমকিস্বরূপ
ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে:
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম। গাছপালা ও বনভূমি যেমনিভাবে আমাদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে ঠিক তেমনিভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকেও পরিবেশকে রক্ষা করে।
গাছপালা ও বনভূমি ছাড়া মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণ অসম্ভব। যথেষ্ট পরিমাণে গাছপালা ও বনভূমি না থাকলে পরিবেশ হবে উষ্ণ, পৃথিবী হবে মরুভূমি- ধূলিকাময়। এতে পরিবেশ হবে বিপন্ন। মানুষ পতিত হবে বহুল বিপর্যয়ে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশের মোট বনভূমির আয়তন হচ্ছে- ১৭.৪ ভাগ। এদেশের ভারি জনসংখ্যার তুলনায় বনভূমি খুবই কম। দিন দিন কমে যাচ্ছে বনভূমির আয়তন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু কিছু কেটে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে। মানুষের কাঠ ও জ্বালানী কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে বনভূমি। নগরায়ন ও শহরায়নের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলেও ধ্বংস হচ্ছে বনভূমি। বিলুপ্ত হচ্ছে জীবজন্ত ও বন্যপ্রাণী। এতে হুমকির মুখে পড়ছে দেশ ও দেশের মানুষ। শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবী থেকেও বনভূমি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তাই এখনই উদ্যোগ নিতে হবে বেশি বেশি বৃক্ষ রোপন করে বাংলাদেশের বনভূমিকে মোট আয়তনের ২৫ ভাগে নিয়ে যাওয়ার।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ইসলাম বৃক্ষ রোপনের তাগাদা দিয়েছে। এমনকি বৃ্ক্ষ রোপনকে সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে। বৃক্ষ রোপনের পর যতদিন পর্যন্ত মানুষ ও জীবজন্তু ওই বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত ফল ভোগ করবে, ছায়া পাবে, ততদিন পর্যন্ত রোপনকারীর আমলনামায় সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব লেখা হতে থাকবে।
সহিহ বোখারির হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি বৃক্ষ রোপন করে কিংবা ফসল উৎপন্ন করে আর তা থেকে মানুষ ও পশু-পাখি ভক্ষণ করে, তাহলে উৎপন্নকারীর আমলনামায় তা সদকার সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।’
পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার জন্যে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ফসলাদি উৎপন্ন করার জন্যে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে পরিমিত বৃষ্টি বর্ষণ করেন। যাতে মাটি রসালো হয় এবং গাছপালা, তরুলতা সতেজ হয়ে ফুল-ফল উৎপন্ন ও ছায়াদান করে পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্যে উৎপন্ন করি ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্ব প্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ –সূরা নাহল: ১১
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি ঊষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা। তারা কি দেখে না।’ -সূরা সেজদাহ: ২৭
এ সমস্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা পরিবেশের ভারসাম্যকে সতেজ করেন। তাই এটাকে রক্ষা করার, পরিচর্চা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আরেকটি হাদিস দ্বারা পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের তাগাদা সম্পর্কে বুঝা যায়। বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব বুঝাতে তিনি বলেন, ‘যদি নিশ্চতভাবে জানো যে, কিয়ামত এসে গেছে এবং ওই মুহূর্তে গাছের চাড়া হাতে থাকে আর তা রোপন করা সম্ভব হয় তাহলে তা রোপন করে দিবে।’
বর্ণিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) অযথা কোনো গাছের পাতা ছিড়তেও নিষেধ করেছেন। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)
গাছ আমাদের পরম বন্ধু:
আজ তোমরা জানবে গাছ সম্পর্কে। বলতে পারো গাছ কী? গাছ বলতে বোঝায় বৃক্ষ, তরু বা লতাগুল্ম প্রভৃতিকে। গাছ বিভিন্নভাবে আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। গাছ বেঁচে থাকার বিশেষ উপকরণ অক্সিজেনের জোগান,দেয়।
মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত, রুটি, পাউরুটি আসে কোথা থেকে? প্রধান শস্য ধান, গম ইত্যাদি থেকে। তা ছাড়া নানা রকম তেলও আমরা পাই শস্য থেকে। এটি আমরা ব্যবহার করি ভোজ্যতেল হিসেবে, সাবান, রঙ, বার্নিশ প্রভৃতি তৈরির কাজে।
মসলাপাতির সরবরাহ আসে কোথা থেকে? উদ্ভিদ জগৎ থেকে। আমরা চিনি পাই আখ বা বিটজাতীয় গাছ থেকে। গাছ থেকে পাওয়া চা, কফি দিয়ে আমাদের কান্তি দূর হয়।
কাঠ, বাঁশ, দড়ি সবই পাওয়া যায় গাছপালা থেকে। কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় আসবাবপত্র, নৌকা,দরজা,এমনকি,ঘরবাড়ি।
পোশাক বা কাপড় তৈরির প্রয়োজনীয় তুলা আসে গাছ থেকে। নকল সিল্ক আর রেয়ন পাওয়া যায় কাঠ থেকে। নাইলন আর টেরিলিন তৈরি করা হয় গাছপালা থেকে উৎপন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে। গাছ থেকে পাওয়া যায় পাট এবং এজাতীয় আঁশ। এগুলোর রয়েছে বহুল ব্যবহার। চট, বস্তা, কাপড়, রশিÑ কত কী যে তৈরি হয়!
