ক্রাইমর্বাতা রির্পোট : দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন কোন্ পর্যায়ে আছে, তা বোঝার জন্য বৃহস্পতিবারের একটি ঘটনাই যথেষ্ট। এদিন খোদ রাজধানীর দিলু রোডে বিয়ের আসরে এক বখাটের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন কনের বাবা। ওই বখাটে হঠাৎ করেই বিয়ের আসরে ঢুকে পড়ে কনেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কনের বাবা-মা এগিয়ে আসেন।
এ সময় বখাটে তরুণ তার সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকলে কনের বাবা-মা উভয়েই মারাত্মকভাবে জখম হন। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে বাবার মৃত্যু ঘটে, মুমূর্ষু মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
খবরে জানা যায়, বখাটে তরুণ বিয়ের আগের দিন কনের বাবাকে এই বলে হুমকি দিয়েছিল যে, তিনি তার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে পারবেন না। ঘাতককে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
এক কথায় বললে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়। খুন-ধর্ষণ, গুজবে বিশ্বাস করে গণপিটুনি ইত্যাদি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানীতে বিয়ের আসরে ঢুকে কনের বাবাকে হত্যা ও মাকে মারাত্মকভাবে জখম করার ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে দেশের একশ্রেণির তরুণ-যুবকের দুঃসাহসিকতা কোন পর্যায়ে উঠে গেছে।
বস্তুত, এখন আর দেশের প্রচলিত আইন-আদালতকে পাত্তাই দিচ্ছে না অপরাধী ও অপরাধপ্রবণরা। অপরাধমূলক ইচ্ছা বাস্তবায়নই তাদের শেষ কথা। অবস্থা এখন যে পর্যায়ে গেছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ দমনে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে থাকলে পরিস্থিতি যে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অনেকেই বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিলম্বিত বিচারই মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতার জন্ম দিচ্ছে। এ কথায় সত্যতা আছে বৈকি। গতকালেরই যুগান্তরে এই মর্মে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে যে, দেশে প্রতিদিন ১৫ ধরনের অপমৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
এগুলোর কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে মামলা বা জিডি হলেও জোরালো তদন্ত হয় না। অপমৃত্যুর কোনো ঘটনাই গুরুত্বহীন নয়, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে হত্যাকাণ্ডগুলোর দু’একটি গুরুত্ব পেলেও বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া দেখা যায় না। কোনো হত্যাকাণ্ড অথবা ধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ায় গুরুত্ব পেলেই কেবল সেটা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। আমরা মনে করি, প্রতিটি হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনাই গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া দরকার এবং প্রতিটিরই আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা উচিত।
মানুষ কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠল, কেন তার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে জিঘাংসা, কেন সে কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না- এসব বিষয় গবেষণার উপজীব্য হয়ে উঠেছে। দেশের চিন্তাবিদ, মনস্তত্ত্ববিদ ও গবেষকদের এখন উচিত পুরো বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা। বস্তুত অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে এককভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব নয়। মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নেতিবাচক দিকগুলো কীভাবে অপসারণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে সবাইকে। দরকার বড় ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের। দিলু রোডের হত্যাকাণ্ড আমাদের সে কথাই শেখাচ্ছে।যুগ।