ক্রাইমর্বাতা রির্পোট: দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে উদ্বিগ্ন মানুষ এখন অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছেন। এরমধ্যে একটা সাধারণ প্রশ্ন, এডিস মশা দিনে কামড়ায় কিনা? তারচেয়েও বড় প্রশ্ন এডিস মশা দেখতে কেমন? মশা অতি ক্ষুদ্রকায় পতঙ্গ হওয়ায় তার রূপ-প্রজাতি বিশ্লেষণ করে চিনে ওঠা বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার, অজান্তেই এডিস নয় এমন মশার ছবিও এসংক্রান্ত সংবাদের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ ধরনের ভুলের কারণে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়েও সঠিক ছবিটা নাও পাওয়া যেতে পারে। তাহলে এডিস মশা দেখতে কেমন? এই মশা কি দিনের বেলাতেও কামড়ায়?
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কয়েকটি বিষয় জানা থাকলে এডিস মশাকে সহজেই চেনা যাবে। তারা আরও বলছেন, এডিস দিনের বেলার পাশাপাশি রাতে একেবারেই কামড়ায় না এমনটাও নয়। অর্থাৎ সাধারণত ভোর বা সন্ধ্যায় কামড়ালেও এডিস মশা দিনে-রাতে সবসময়ই কামড়াতে পারে।
গত একমাস ধরে ডেঙ্গু রাজধানীতে একটি আতঙ্কের নাম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব বিশ্লেষণ বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বৎসর অনেক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও এবার সেটি মাত্রা ছাড়িয়েছে । রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত জুনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৬৩ জন। জুলাইয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জনে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। পাশাপাশি এ মাসে গত ৫ দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ।
বর্তমানে জাপানে অবস্থানরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস ও ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ২০১১ সালেই এক গবেষণায় তারা এর ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারের গণস্বাস্থ্য বিভাগ এবং আইসিডিডিআরবি-র যৌথ উদ্যোগে ঢাকার ডেঙ্গু ঝুঁকি নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছিল। ১৪টি ওয়ার্ড থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেই ডিম পরীক্ষাগারে ফুটিয়ে মশার লার্ভা বড় করে নিশ্চিত হয়েছিলেন সেগুলো এডিস মশা। তখন সেই গবেষণার অনেক উপসংহারের মধ্যে একটা কথা বলা হয়েছিলো ‘Dhaka is sitting on a Dengue time-bomb’।
আসল ডেঙ্গু মশা দেখতে কেমন তার একটি ছবি তার পোস্টে সেঁটে দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণা চলাকালীন সময়ে নমুনা সংগ্রহের কয়েকটি ছবিও দিয়েছেন ফেসবুকে। এই অধ্যাপক বলেছেন, সেই গবেষণায় রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট (ম্যাপিং) হিসাবে ছিলেন তিনি । ছবির মশাটি এডিস ইজিপ্টাই- ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী মশার প্রজাতি। একটি খালি হাউজিং প্লটে জন্মানো কচু গাছের ডগায় জমা পানি থেকে, আরেকটি নির্মাণাধীন বাড়ির নির্মাণ সামগ্রীতে জমা পানি থেকে এডিস মশার ডিম সংগ্রহের ছবিও তিনি দেন।
এডিস মশার সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি হুমায়ুন রেজা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ মশা চিনলে সতর্ক থাকা সহজ হবে। চেনার উপায় বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এই মশা অন্য মশাদের তুলনায় বেশি কালো হবে। পায়ে এবং পাশে সাদা ডোরাকাটা থাকবে। এবং এডিসের মাথার পেছন পাশের ওপরের দিকটাতে কাস্তে ধরনের সাদা দাগ থাকে। বাকি মশাদের মাঝ বরাবর সাদা দাগ চলে গেছে। এই দুটো চিহ্ন দেখেই বোঝা যায় কোনটা এডিস মশা আর কোনটা নয়।
এডিস মশা দিনের বেলা ছাড়া অন্য সময়ে কামড়ায় না এই তথ্য কতটা সঠিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত শব্দটা ব্যবহার করি। অর্থাৎ সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় না। তবে এরা দিনের বেলাতেও কামড়াতে পারে। কেননা ঘরের মধ্যে থাকে। কিন্তু খিদা লাগলে দিন আর রাত কী!’
উইকিপিডিয়ায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ৩,৫০০ এর বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে। এর মধ্যে যেসব মশা নিয়মিত মানুষকে কামড়ায় সেগুলো প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের শরীরে রোগজীবাণু সংক্রমণের বাহক হিসেবে কাজ করে। অন্য যেসব প্রজাতি নিয়মিত মানুষকে কামড়ায় না, কিন্তু অন্যান্য প্রাণীদের শরীরে রোগ সংক্রমণের বাহক, সেগুলো মূলত বিভিন্ন কারণে যেমন হঠাৎ বন ধ্বংস, বা বাসস্থান থেকে উৎখাত হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স, এডিস, হেমাগোগাস প্রভৃতি হচ্ছে রোগ সংক্রমণের বাহক হিসেবে কাজ করা মশাদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও সাধারণভাবে সবচেয়ে পরিচিত।