বিভিন্ন ওষুধের জন্যও মানুষ গাছপালার ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক জমানার অদ্ভুত ক্ষমতার ওষুধ পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, অরিওমাইসিন ইত্যাদি তৈরি করা হয় নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদ থেকে। অক্সিজেন যেকোনো প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আর এটা জোগায় সবুজ গাছপালা। কী করে? সবুজ গাছপালা তাদের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়ায় বাতাস থেকে অপকারী কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নেয়, আর পাতার সূক্ষ্ম ছিদ্রপথে ছেড়ে দেয় অক্সিজেন। এভাবে অনেক অক্সিজেনের জোগান আসে। বাতাসে কমে আসা অক্সিজেন গাছপালা ক্রমাগত পূর্ণ না করলে পৃথিবীর অক্সিজেন অনেক আগেই নিঃশেষ হয়ে যেত। আকাশ ভরে উঠত অনিষ্টকর কার্বন ডাই-অক্সাইডে। এর ফলে সৃষ্টি হতো ধ্বংস। এ ছাড়া গাছপালা, মানুষ এবং সেই সাথে অন্যান্য প্রাণীর প্রধান খাদ্য।
জ্বালানি কাঠ, কয়লা, লেখার কাগজ, রবার, কর্ক ইত্যাদি রাশি রাশি জিনিস আসে গাছপালা থেকে। মানুষ আর অন্যান্য প্রাণীর এই জগতে বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠিই যেন গাছপালার হাতে! তাই গাছ আমাদের বন্ধু।
মানুষের বেঁচে থাকার তাগিদেই গাছের প্রতি যতœশীল হওয়া দরকার। আর প্রয়োজন বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ।
বৃষ্টির সাথে গাছের সম্পর্ক:-
“মেঘ মাদলে ভরা বাদলে
বরষা বুঝি আসে ওই।
জল বরণে তৃষিত
মন ভিজিয়ে হাসে ওই।”
বৃষ্টির সৌন্দর্যের দিক থেকে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের মত ভাগ্যবান মানুষ মনে হয় পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সব দেশে তেমন বৃষ্টি হয় না। প্রায় দেশেই তুষারপাত হয়। বরফে ঢাকা, কিংবা মাইলের পর মাইল মরুভূমি। আবার সব দেশে টিনের চাল নেই। বাংলাদেশের মানুষদের জন্য আশ্চর্য এক সমাবেশ ঘটেছে ফোটায় ফোটায় বৃষ্টি আর টিনের চাল। ঝমঝম করে যখন টিনের চালে বৃষ্টি পড়ে তখন যে কী স্বর্গীয় এক সুখানুভূতি হয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বৃষ্টি এতোটাই পাগলকরা যে তার প্রেমে একজন পাকিস্তানিকেও বাংলাদেশে থেকে যেতে দেখা যায়। [১]
বৃষ্টি ব্যাপারটা এতই সুন্দর মনোহর আর গ্রহণযোগ্য যে অনেক লেখক কবি শিল্পীই এটা নিয়ে কিছু না কিছু সৃষ্টিকর্ম করেছেন। তাদের বেশিরভাগই বৃষ্টির সৌন্দর্য বৃষ্টির কাব্যিক বর্ণনা। বৃষ্টির ভেতরকার রসায়ন, বৃষ্টির ভেতরের ভৌতবিজ্ঞান, বৃষ্টির কলাকৌশল নিয়ে সে তুলনায় খুব কমই আলোচনা হয়েছে। আমরা আজকে বৃষ্টির ভেতরের বিজ্ঞান, বৃষ্টির মেকানিজম সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে যাচ্ছি। বৃষ্টির ভেতরের বিজ্ঞান একটা ক্লাসিক কবিতা বা উপন্যাস থেকে কোনো দিক থেকে কম মনোহর নয়।
পৃথিবীর চার ভাগের প্রায় তিন ভাগই সমুদ্র। সে সমুদ্রে অবিরত সূর্যের আলো এসে পড়ে। সূর্যের সে আলোকের তেজ প্রতিনিয়ত সমুদ্রের পানিকে বাষ্প করে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু সমুদ্রই না, মাঠ-ঘাট, নদী-নালা, থেকেও বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় পানি বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এমনকি গাছের পাতা থেকেও জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পানির কণা বাতাসে মিশছে। গাছ তার মূল দিয়ে মাটির নিচ হতে পানি সংগ্রহ করে। কিছুটা পানি তার নিজের কাজে লাগায় বাকি বেশখানিকটা পানি তার কাজে লাগে না। অবশিষ্ট সেই পানি সে ছেড়ে দেয় বায়ুমণ্ডলে। এমন নানা উপায়ে আসা বায়ুমণ্ডলের সকল বাষ্প-রূপ পানি আস্তে আস্তে ওঠে যায় উপরে। উপরে গিয়ে বিশাল যজ্ঞ, নানান শর্ত সাপেক্ষে সে মাঝে মাঝে বৃষ্টি, মাঝে মাঝে তুষার, মাঝে মাঝে শিলা হয়ে ঝড়ে পড়ে। একই জিনিসের নানান রূপ। পদার্থ বিজ্ঞানে এই নিয়ে বিস্তারিত অনেক আলোচনা আছে।
