স্বায়ত্তশাসন বাতিল ॥ অঞ্চল দুটি হবে কেন্দ্রশাসিত ॥ ব্যাপক সামরিক সমাবেশ কাশ্মীর ভেঙে দুই ভাগ করার ঘোষণা ভারতে

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিডোটঃ    ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যটিকে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাম নামে দু’ভাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোভিন্দ স্বাক্ষরও করেছেন। এ উপলক্ষে রাজ্যটিতে সামরিক সমাবেশ ঘটিয়েছে ভারত। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইসাথে বন্ধকরা হয়েছে স্কুল-কলেজ। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ, মিছিল। গৃহবন্দী করা হয়েছে কাশ্মীরের নেতৃবৃন্দকে। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরে গণহত্যার আশঙ্কা করছেন হুররিয়াত নেতৃবৃন্দ। বিবিসি/টাইমস অব ইন্ডিয়া/ইটিভি ভারত/পাকিস্তান টুডে।
ভারতীয় সংবিধানের যে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সেটি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সোমবার রাজ্যসভায় এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি।
ইতোমধ্যেই ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা বাতিল তথা স্বায়ত্তশাসন বাতিল, কাশ্মীর ভেঙে দুই ভাগ করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ এতে স্বাক্ষর করেছেন।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এতে তিনি ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করেন। ভারতীয় সংবিধানের এ দুই ধারাকে কাশ্মীরের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখন এ দুই ধারা বাতিল করে কাশ্মীরকে ভেঙে দুই টুকরো করার ঘোষণা দিয়েছেন অমিত শাহ। কাশ্মীর ভেঙে নতুন দুই রাজ্য হবে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ।
টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে ভারতকে কাশ্মীরের দখলদার বাহিনী হিসেবে প্রমাণ করেছে।
এদিকে ৩৭০ ধারা তুলে নিতে দেরি করা উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন অমিত শাহ। তিনি জানান, কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারানোর পর জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ হবে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। বিলটির ওপর ভোটাভুটি হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যসভার স্পিকার বেঙ্কাইয়া নাইডু। বিষয়টি নিয়ে আগামী ৭ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
স্বায়ত্তশাসন বাতিল, রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার এবং কাশ্মীর ভেঙে দুই টুকরো করার ঘোষণা দেওয়ার আগেই অঞ্চলটিতে ব্যাপক সামরিক সমাবেশ করে ভারত। নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলে গত সপ্তাহে কাশ্মীরে আধা সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৩৫ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর এসব বাড়তি সদস্যদের রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগর এবং কাশ্মীর উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে এমনকি গ্রামাঞ্চলেও মোতায়েন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ। রবিবার রাত থেকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে গৃহবন্দী করে রেখেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও নিজ বাড়িতে নজরদারির মধ্যে রয়েছেন সেখানকার আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও পিপলস কনফারেন্স পার্টির চেয়ারম্যান সাজাদ লোন। সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্পর্শকাতর এলাকায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে শ্রীনগর জেলায়।
রবিবার কাশ্মীরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্পর্শকাতর এলাকায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানের সঙ্গে সহিংসতা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বহু স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্রাবাস খালি করে ফেলারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীর পুলিশের দাবি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিন রাজ্য সরকারের এক নির্দেশনায় বলা হয় যেকোনও ধরণের সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ থাকবে। রবিবার মধ্যরাত থেকে শ্রীনগর জেলায় ১৪৪ ধারা কার্যকর করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক -মেহবুবা
বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর সংরক্ষণ বিল পেশকে ‘গণতন্ত্রের কালো দিন’ বললেন সেখানকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। গতকাল সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এরপরই টুইট করেন মেহবুবা মুফতি। তিনি লেখেন, ‘৩৭০ ধারা বিলোপ অসাংবিধানিক ও বে আইনি। রাজ্যের মানুষকে ভয় দেখিয়ে জম্মু-কাশ্মীর দখল করতে চায় কেন্দ্র। নতুন ভারতে ধর্মের নামে গণহত্যা চলছে। মানুষের কথা বলতে গিয়ে আমাকে যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী, রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়, তাহলে গর্বের সঙ্গে সেই তকমা আমি গ্রহণ করব।’ তিনি লেখেন, ‘এই ধারা রদ নিয়ে উল্লাস নিন্দনীয়। কাশ্মীরকে যে কথা দিয়েছিল তা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত ।’
অন্যদিকে, এই নিয়ে টুইট করেন অরুণ জেটলিও। তিনি লেখেন, ‘৩৭০ ধারা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে স্মরণীয়। এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু-কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে। ওখানে আরও বিনিয়োগ, শিল্প, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। আরও বেশি করে কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে । মানুষের উপার্জন বাড়বে। পৃথক মর্যদা একটি রাজ্যকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে পরিচালিত করে। কোনও গতিশীল জাতি এই পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে দেয় না।’
বিরোধীদের কটাক্ষ করে জেটলি বলেন, ‘এতদিন কাশ্মীরের মানুষের ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছিল কাশ্মীরের স্থানীয় নেতারা । ’