পরোক্ষ ভাবে গাছ আমাদের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে:–
কয়েকটি গাছের পরিবেশের ক্ষতিকর জিনিস গুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নমুনা হিসেবে দেখানো হলো__
পিসলিলি : সাপের ফনার মতো দেখতে ফুলটির নামই পিসলিলি। দেখতে খুব সুন্দর এই ফুলটির পরিচর্যা করা খুবই সহজ। যে কোন বাড়িতে উজ্জ্বল করতে পারে এই ফুল। খুব কম তাপমাত্রা এমনকি ছায়াময় পরিবেশেও বাঁচতে পারে বলে এই ফুল ঘরের ভেতর রাখা যায়। ঘরের ভেতরের বিষাক্ত বাতাস কমিয়ে দিতে পারে এই গাছ। চমৎকার বায়ু পরিশোধক গাছ এটি। এটি সূর্যের আলোতে না রাখাই ভাল। স্বাভাবিক পরিমাণে পানি দিলেই যথেষ্ট। ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে। ফলে ইনডোর প্লান্ট হিসেবে এর কদর রয়েছে। গ্রীষ্মকালে এর ফুল ফোটে। তাই গাছটি বাড়িতে থাকলে আপনি সর্বদা সুগন্ধে আচ্ছন্ন থাকতে পারবেন।
ক্যাকটাস : ক্যাকটাসের জন্ম আমেরিকায়। এটি মরুভূমির গাছ। ক্যাকটাস ঘরের ভেতর রাখা যায়। নিয়মিত পানি দেয়া ছাড়া তেমন যতেœর প্রয়োজন পড়ে না। ক্যাকটাস আপনার ঘর, অফিসকে সাজিয়ে রাখার মতো গাছ। কাঁটাযুক্ত শরীর নিয়েও আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে এই গাছ। ক্যাকটাস গাছ বেশি আলো পছন্দ করে বলে বেশি আলো আছে এমন জানালার কাছে রাখা যায়।
মানি প্লান্ট : গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতসহ সকল আবহাওয়ার সব ধরনের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে মানি প্লান্ট। ভেতরে-বাইরে, রোদেও বেড়ে ওঠে এই গাছ। ঘর-বাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে বাড়ির গেট, ছাদ, ফ্রিজের ওপর এ গাছ রাখা যায়। গবেষকদের মতে, বসতবাড়ি, অফিসে মানি প্লান্ট রাখলে ক্ষতিকারক সিএফসি ও ওজন গ্যাস শুষে নেয় এবং এসব ক্ষতিকারক গ্যাস থেকে আমাদের রক্ষা করে।
প্রকৃত পক্ষে গাছ হলো শ্রেষ্ঠ উপহার:–
দাওয়াত খেয়ে একে একে অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করছেন আর তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে গাছের চারা। গত বছরের শেষ দিনে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় একটি বউভাতের অনুষ্ঠানে এমন মনোরম দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বয়ং বর-কনে অতিথিদের হাতে এ উপহার তুলে দেন। কাউকে একটি, কাউকে একাধিক চারা উপহার দেওয়া হয়।
সত্যিই, কী সুন্দর একটি উদ্যোগ! ২ জানুয়ারি প্রথম আলোয় মন ভালো করা এই খবর ছাপা হয়। খবরে বলা হয়, বউভাতের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর কর্মীরা। তাঁরাই উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন ৫০০ ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা। পরে ওই পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীদের সম্মতিতেই বিয়ের আয়োজনে আসা অতিথিদের গাছগুলো ফিরতি উপহার হিসেবে তুলে দেন নবদম্পতি।
খবরটি পড়ে প্রচণ্ড উদ্দীপিত হই। প্রায় প্রতি মাসেই আমার কোনো না কোনো দাওয়াত থাকে। হয় কারও জন্মদিন, কারও বিয়ে বা কারও বিবাহবার্ষিকী। উপহার হিসেবে কত কীই-না দিই তাঁদের। বিছানার চাদর, কাচের বাসনকোসন, কাপ সেট, গ্লাস সেট, ঘনিষ্ঠজন হলে সোনার দুল, আংটি আরও কত-কী। কিন্তু উপহার হিসেবে গাছের চারা দেওয়ার কথা তো কখনো ভাবনায় আসেনি! এখন তো আমার মনে হচ্ছে, এর চেয়ে ভালো উপহার আর কিছুই হতে পারে না।
বিভাগ ভিত্তিক বনভূমির তথ্য
চট্টগ্রাম বিভাগ ৪৩% , খুলনা বিভাগ ৩৮% , ঢাকা বিভাগ ৭%, সিলেট বিভাগ ৬% বরিশাল ৩% , রাজশাহী বিভাগ ২%