‘কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিচ্ছে বিজেপি’
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি-র বিরুদ্ধে কাশ্মীরে সব ধরনের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিসর্জন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। গতকাল সোমবার সকালে টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেন।
টুইটারে দেওয়া পোস্টে পি চিদাম্বরম বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের বিপর্যয় সম্পর্কে আমি সতর্ক করেছিলাম। অঞ্চলটির নেতাদের গৃহবন্দী করে সরকার একটি বার্তা দিতে চায়। আর তা হচ্ছে লক্ষ্য অর্জনে সেখানে সব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিসর্জন দেবে তারা। আমি এই গৃহবন্দীত্বের নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, দিন শেষ হওয়ার আগেই আমরা জানতে পারবো কাশ্মীরে বড় কোনও সংকট দেখা দেবে কি-না।
৪ আগস্ট রবিবার রাতে কাশ্মীরের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিককে গৃহবন্দী করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান মেহবুবা মুফতি, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ, পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজাদ লোন উল্লেখযোগ্য।
এর আগে রবিবার মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহ-সহ কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে নেওয়া প্রস্তাবে ভারত কাশ্মীর দখল করে নেওয়ার পর সংবিধানে অঞ্চলটিকে যে বাড়তি মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তা বাতিলে মোদি সরকারের তৎপরতার নিন্দা জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত এটি বাতিল করা হলে এর ‘পরিণাম’ ভোগ করতে হবেও বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন অঞ্চলটির নেতারা।
ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ দেয় ৩৫এ এবং ৩৭০ ধারা। এ দুই ধারা সরিয়ে নেওয়ার শঙ্কার মধ্যেই রবিবার সর্বদলীয় ওই বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে যে প্রস্তাব পাশ করা হয় সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, ধারা ৩৫এ এবং ৩৭০ বা জম্মু-কাশ্মীরের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখে অন্য যেসব সাংবিধানিক রক্ষাকবচ আছে, সেগুলো বজায় রাখতে সব দল একসঙ্গে কাজ করবে।
এদিকে ভারত শাসিত কাশ্মীরের বাসিন্দাদের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার বাতিলের আশঙ্কার মধ্যে রাজ্যের বহু স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট, নিষিদ্ধ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ। রবিবার রাত থেকে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে গৃহবন্দী করে রেখেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। নিজ বাড়িতে নজরদারির মধ্যে রয়েছেন সেখানকার আরেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও পিপলস কনফারেন্স পার্টির চেয়ারম্যান সাজাদ লোন।
‘সন্ত্রাসী হামলা’র আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্পর্শকাতর এলাকায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে শ্রীনগর জেলায়। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সোমবার কাশ্মির ইস্যুতে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
গত শুক্রবার (২ আগস্ট) কেন্দ্রীয় সরকার সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে সতর্ক করার পর কাশ্মির থেকে দ্রুত তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় রাজ্য সরকার। এরপরই স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। কাশ্মির ছাড়তে শুরু করে হাজার হাজার পর্যটক ও তীর্থযাত্রী। কাশ্মিরের রাজনীতিবিদরা আশঙ্কা করতে থাকেন, সরকার ভারতীয় সংবিধানের ৩৫ (এ) ধারা বাতিল করতে যাচ্ছে। এই ধারার মাধ্যমে কাশ্মিরের জনগণকে চাকরি ও ভূমিতে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে গভর্নর সত্য পাল মালিক তাদের জানিয়ে দেন, ৩৫ (এ) ধারা বাতিলের কোনও পরিকল্পনা নেই।
রবিবার কাশ্মিরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্পর্শকাতর এলাকায় কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানের সঙ্গে সহিংসতা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বহু স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্রাবাস খালি করে ফেলারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাশ্মির পুলিশের দাবি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকারের এক নির্দেশনায় বলা হয় যেকোনও ধরণের সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ থাকবে। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে কারফিউ জারির কথা বলা হলেও তা জারি করা হয়নি বলে জানানো হয় ওই নির্দেশনায়। তবে রবিবার মধ্যরাত থেকে শ্রীনগর জেলায় ১৪৪ ধারা কার্যকরের কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