রাজশাহী বিভাগে বনভূমির পরিমাণ কম থাকার কারণে, রাজশাহী তে এবছরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এবছরের প্রথম দিকে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনে কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার জন্য প্রায় ৫৬১ টি গাছ কাটার অভিযান শুরু করেছিল। কিন্তু স্থানীয় লোকজন গাছ কাটা বন্ধ উপলক্ষে মানববন্ধন করে শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত করেন। তাই বলা যায় আমরা নিজেরাই আমাদের প্রয়োজনে সুন্দর পৃথিবীকে গড়েছি, আবার আমাদের প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে তা আমরা ধ্বংস করছি।
বৈশ্বিক উষ্ণতায় বিপন্ন পৃথিবী :
১. ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশেই প্রায় ৪ কোটি ৩২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে, যা মোট জনসংখ্যার ৩০%।
২. বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০৫০ সালে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৩ লাখে।
৩. পৃথিবীতে মানুষ যে হারে বাড়ছে, গাছপালা ও পরিবেশ সে হারে বাড়ছে না; যার ফলে নির্মল সবুজ পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও কার্বন বৃদ্ধিজনিত কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, সিডর, আইলা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, বন্যা, নদীভাঙন ও ভূমিকম্প। এতে করে গোটা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকূলের প্রাণ সংহার ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনজ, কৃষিজাত দ্রব্য, স্থাবর-অস্থাবর বিশাল সম্পদরাশি।
৪. ওয়াল্ড ভিশন, ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রাম, বিশব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দরিদ্রের হার বেশি। শুধুমাত্র একটি উপকূলীয় জেলাতেই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখে। বাংলাদেশেই ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার, ১৯৭০ সালে সাইক্লোনে ৫ লাখ, ২০০৯ সালে আইলায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। গত মে ২০১৬ সালে ৪ দিনের ব্যবধানে বজ্রপাতেই মৃতের সংখ্যা ৯১ পৌঁছায়।
৫. ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ১৫তম বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতৃবৃন্দ আইপিসিসির ২০০৭ সালে প্রকাশিত চতুর্থ এসেসমেন্ট রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার সচিত্র গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন।
৬. ২০১০ সালে ব্রিটেনের ঝুঁকি বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাপেলক্রপ’ জলবায়ুবিষয়ক ৪০টির বেশি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৩০ বছরে সর্বাধিক ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে ১০টি দেশই এশিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।
৭. ২০১১ সালে দ্য ফাস্ট বাংলাদেশ ফরেস্ট্রিক কংগ্রেসের তথ্যমতে জানা যায়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বনভূমি বাংলাদেশে থাকা দরকার ২৫%, সেখানে অর্থমন্ত্রী বললেন ৯% আছে।
৮. পরিবেশবাদিদের তথ্যমতে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন প্রায় ১.৫ লাখ গাছ কর্তন হচ্ছে। আর লাগানো হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছরে দেশ মরাভূমিতে পরিণত হবে।
৯. গত ১৭-০৯-২০১৩ সালে নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত ‘নদীভাঙন ও সর্বহারা মানুষ প্রবন্ধে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতি বছর নদীভাঙনে ১ লাখ লোক গৃহহারা হচ্ছে- প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার।’( সূত্র: উইকিপিডিয়া)
প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ :
১. বিশ্ব যখন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ওপর ভর করে এগিয়ে চলেছে, সেখানে বাংলাদেশের অর্থ উপার্জনের উৎসগুলো ঝিমিয়ে পড়ছে একের পর এক। দেশের চা, চামড়া, মৎস্য, চিনি, পাট, রাঁধুনী মশলা তথা কৃষিশিল্প; এমনকি পোশাক শিল্পের নিম্নগামিতা জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