কাশ্মীরে গণহত্যা চালাতে যাচ্ছে ভারত
কাশ্মীরিদের রক্ষায় বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্সের (এপিএইচসি) প্রধান সাইয়েদ আলী গিলানি।
তিনি অভিযোগ করেন, কাশ্মীরে বড় ধরনের গণহত্যা চালাতে যাচ্ছে ভারত।
শনিবার (৩ আগস্ট) টুইটারে দেয়া এক পোস্টে গিলানি বলেন, এই গ্রহে বসবাস করা সব মুসলমানের কাছে কাশ্মীরেদের রক্ষার বার্তা হিসেবে নিতে হবে এই টুইটকে’।
তিনি বলেন, ‘যদি সবাই আমরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হই, আর আপনারা নীরব থাকেন, তাতে মহান আল্লাহর কাছে আপনাদের জবাব দিতে হবে। কাশ্মীরে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা ঘটাতে যাচ্ছে ভারত। আল্লাহ আমাদের সুরক্ষা করুক।’
কাশ্মীরে অতিরিক্ত ভারতীয় সেনা মোতায়েনের পর সেখানের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে।
রাজ্যটির লোকজন নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বলে তাদের কাছে মনে হচ্ছে।
গত শুক্রবার (২ আগস্ট) রাজ্য সরকার সব পর্যটকদের অতিস ত্বর চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ হিন্দুদের একটি বড় তীর্থযাত্রায় সন্ত্রাসী হামলার গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে বলে সরকার দাবি করছে।
এদিকে কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তাল রাজ্যসভা
বিতর্কিত ৩৭০ ধারা বাতিল হতেই সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রতিবাদের ঝড় তুলল বিরোধীরা। সোমবার রাজ্যসভার অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব দেন। এই সংক্রান্ত বিলে সইও করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এরপর সংসদের ভিতরে তীব্র প্রতিবাদ দেখাতে থাকে বিরোধীরা। এই বিলের প্রতিবাদে সংবিধানের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলেন পিডিপির দুই সাংসদ মীর ফৈয়াজ ও নাজির আহমেদ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আটক করা হয়। মেহবুবা মুফতির দলের ওই সাংসদদের রাজ্যসভা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেন উপরাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভার বাইরে বেরিয়ে এসেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। নিজের জামাও ছিঁড়ে ফেলেন মীর ফৈয়াজ।
এদিকে রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ। তিনি বলেন, “আজ গণতন্ত্রের কালো দিন। স্বাধীনতার পর থেকে যে আত্মত্যাগ ও বলিদান সেনা এবং দেশের রাজনৈতিক নেতারা দিয়েছেন তার চরম অবমাননা করা হল। তবে পিডিপি সাংসদ মীর ফৈয়াজ ও নাজির আহমেদ সংবিধান ছেঁড়ার যে চেষ্টা করেছেন তার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা সবসময় সংবিধানের সঙ্গেই আছি। সংবিধান রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের প্রাণও বিসর্জন দিতে পারি আমরা। তবে আজ সংবিধানকে খুন করেছে বিজেপি।”
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের খবর পেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে কালো দিন। কাশ্মীরের মানুষ কোনওদিনই এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।”
তাঁর মতো এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে এই ঘটনাকে বিশ্বাসঘাতকতার চরম নিদর্শন বলেও উল্লেখ করেছেন।
তবে বিজেপি বিরোধী হিসেবে পরিচিত হলেও আজ রাজ্যসভায় এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন বিএসপি সাংসদ সতীশ চন্দ্র মিশ্র। এপ্রসঙ্গে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “আমাদের দল পুরো সমর্থন দেবে। আমরা চাই এই বিল পাশ হোক। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ৩৭০ ধারা ও অন্য বিলের ক্ষেত্রে কোনও বিরোধিতা করা হবে না।”

Check Also

বড়দিন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে : মাসুদ করিম

আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শুভ বড়দিন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রয়োজনীয় সকল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।