২. দেশের ৫ কোটি যুবক আজ চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও কারিগরি যুব ও যুবারা চাকরির আশায় শহরমুখী হচ্ছে এবং জমি-জিরাত বিক্রি করে মোটা অংকের ঘুষ প্রদানের প্রস্তুতিতে অভ্যস্ত হচ্ছে। চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে অনেকেই সর্বস্বান্ত এবং নিরূপায় হয়ে অবৈধ পন্থায় সাগরপথে ভিন দেশে অজনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ মূল্যবান জীবন হারিয়েছেন।
৩. এমতাবস্থায় দেশের কর্মক্ষম ৫ কোটি বেকার যুব ও যুবাসহ অন্যান্য আরও বেকার মানুষের সম্মানজনক কর্মসংস্থান সৃষ্টি খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৫-১০ বছর মেয়াদি ‘সোনার বাংলায় বনায়ন কর্মসূচি’ বা প্রকল্প চালু করে বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে উল্লেখিত জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা অত্যাবশ্যক। এতে করে রুটি-রুজি, জীবন-জীবিকা দুটোই নিশ্চিত হতে পারে।
৪. দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি, যে মাটিতে একটি চেপ্টা শুকনো লাউয়ের বীজ বপন করলে অল্প দিনেই বড় বড় লাউ ও সবজি উৎপন্ন হয়, সেদেশে মাটিকে ব্যবহার করেই আমাদের এগোতে হবে, দোসরা কোনো পথ আর নেই। কাজেই দেশের প্রতিটি এলাকার আবাদযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে কাজে লাগাতে দেশের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অপরিহার্য।
৫. আমাদের দেশে এখনও যে পরিমাণ ভেষজ ও ঔষুধি গাছ আছে, সে গাছের ভেষজ কাঁচামাল সংগ্রহ, পরিশোধন ও ওষুধ তৈরিতে মনোনিবেশ করতে সবকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এই ওষুধ শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। মূলত এ শিল্পকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হলে জীবন-জীবিকা দু’কূলই রক্ষা হবে।
বৃক্ষ ও ওষুধ শিল্প সম্প্রসারণে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ব্যাপক কর্মসূচি নেয়ার মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী সোনার চেয়ে দামি গুণগতমানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে বিদেশে রফতদানি করে প্রচুর অর্থ উপার্জনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার যথেষ্ট সুযোগ বিদ্যমান। এতে করেও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা হবে।
পরিশেষে বলা যায়, সত্যিকার অর্থে বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে গাছ লাগাতে হবে নিজের স্বার্থে ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে। বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষরোপণে সরকারি উদ্যোগে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সব পেশাজীবী মানুষের মধ্যে বৃক্ষরোপণকে একটি কার্যকর আন্দোলন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা, বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক উন্নত নার্সারি সৃজন এবং সবার আন্তরিকতাই পারে আমাদের কাঙ্ক্ষিত অরণ্য ফিরিয়ে দিতে।
আবু সাইদ বিশ্বাস: সাংবাদিক
বৃক্ষরোপন উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল –
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম মারুফ বিল্লাহ ও সামাজিক বন বিভাগের শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের দায়িত্বে বন কর্মকর্তা মো. আওছাফুর রহমান। উপস্থিত দিলেন, জেলা স্কাউটের সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান, কমিশনার এমদাদুল হক, জেলা রোভারের কউন্সিলর আবু তালেবসাংবাদিক এমএ নেওয়াজ, উক্ত বৃক্ষ রোপন অভিযানে ১০টি কলেজের প্রায় অর্ধ শতাধিক রোভার স্কাউট অংশগ্রহণ করে।